প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেছেন, ‘নির্বাচনের জন্য আমরা সব সময়ই প্রস্তুত। কিন্তু ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন জানুয়ারিতে কেন করব? আমাকে সময় দিতে হবে। সীমানা নির্ধারণ, ভোটার তালিকা মুদ্রণ ও তফসিল ঘোষণার জন্য সময়ের প্রয়োজন রয়েছে।’
গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে জরুরি ভিত্তিতে সংবাদ সম্মেলন ডেকে সিইসি এ কথা বলেন। দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন আয়োজনে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের খবর গতকাল বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এর জের ধরেই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন সিইসি।
এর আগে গত সোমবার নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম দ্রুত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথে দুটি সমস্যার কথা জানান। প্রথম বাধা হচ্ছে, এই দুই সিটির সীমানা নির্ধারণের কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন না হওয়া। স্থানীয় সরকার বিভাগ এ কাজটি সম্পন্ন করে দিলে সেই অনুসারে ভোটার তালিকা পুনর্বিন্যাস করার পরই নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা যাবে। অন্য বাধাটি হচ্ছে, ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ এখনো সম্পন্ন না হওয়া। আগামী ২ জানুয়ারি হালনাগাদ ভোটার তালিকার খসড়া এবং ৩১ জানুয়ারি চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। সে ক্ষেত্রে হালনাগাদ ভোটার তালিকায় নির্বাচন করতে হলে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করতে হবে। অন্যথায় এক লাখ ৯২ হাজার ৫৫০ জন ভোটার বাদ রেখে বিদ্যমান পুরনো ভোটার তালিকা দিয়েই এ নির্বাচন করতে হবে। তবে বিদ্যমান ভোটার তালিকার মাধ্যমে নির্বাচন করতে গেলে আইনি জটিলতায় পড়ারও আশঙ্কা রয়েছে।
এর আগে ২০১২ সালের ৬ এপ্রিল ভোটার হালনাগাদ না করেই ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন। এর তিন দিনের মাথায় ৯ এপ্রিল আদালতের নির্দেশে ওই নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। বাদীপক্ষ তখন আদালতে এই অভিযোগ উপস্থাপন করে, ডিসিসির ভোটার তালিকা হালনাগাদ না হওয়ায় ২০০৯ সালের পর থেকে পাঁচ লাখ যোগ্য নাগরিক ভোটার হতে পারেননি। এ অভিযোগের পক্ষে ওই বছরের ১৬ মার্চ একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। এ ছাড়া ঢাকার দুই সিটির সীমানা নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট আইন অনুসরণ না করারও অভিযোগ আনা হয়।
গতকাল সিইসিও দ্রুত নির্বাচনে এ বাধাগুলোর কথা তুলে ধরে বলেন, ‘এটি খুব পরিষ্কার যে, আমরা অনেক আগে থেকে প্রস্তুত। কিন্তু সরকার দুই সিটির দক্ষিণে যেমন সীমানা বাড়িয়েছে, তেমনি উত্তরেও বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে। এখন ওপরের চাপ থাকলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় দ্রুত সীমানা পুনর্নিনির্ধারণ করে দিয়ে আমাদের অনুরোধ জানাতে পারে।’ তিনি বলেন, নির্বাচন জানুয়ারিতে করা সম্ভব হবে না। এ জন্য সময়ের প্রয়োজন।
সিইসি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সীমানা নিয়ে বিদ্যমান জটিলতা নিরসন হলে ‘আলহামদুলিল্লাহ’।
তিনি বলেন, বর্তমানে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ চলছে। তাই এখন নির্বাচন করতে হলে পুরনো ভোটার তালিকা দিয়ে নির্বাচন করতে হবে। এতে প্রায় দুই লাখ নতুন ভোটার ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন। এ ছাড়া পাবলিক পরীক্ষার বিষয়টিও বিবেচনায় নিয়ে তফসিল দিতে হবে। বড় পরীক্ষাগুলো চলাকালে আমরা নির্বাচন এড়িয়ে চলি। তাই পরীক্ষার সময়সূচি দেখে প্রস্তুতি নেওয়া হবে। সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম ও যুগ্ম সচিব জেসমিন টুলী উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষণ ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের গেজেটে প্রজ্ঞাপিত সীমানায় এলাকার অখণ্ডতা বজায় রাখা হয়নি। এ ছাড়া এ তিন ওয়ার্ডের সীমানা পাড়া ও মহল্লাভিত্তিক না হওয়া- তথা বাস্তবভিত্তিক না হওয়ায় বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগকে আইনের আওতায় বর্ণিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এই তিন ওয়ার্ডের পাড়া ও মহল্লাভিত্তিক সীমানা পুনর্নিধারণ করতে হবে।
কমিশনের এ সিদ্ধান্তের আলোকে কমিশন সচিবালয় স্থানীয় সরকার বিভাগকে একটি চিঠি পাঠায়। কিন্তু ওই সমস্যার সমাধান আজও হয়নি। সর্বশেষ গত বছরের ১১ জুন স্থানীয় সরকার বিভাগ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনেরও সীমানা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ঢাকার জেলা প্রশাসককে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলে। স্থানীয় সরকার বিভাগের এ-সংক্রান্ত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, উত্তরার ১১ থেকে ১৪ নম্বর সেক্টর ও হরিরামপুর ইউনিয়নের বাইলজুরি মৌজাটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়া গত বছর ২৩ জুন ঢাকার জেলার প্রশাসককে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের সীমানা যথাযথভাবে নির্ধারণের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু ওই নির্দেশ এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।