নতুন বছর জানুয়ারি মাস জুড়েই হরতাল-অবরোধে যাচ্ছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট। ইতিমধ্যে গাজীপুরে জনসভা করতে না দেওয়ার প্রতিবাদে এবং দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ সব রাজনৈতিক নেতার মুক্তি দাবিতে আগামীকাল সারা দেশে ২৪ ঘণ্টা হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। একইভাবে জানুয়ারি জুড়েই হরতাল-অবরোধ আর ঘেরাও কর্মসূচিতে যাচ্ছে বিএনপি জোট। এক্ষেত্রে জানুয়ারিতে দুই দফা ইজতেমার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, ইতিমধ্যে কয়েকদফা বৈঠক করে ২০-দলীয় জোট এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ৩ ও ৫ জানুয়ারি জনসভা করতে দেওয়া না হলে ৬ জানুয়ারি থেকে টানা ৭২ ঘণ্টা হরতাল কর্মসূচি আসতে পারে। এর আগে নতুন নির্বাচন দাবিতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে সংক্ষিপ্ত আলটিমেটামও দিতে পারেন। জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে হরতালের পাশাপাশি অবরোধ কর্মসূচি থাকবে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার অনুযায়ী সভা-সমাবেশ করতে দেবে না, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ নির্বিচারে গুলি চালাবে- এটা কেমন কথা? জানুয়ারি থেকে হরতাল-অবরোধে যাওয়া ছাড়া আমাদের আর বিকল্প কি কর্মসূচি থাকতে পারে? আমাদের জন্য এখন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে- আগামীতে যেসব কর্মসূচি আসবে, তাতে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো। চুপ করে বসে থাকলে আমাদের অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যাবে। এটা হতে দেওয়া হবে না।’ বিএনপি নেতারা জানান, তাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। সভা-সমাবেশেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হচ্ছে। বার বার আহ্বান সত্ত্বেও সংলাপ-সমঝোতার মাধ্যমে নতুন নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি না করায় ২০১৩ সালের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে চান তারা। এতে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটলে দায় সরকারের বলেও মনে করেন তারা। জানা গেছে, দাবি আদায়ে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পূর্বাপর আন্দোলন কর্মসূচির দিকেই যাচ্ছে বিএনপি জোট। সরকার দাবি না মানলে সামনে ‘নন স্টপ’ হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। বিএনপি জোটের শরিক দল লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, জানুয়ারিতে আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করতে না দিলে হরতাল দেওয়া ছাড়া আর বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই। আশা করি, সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। আমরাও চাই না, দেশের অর্থনীতি আরও ভঙ্গুর হোক। কিন্তু এর দায় সরকারকেই নিতে হবে।আগামীকাল হরতাল : গাজীপুরে হরতালের দুই দিন পর একই কর্মসূচি আগামীকাল সারা দেশে ডেকেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট। গাজীপুরে সমাবেশ করতে না দেওয়ার প্রতিবাদ এবং গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ সব রাজনৈতিক নেতার মুক্তি দাবিতে ২৪ ঘণ্টার এই কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে বলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন। গাজীপুরে কর্মসূচি শেষের পর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন ২০ দলের মহাসচিবরা। এরপর সংবাদ সম্মেলনে হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। অ্যাম্বুলেন্স, লাশবাহী গাড়ি, ওষুধ ও খাবারের দোকান, সংবাদপত্র ও মিডিয়ার যানবাহন হরতালের আওতামুক্ত থাকবে বলে জানানো হয়েছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বয়কটের পরে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণার আগে এটা এই বছর ২০-দলীয় জোটের দ্বিতীয় হরতাল। সংবিধান সংশোধনের প্রতিবাদে কয়েক মাস আগে সর্বশেষ হরতাল ডেকেছিল তারা। গয়েশ্বরের পাশাপাশি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টু, নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু, লুৎফুজ্জামান বাবরের মুক্তিও দাবি করে ২০ দল। গাজীপুরে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সমাবেশ পণ্ডের জন্য সরকারকে সরাসরি দায়ী করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘একদিকে ছাত্রলীগকে দিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার জনসভা বানচালে ১৪৪ ধারা জারি, অন্যদিকে আজ এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই ছাত্রলীগ পুলিশের সহায়তায় মিছিল করেছে। সরকারের এহেন দ্বৈতনীতির আমরা নিন্দা জানাই।’ মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে মহাসচিবদের বৈঠকে ছিলেন এলডিপির ড. রেদোয়ান আহমেদ, খেলাফত মজলিশের আহমেদ আবদুল কাদের, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, ইসলামী ঐক্যজোটের ফজলুর রহমান, জাতীয় পার্টির আহসান হাবিব লিংকন, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, লেবার পার্টির হামদুল্লাহ আল মেহেদি, কল্যাণ পার্টির এম এম আমিনুর রহমান, এনপিপির মুস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, জমিয়তে উলামা ইসলামের মহিউদ্দিন ইকরাম, পিপলস লীগের সৈয়দ মাহবুব হোসেন, ডিএল’র খোকন চন্দ্র দাস, বিজেপির সালাহউদ্দিন মতিন প্রভাষ, ইসলামিক পার্টির আবুল কাশেম পণ্ঠমুখ