চট্টগ্রামে ১০ মিনিটেই দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার আগে সন্ত্রাসীরা প্রথমে পেছন থেকে মাথায় আঘাত করে। এরপর ধারালো ছোরা দিয়ে কুপিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় তাদের। হত্যাকা-ে ৮/১০ জন সন্ত্রাসী অংশ নেয়। মূলত কাঠের ব্যবসা নিয়ে বিরোধের জের ধরে এই ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হলেও স্থানীয়রা জানিয়েছেন মাদকের ভাগবাটোয়ারা নিয়েই খুন হয়েছে দুই ভাই।
অবৈধভাবে প্রতি মাসে তাদের আয় ছিল ২০/২৫ লাখ টাকা। রাতারাতি কোটিপতি হয়ে যাওয়ায় তারা নজরে চলে আসে প্রতিপক্ষের। সর্বশেষ এই ঘটনায় থানায় দায়ের করা হয়েছে মামলা। এতে ৩০ জনকে আসামি করেছেন নিহত আবু সিদ্দিক (৪২) ও ফরিদুল আলম (৪৫)-এর আরেক ভাই।
গতকাল শনিবার সকালে চান্দগাঁও থানার খাজা রোডের বাদামতলি এলাকায় মুন্সিবাড়িতে গিয়ে এই বিষয়ে পাওয়া যায় নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। কারণ যারা খুন হয়েছে সেই আবু ও ফরিদ দু’জনেই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। শুক্রবার রাতে এই ব্যবসার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বাদামতলিতে প্রতিপক্ষের হাতে দুই ভাই খুন হয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, মূলত পূর্বশত্রুতার জেরে দুই ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের মাথায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। লাশ চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। পুলিশ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। আবু ও ফরিদের নামে চান্দগাঁও থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। আহত হওয়ার পর চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, খুন হওয়া আবু ও ফরিদ চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তারা সন্ত্রাসী হিসেবেও এলাকায় পরিচিত। তাদের আধিপত্য খর্ব করতে প্রতিপক্ষ এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে আবু ও ফরিদের পরিবার দাবি করছে জায়গা ও গাছ ব্যবসা নিয়ে বিরোধের জের ধরে এলাকার চিহ্নিত একটি গ্রুপ তাদের খুন করেছে। তারা ঘটনায় জড়িত আটজনের নামের একটি তালিকা পুলিশের কাছে দিয়েছেন।
নিহতদের খালাতো ভাই ফারুক বলেন, ওরা একসময় এসব কাজে জড়িত থাকলেও এখন নেই। ভালভাবে বেঁচে থাকার জন্য তারা গাছের ব্যবসা করতো। তাদের উত্থানকে অন্য একটি পক্ষ সহ্য করতে পারেনি। তাই মাথায় আঘাত করে হত্যা করেছে। তিনি এই ঘটনার জন্য স্থানীয় প্রতিপক্ষের লোকজন আইয়ুব, ফোরকানসহ ১৫ জনকে দায়ী করেন।
ফারুক আরও বলেন, ঘটনার রাতে তারা দু’জন আমাদের এক আত্মীয় হাসানের মায়ের জানাজা শেষে রাত সাড়ে দশটার দিকে বাড়ি ফেরে। এক পর্যায়ে হঠাৎ করেই এই হামলা চালায়। প্রথমে সন্ত্রাসীরা আবুকে কোপাতে থাকে। এসময় ভাইকে বাঁচাতে ফরিদ ছুটে এলে তাকেও লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়। সে মাটিতে পড়ে গেলে দুইজন তার হাত চেপে ধরে ছুরি চালায় গলার কাছে।
পরিবারের সদস্যরা অবশ্য মাদক ব্যবসায় খুন হওয়ার বিষয়টি সত্য নয় বলে দাবি করেন। তাদের মতে, এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী আইয়ুব আলী খান এই ঘটনা ঘটিয়েছে। সে এলাকায় গাছের ব্যবসা করাকে কিছুতেই সহ্য করতে পারতো না। তার নির্দেশেই এমন ঘটনা ঘটেছে।
নিহতদের বড় ভাই মইনুদ্দিন খান মহসিন বলেন, আমার ভাই আবু সিদ্দিক অগ্রিম টাকার বিনিময়ে বেশ কিছু সেগুন গাছ নিয়ে আসে বিক্রির জন্য। কিন্তু আইয়ুব সেগুলো গায়ের জোরে ছিনিয়ে নেয়। আর সেই কারণে এই খুন।
একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান, আসলে যারা খুন হয়েছে, আর যাদের নাম বেরিয়ে আসছে তারা সবাই সন্ত্রাসী। এরা লাখ লাখ টাকার মালিক। এলাকায় এমন কোন কাজ নেই তারা করে না। মাদক, অবৈধ ব্যবসা, চাঁদাবাজি-সবই ওরা করতো সিন্ডিকেট করে। এই কাজে আরও রয়েছে জিয়া, লোকমান, মোর্শেদসহ বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী। যাদের নাম রয়েছে স্থানীয় থানায়।
আবু সিদ্দিকের চাচাতো ভাই মোহাম্মদ হাসান বলেন, আমার ভাইরা নির্দোষ। তারা ভালভাবে বাঁচতে চেয়েছিল। রাত সাড়ে ১০টায় আইয়ুবের নেতৃত্বে ‘ধর ধর’ বলে চিৎকার শুনি। এরপর খুন করে পালিয়ে যায়।
নিহত ফরিদের স্ত্রী নীলু আক্তার বলেন, আমার মেয়ে পায়েলের সামনে পরীক্ষা। এই নিয়ে তার দুশ্চিন্তা ছিল। কিন্তু সন্তানের কসম খেয়ে বলছি আমার স্বামী কোন অন্যায় কাজে ছিল না। তাকে যারা খুন করেছে তারা খারাপ লোক।
আবু সিদ্দিকের স্ত্রী পারভিন আক্তার বলেন, আমার স্বামীর ওপর অনেকের রাগ ছিল। কিন্তু কি কারণে তাকে মরতে হলো তা জানি না।
চান্দগাঁও থানার ওসি সৈয়দ আব্দুর রউফ মানবজমিনকে বলেন, বেশ কয়েকজনের নাম তালিকায় উঠে এসেছে। আসলে ওদের সবার বিরুদ্ধে থানায় একাধিক অভিযোগ রয়েছে। মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে কাঠ পাচার সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মাসে দুই একবার ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হতো। খুব শিগগিরই আসামিরা ধরা পড়বে। ইতিমধ্যে ৫ জনকে আমরা আটক করেছি। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে শিগগিরই।