অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মচারীদের পেনশন ও আনুতোষিক (গ্র্যাচুইটি) বাড়ানোর সুপারিশ করেছে জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশন। কমিশন তাঁদের পেনশন পাওয়ার বয়সও এগিয়ে আনতে বলেছে। অবসরে যাওয়ার পর নতুন কর্মক্ষেত্র অর্থাৎ কোন কোন ক্ষেত্রে অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা কাজ করতে পারেন, সে সম্পর্কেও কমিশন সুপারিশ করেছে।
অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবীদের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে কমিশন বলেছে, পেনশন ও আনুষঙ্গিক সুবিধা এমন হওয়া দরকার, যাতে একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী স্বচ্ছন্দে তাঁর দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহ করতে সক্ষম হন।
বেতন ও চাকরি কমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন গত রোববার কমিশনের সুপারিশ-সংবলিত এই প্রতিবেদন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে পেশ করেন।
চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর পার হলে বর্তমানে শেষ বেতনের ৮০ শতাংশ পেনশন পাওয়া যায়। কমিশন একই সময়ের ক্ষেত্রে তা ৯০ শতাংশে উন্নীত করার সুপারিশ করেছে। আবার বর্তমানে চাকরির বয়স ১০ বছর না হলে কেউ পেনশন পাওয়ার যোগ্য হন না। নতুন সুপারিশে তা পাঁচ বছরের কথা বলা হয়েছে। কোনো চাকরিজীবীর পাঁচ বছর চাকরির মেয়াদের আগে মৃত্যু হলে প্রতিবছরের জন্য তাঁর নিজস্ব স্কেলের তিনটি মূল বেতনের সমপরিমাণ হারে তাঁর পরিবারকে এককালীন বিশেষ আর্থিক সুবিধা দেওয়ারও সুপারিশ করা হয়েছে।
এ ছাড়া সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক, বিমা, করপোরেট সংস্থা এবং সরকারি অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অবসরভোগী সরকারি চাকরিজীবীদের নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
পেনশনের নতুন হার: চাকরির বয়স ৫ বছরের ক্ষেত্রে পেনশনের হার শেষ বেতনের ২০ শতাংশ সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৬ বছরের ক্ষেত্রে ২৪ শতাংশ, ৭ বছরে ২৮, ৮ বছরে ৩২, ৯ বছরে ৩৬, ১০ বছরে ৪০, ১১ বছরে ৪৪, ১২ বছরে ৪৮, ১৩ বছরে ৫২, ১৪ বছরে ৫৬, ১৫ বছরে ৬০, ১৬ বছরে ৬৪, ১৭ বছরে ৬৮, ১৮ বছরে ৭২, ১৯ বছরে ৭৬, ২০ বছরে ৮০, ২১ বছরে ৮২, ২২ বছরে ৮৪, ২৩ বছরে ৮৬, ২৪ বছরে ৮৮ এবং ২৫ বছর ও তার বেশির ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ।
১০ বছরের বদলে ৫ বছর থেকেই পেনশন দেওয়ার বিষয়ে কমিশন বলেছে, একজন সরকারি চাকরিজীবীর চাকরির বয়স ১০ বছর হওয়ার আগেই তিনি যদি অক্ষম হয়ে পড়েন বা তাঁর মৃত্যু হয়, তাহলে তিনি বা তাঁর পেনশন ও আনুতোষিক প্রাপ্য হন না।
আনুতোষিক বাড়ানোর সুপারিশ: নতুন কাঠামোর জন্য আনুতোষিকের হারও বাড়ানোর সুপারিশ করেছে কমিশন। বর্তমান নিয়মানুযায়ী, অবসর গ্রহণকারীর মোট পেনশনের ৫০ শতাংশ সমর্পণ করা বাধ্যতামূলক। বাকি ৫০ শতাংশ মাসিক নিট পেনশন হিসেবে নেওয়া যায়, আবার সমর্পণও করা যায়।
মোট পেনশনের ৫০ শতাংশ বাধ্যতামূলক সমর্পণের পর বাকি যে ৫০ শতাংশ থাকে, সেটিকে বলা হয় নিট পেনশন। তা কেউ একবারেও নিয়ে যেতে পারেন, আবার মাসিক পেনশন আকারেও নিতে পারেন।
নতুন সুপারিশে বাধ্যতামূলকভাবে সমর্পিত ৫০ শতাংশ পেনশনের ক্ষেত্রে আনুতোষিকের হার করা হয়েছে ৫ বছর বা তার বেশি এবং ১০ বছরের কম সময়ের ক্ষেত্রে প্রতি ১ টাকায় ২৭৫ টাকা। ১০ বছর বা তা বেশি এবং ১৫ বছরের কম সময়ের ক্ষেত্রে প্রতি ১ টাকায় ২৬০ টাকা। ১৫ বছর বা তার বেশি এবং ২০ বছরের কম সময়ের ক্ষেত্রে প্রতি ১ টাকায় ২৪৫ টাকা এবং ২০ বছর বা তার বেশি সময়ের ক্ষেত্রে প্রতি ১ টাকায় ২৩০ টাকা।
বর্তমানে পেনশনের ৫০ শতাংশ বাধ্যতামূলক সমর্পণের ক্ষেত্রে আনুতোষিকের হার ১০ বছর বা এর বেশি এবং ১৫ বছরের কম সময়ের ক্ষেত্রে প্রতি ১ টাকায় ২৬০ টাকা। ১৫ বছর বা এর বেশি এবং ২০ বছরের কম সময়ের ক্ষেত্রে প্রতি ১ টাকায় ২৪৫ টাকা এবং ২০ বছর বা এর বেশি সময়ের ক্ষেত্রে প্রতি ১ টাকায় ২৩০ টাকা।