আন্দোলন থেকে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরাতেই সরকার ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) নির্বাচন দেয়ার কথা বলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বলেছেন, জনগণ যখন গণতান্ত্রিক আন্দোলন করছে, তখন সরকার ডিসিসি নির্বাচনের কথা বলছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলন থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে সরাতেই সব ধরনের অপকৌশল করছে তারা। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, এসব অপকৌশল করে কোন লাভ হবে না। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন হবে। গতকাল ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরুল ইসলামকে দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা আলমগীর বলেন, অতীতে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে জনগণের আন্দোলন বন্ধ করা যায়নি। এখনও যাবে না। ডিসিসি নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, যখন ওই নির্বাচন আসবে তখন দলীয় সিদ্ধান্ত জানানো হবে। সাদেক হোসেন খোকার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার অভিযোগপত্র দাখিলের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, তিনি অসুস্থ হয়ে বিদেশে চিকিৎসাধীন। এ অবস্থায় তার বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। আসলে সরকার বিএনপি ও আন্দোলন নিয়ে এত ভীতু যে, রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে না পেরে মিথ্যা মামলা, নির্যাতন-নিপীড়নের পথ বেছে নিয়েছে। এতে প্রমাণ হয় আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে কতটা দেউলিয়া হয়ে গেছে। সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের বক্তব্যের বিষয়ে মির্জা আলমগীর বলেন, ৫ই জানুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সংসদ গঠন করা হয়েছে। এতে জনগণের কোন ম্যান্ডেট নেই। এখানে সত্যিকারের নয়, গৃহপালিত বিরোধী দল আছে যা দেশের সবাই জানে। তাই এই সংসদে বিরোধী দলের কোন ভূমিকাই থাকতে পারে না। এটা একদলীয় ও অবৈধ সংসদ। এর আগে ক্যান্সার আক্রান্ত চাষী নজরুল ইসলামের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং তার আরোগ্যের জন্য দেশবাসীর দোয়া চান মির্জা আলমগীর। একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পাবনা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুন নবী স্বপনেরও খোঁজখবর নেন তিনি। এসময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা প্রফেসর এজেডএম জাহিদ হোসেন, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সহ-দপ্তর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম উপস্থিত ছিলেন।
‘আন্দোলন বানচাল করতেই ডিসিসি নির্বাচনের ছুঁ মন্তর’: এদিকে সরকার পতন আন্দোলন বানচাল করতেই ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন দেয়ার নামে ছুঁ মন্তর দেয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ। বলেছেন, এখন সরকার পতনের চূড়ান্ত সময় এসেছে। এ মুহূর্তে মানুষ একটি নির্বাচন চায়। সরকারের পতন চায়। কিন্তু শেখ হাসিনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে গুলি করাচ্ছেন। বেড়াজাল সৃষ্টি করছেন। গতকাল নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মহিলা দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ সব কথা বলেন। রিজভী আহমেদ বলেন, সরকারের পতন ছাড়া এ আন্দোলন থামবে না। প্রধানমন্ত্রীর পায়ের নিচের মাটি থরথর করে কাঁপছে। তার ময়ূর সিংহাসনের পালক একে একে পড়ে যাচ্ছে। রিজভী আহমেদ বলেন, বর্তমান সরকার নারী উন্নয়নের কথা বলে। আমরা কেবল উনার (শেখ হাসিনা) মুখ থেকেই নারী উন্নয়নের কথা শুনতে পাই। কিন্তু বাস্তবে এর কোন প্রতিফলন দেখতে পাই না। আমরা যদি বাস্তবতার দিকে তাকাই তবে মধ্যযুগীয় অন্ধকার ছাড়া আর কিছু দেখি না। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রী-এমপিদের মুখ থেকে প্রকাশ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সম্পর্কে যে সব কুৎসিত শব্দ শোনা যায়, তাতেই বোঝা যায়, নারীদের প্রতি তাদের কতটুকু সম্মানবোধ আছে। নারীদের উন্নয়নে বেগম রোকেয়ার অবদানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় নারীদের প্রতিষ্ঠিত করতে তিনি সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন। নারীরা পুরুষের চেয়ে পিছিয়ে নেই তা একটি রূপকের মাধ্যমে সমাজে প্রচার করেছেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াই বেগম রোকেয়া পদক ও রোকেয়া দিবস চালু করেছিলেন। আর সর্বক্ষেত্রে নারীদের এগিয়ে নিতে সর্বাত্মক অবদান রেখেছেন জিয়াউর রহমান। মহিলা দলের সভাপতি নুরে আরা সাফার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় মহিলা দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি রাবেয়া সিরাজ, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, যুগ্ম সম্পাদক লায়লা বেগম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
Post by আশিকুর রহমান চৌধুরী স্বদেশনিউজ২৪.কম