দেশে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি শিক্ষার গুণগত মান। এসব প্রতিষ্ঠানে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের পড়ালেখার সুযোগ একদিকে যেমন সীমিত, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের জন্য নেই পর্যাপ্ত ব্যবহারিক জ্ঞান লাভের সুযোগ। এমন অবস্থায় স্বাস্থ্যখাতে সরকারের ভর্তুকি বাড়ানো, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে করমুক্ত সুবিধা দেয়া, পাশাপাশি তাদের ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নেয়ার কথা বলছেন বিশ্লেষকরা।
ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করার স্বপ্ন নিয়েই মেডিকেলে ভর্তি হন শিক্ষার্থীরা। সরকারি মেডিকেলে পর্যাপ্ত আসন না থাকায় বিপুল অর্থ খরচের বোঝা মাথায় নিয়ে হলেও অনেক বাবা-মা’ই সন্তানদের ভর্তি করান বেসরকারি কলেজে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী দেশে বর্তমানে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। তবে এর বেশিরভাগেরই নেই প্রয়োজনীয় শিক্ষক, ব্যবহারিক ও ক্লিনিক্যাল জ্ঞান লাভের সুযোগ আর অবকাঠামো।
জেড. এইচ. সিকদার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মেজর জেনারেল (অব.) অধ্যাপক বিজয় সরকার বলেন, ‘বেসরকারি মেডিকেল কলেজের সীমাবদ্ধতা রয়েছে এবং তা থেকে উত্তরণ ঘটাতে হবে। উত্তরণ না ঘটালে এখান থেকে ছাত্ররা যারা ডাক্তার হবে তাদের গুনগত মান ভালো করা সম্ভব হবে না।’
আর খরচের খাতাও ছোট নয়। বিগত বছরগুলোতে ভর্তিতে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা লাগলেও এবার সরকার তা নির্ধারণ করে দেয় ১৫ লাখ ১০ হাজার টাকা। এরপর আছে কলেজ ভেদে প্রতিমাসের বেতন ৫ থেকে ১০ হাজার টাকাসহ অন্য খরচ।
এমন অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যকে বাণিজ্য নয়, ভাবতে হবে মানুষের অধিকার হিসেবে। তাই বেসরকারি কলেজগুলোকে করমুক্ত সুবিধা নিশ্চিত করাসহ পৃষ্ঠপোষকতার আওতায় এনে এসব প্রতিষ্ঠানের মুনাফা লাভের প্রবণতা নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ তাদের।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সের উপাচার্য অধ্যাপক ড. লিয়াকত আলী বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অন্যান্য ব্যবসার মতো ট্যাক্স প্রযোজ্য হয়েছে। অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্যের মতো ট্যাক্স দিতে হলে এটাকে তখন পণ্য মনে হবে। সুতরাং রাষ্ট্রকে পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়টি স্পষ্ট করতে হবে এবং সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই স্থির করতে হবে যে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে নিয়ন্ত্রণে উন্মুক্ত বাজারে ছাড়া হবে না।’
পাশাপাশি, এসব কলেজের শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকারকে কড়া নজরদারির আওতায় আনার কথাও বললেন তারা।