SwadeshNews24.com: গণমাধ্যমে আবারও আলোচনায় উঠে এসেছে সেই পারভেজের নাম। পুরো নাম মনিরুল ইসলাম পারভেজ। তবে নগরীর বিভিন্ন মাংস ব্যবসায়ী কাছে তিনি হাড্ডি বেপারী পারভেজ হিসেবে পরিচিত। কারণ প্রতিদিন সকালে তার মটরসাইকেলের পিছনে থাকে গরুর হাঁড়। এসব হাঁড় নগরীর বিভিন্ন কসাইয়ের কাছ থেকে কিনে পাচার করা হয় ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। আর কোন কোন সংবাদকর্মীর কাছে তিনি পরিচিত পাগলা পারভেজ নামে। সীতাকুন্ডের কুমিরা ফেরিঘাট এলাকার মানুষ ও যাত্রীরা তাকে চেনে একজন চাঁদাবাজ হিসেবে। কারণ ওই ঘাটের সাবেক ইজারাদার রাজা কাসেমের পক্ষে তিনি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের নামে আদায় করেছে লাখ লাখ টাকা। এ বিষয়ে সীতাকুন্ডের এক সংবাদকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তথাকথিত একটি সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে একুশে টেলিভিশন, মাই টিভি, এটিএন বাংলা, এনটিভি, আরটিভি, দেশ টিভি, বৈশাখী টিভি, মোহনা টিভি, সময় টিভি, গাজী (জি) টিভিসহ অন্তত ১৫টি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলে প্রচারের নামে এসব টাকা আদায় করা হয়। কিন্তু কোন টিভি চ্যানেলেই ওই সংবাদ সম্মেলন প্রচার করা হয়নি।
এভাবেই চলছে সেই আলোচিত পারভেজের দিনকাল। তার আসল পরিচয় নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। কারণ তিনি নিজেকে কখনো মোহনা টিভি আর কখনো মাই টিভির রিপোর্টার পরিচয় দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এখন বিভিন্ন স্থানে তাকে এশিয়ান টিভি লোগোযুক্ত মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে। সীতাকুন্ডের বিজিবি অভিযান ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের লেক সিটি প্রকল্পের কর্মকর্তাদের কাছে নিজেকে এশিয়ান টিভির রিপোর্টার পরিচয় দিয়ে বাড়তি সুবিধার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এনিয়ে বিভ্রান্তি মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। হয়রানি শিকার হচ্ছে প্রশাসন। আর প্রতারিত হচ্ছে ভুক্তভোগিরা।
মনিরুল ইসলাম পারভেজের যাত্রা শুরু হয় দৈনিক নওরোজ পত্রিকার মধ্য দিয়ে। নওরোজ চট্টগ্রামে তৎকালীন কাজীর দেউরী অফিসে পারভেজকে অফিস সহকারী পদে নিয়োগ দেয়া হলেও তিনি রিপোর্টার পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানীর অভিযোগে তাকে চাকুরীচুত্য করা হয় বলে নিশ্চিত করেছে নওরোজের সাবেক ব্যুরো প্রধান আবু হেনা খোকন। এছাড়া তিনি দৈনিক আজকের পদ্মার ফটোগ্রাফার পদে কর্মরত ছিলেন বলে জানা গেছে। ওই পত্রিকায় সম্পাদক, চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান তৌহিদুল ইসলামসহ পত্রিকার চার সদস্যকে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ কমিশনারের অফিস থেকে গ্রেপ্তারের সময় পালিয়ে বেঁচে যায় আলোচিত সেই পারভেজ। পুলিশী গ্রেপ্তার এড়াতে বেশ কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। এ বিষয়ে ২০০৮ সালের ২৭ জুলাই দৈনিক আজাদী সহ চট্টগ্রামে সবকটি আঞ্চলিক দৈনিক ও জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু গণমাধ্যমে দেয়া তার জীবন বৃত্তান্তে দেখা যায়, তিনি এসব পত্রিকার কর্মজীবনের বাস্তবতাকে এড়িয়ে গেছেন। ওইসব জীবন বৃত্তান্তে নিউজ এজেন্সি আবাস, অনলাইন নিউজ এজেন্সি আইএনবি, দৈনিক খবর এবং মোহনা টিভির কর্মরত ছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু এখানে দৈনিক নওরোজ ও দৈনিক আজকের পদ্মার কোন তথ্য উল্লেখ নেই।
জানা যায়, মনিরুল ইসলাম পারভেজ। পিতা আব্দুল হক। বর্তমানের বসবাস নগরীর ফিরোজ শাহ কলোনীতে। চাকুরী জীবনের শুরুতেই দৈনিক নওরোজ ও আজকের পদ্মা পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন। পরে তিনি যোগ দেন মোহনা টিভি চট্টগ্রাম অফিসে। তবে তা আর বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। নগরীতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ম্যাজিষ্ট্রেট কতৃক পরিচালিত ফরমালিন বিরোধী অভিযানের আটক মাছ ও আম আত্মসাত করে ভোজন করা এবং ফিরোজশাহ কলোনীতে সাংবাদিকতার দাপট দেখিয়ে জায়গা দখলের প্রচেষ্টা সহ বিভিন্ন অভিযোগে তাকে মোহনা টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ চাকুরী থেকে অব্যাহতি দেন বলে সাঙ্গণকে নিশ্চিত করেছেন মোহনা টিভি চট্টগ্রাম অফিসের স্টাফ রিপোর্টার জাহাঙ্গীর আলম। ফলে নিরুপায় হয়ে বেশ কিছুদিন ধরে তিনি বিচরণ করছেন শিল্পনগরী সীতাকুন্ড এলাকায়। টার্গেট বিভিন্ন শিপইর্য়াড, লোহাজাত পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, সীতাকুন্ডের কুমিরা ফেরিঘাট, সীতাকুন্ড থানা এবং জায়গা জমি বিষয়ক বিরোধ। এসব বিষয়কে পুঁজি করে চলছে তার জীবন। কিন্তু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে কী পরিচয় বহন করছে এই পারভেজ। অনুসন্ধানে দেখা যায়, মোহনা টিভি থেকে চাকুরীচ্যুত হওয়ার পর থেকে নিজেকে মাই টিভি সীতাকুন্ড প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে আসছিল। এনিয়ে গত ৫ নভেম্বর দৈনিক সাঙ্গুতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর টনক নড়ে প্রশাসনের। নগর ও জেলা পুলিশের বিশেষ একটি টিম তদন্তে মাঠে নেমেছে বলে জানা গেছে। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর পারভেজ নিজেকে মাই টিভির সীতাকুন্ড প্রতিনিধি পরিচয় থেকে বিরত থাকলেও এখন আবার নতুন করে ফাঁদ তৈরি করেছে। এবার সীতাকুন্ড এলাকা স্যাটেলাইট চ্যানেল এশিয়ান টিভির প্রতিনিধি পরিচয়ে প্রতারণা করছে বলে তার বিরুদ্ধে এন্তার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ১২ ডিসেম্বর সীতাকুন্ডে ফৌজদারহাট এলাকায় জামায়াত শিবিরের গোপন আস্তানায় বিজিবির অভিযানের সময় এশিয়ান টিভির তথাকথিত সীতাকুন্ড প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম পারভেজ উপস্থিত ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছেন বিজিবির কর্মকর্তা মেজর ওয়ালিদ। এ বিষয়ে এশিয়ান টিভি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এই নামের কোন প্রতিনিধি চট্টগ্রামে কর্মরত নেই বলে নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সীতাকুন্ড থানা এলাকায় কর্মরত এক সাংবাদিক জানান, পারভেজ সাধারণ মানুষকে একেক সময় একেক টেলিভিশনের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বিভ্রান্ত ও প্রতারিত করছে। এতে অন্যান্য গণমাধ্যমের কর্মীরাও সাধারণ মানুষের কাছে হেয় হচ্ছে। এ নিয়ে সীতাকুন্ড থানা এলাকায় কর্মরত সংবাদকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে শিঘ্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।