আগামী ১ এপ্রিল থেকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু রাজধানীর সব ক’টি কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আগামী বছরের জুন মাস পর্যন্ত অগ্রিম মাসিক বেতন আদায় করছে। এ পরীক্ষার ফরম পূরণে রাজধানীর সব ক’টি কলেজ নির্ধারিত ফির চেয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে। যেসব অভিভাবক অতিরিক্ত টাকার ব্যাপারে প্রশ্ন তুলছেন তাদের সাথে কলেজগুলো অসৌজন্যমূলক আচরণই শুধু করছে না, তাদের সন্তানদের পরীক্ষার ফরম পূরণে বাধার সৃষ্টি করছে।
এইচএসসির ফরম পূরণে এক হাজার ৭০০ টাকা নির্ধারণ করে গত ১১ ডিসেম্বর ঢাকা বোর্ড চেয়ারম্যান অতিরিক্ত ফি আদায়ের ব্যাপারে নির্দেশনামূলক সতর্কতা জারি করলেও তাকে আমলেই নিচ্ছে না কলেজগুলো। অতিরিক্ত কাস, মডেল টেস্টসহ বিভিন্ন খাতে ফি ধার্য করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা অভিযোগ করছেন, আসন্ন এই পরীক্ষার ফরম পূরণে বেশির ভাগ কলেজ পাঁচ-সাতগুণ বাড়তি ফি নিচ্ছে এবং কিছু কলেজ এ সংক্রান্ত আগাম নোটিশ দিয়েছে।
ঢাকা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বিলম্ব ফি ছাড়া পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণ ও ব্যাংক ড্রাফট বা টিটি করার শেষ সময় ২৮ ডিসেম্বর এবং বিলম্ব ফিসহ ফরম পূরণ করা যাবে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। বোর্ডের নির্ধারিত পরীক্ষা ফি প্রতি পত্র বা বিষয়ের জন্য ৭৫ টাকা (মোট বিষয় ১৩টি), প্রতি পত্রের ব্যবহারিক পরীক্ষা ফি ২৫ টাকা (যাদের আছে), কেন্দ্র ফি ৩০০ টাকা, নম্বরপত্রের জন্য ৫০ টাকা, সনদ ফি ১০০ টাকা, রোভার স্কাউট বা গার্লস গাইড ফি ১৫ টাকা এবং জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ফি ৫ টাকা। ফরম পূরণের সময় অনুমোদিত এই ফির চেয়ে বেশি অর্থ না নেয়ার নির্দেশ দিয়ে বোর্ড কলেজগুলোকে ‘সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি’ দিয়েছে। ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক দিলারা হাফিজের সই করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পরীক্ষার ফরম পূরণ বাবদ অতিরিক্ত টাকা আদায় করলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রাজধানীর কলেজগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেউ এই নির্দেশনা মানছে না। ফরম পূরণে বেশি টাকা নিচ্ছে। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ফরম পূরণের জন্য একজন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রায় ১৪ হাজার টাকা আদায় করছে। ভিকারুননিসার এক অভিভাবক জানান, এই কলেজে বিজ্ঞান শাখায় বোর্ডের ফির বাইরে জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসের বেতন ও ফরম পূরণে নেয়া হয়েছে ৯ হাজার ৪০০ টাকা। মডেল টেস্টের জন্য তিন হাজার ২০০ টাকা, বনভোজন বাবদ ৮০০ টাকাসহ সবমিলিয়ে ১৩ হাজার ৪০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পূরণের জন্য দুই হাজার ৭৫ টাকা এবং অতিরিক্ত কাসের জন্য সাড়ে তিন হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে। মানবিক ও বাণিজ্য শাখার শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক কম থাকায় টাকাও কিছু কম লাগছে। মিরপুরের মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পূরণ বাবদ এক হাজার ৯০০ টাকা নিয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানের অভিভাবকেরা জানান, ফরম পূরণের টাকা ছাড়াও জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত অগ্রিম বেতন ও কোচিং ফি বাবদ এক হাজার ৩০০ টাকা করে নিচ্ছে। হলিক্রস কলেজে বোর্ড নির্ধারিত ফিসহ জুন মাস পর্যন্ত বেতন নেয়া হয়েছে। হলিক্রসে প্রতি মাসে বেতন এক হাজার ৩০০ টাকা। ঢাকা সিটি কলেজে ছয় মাসের বেতন, মডেল টেস্টসহ ফরম পূরণে নেয়া হচ্ছে ১১ হাজার ৬০০ টাকা। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ফরম পূরণ বাবদ দুই হাজার ৫০ টাকা নেয়া হয়েছে। উদয়ন উচ্চবিদ্যালয়ে ৯ হাজার টাকা, রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে ফরম পূরণ বাবদ দুই হাজার ৩০০ টাকা নেয়া হয়েছে। এর বাইরে আগামী জুন মাস পর্যন্ত বেতন বাবদ ছয় হাজার ৮০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ১০ হাজার, ট্রাস্ট কলেজে ১৫ হাজার, বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সাড়ে সাত হাজার, দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে সাত হাজার ১৭৫ টাকা, রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে সাড়ে ছয় হাজার, মিরপুর বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজে সাড়ে সাত হাজার টাকা, মিরপুর বশিরউদ্দিন আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজে আট হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে। রাজধানীর প্রায় সব বেসরকারি কলেজেই নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা।
অতিরিক্ত ফি আদায়ের ব্যাপারে ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. শ্রীকান্দ কুমার চন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, এবার উচ্চমাধ্যমিকে ফরম পূরণে কোনো প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত টাকার চেয়ে বেশি আদায় করলে তাদের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোমধ্যে বোর্ডের ওয়েবসাইটে একটি সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে। এরপর যদি কেউ অমান্য করে তাহলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে আমরা সবসবময় কোন কলেজ অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে তা জানতে পারি না। তাই অভিভাবকেরা অভিযোগ জানালে আমাদের পক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব।
অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, অতিরিক্ত ফি আদায়কারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয় ও বোর্ড কর্তৃপক্ষ বারবারই লোক দেখানো সতর্কতা জারি করে। এতে কোনো লাভ হচ্ছে না। এখন কর্তৃপক্ষের উচিত ব্যবস্থা নেয়ার। তা না হলে এ ধরনের সতর্কতা নোটিশ কোনো কাজে আসবে না।
-আশিকুর রহমান চৌধুরী স্বদেশ নিউজ২৪.com