বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয় অষ্টম দিনের মত অবস্থান করছেন। তবে এখনো বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে সেখানে।
কার্যালয়ের মূল ফটকের দুইপাশে পুলিশের পিকআপ ভ্যান ও জলকামান রেখে বন্ধ করে রাখা হয়েছে সড়ক। এই সড়ক দিয়ে জনগণের চলাচল এখনো নিয়ন্ত্রণ করছে পুলিশ। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের মূল ফটকের তালা খুলে দেয় পুলিশ।কিন্তু কার্যালয় থেকে বের হওয়ার অবস্থা নেই। সোমবার রাতে ইট-বালু ও মাটির ট্রাকগুলো সরিয়ে নেওয়া হলেও একটি জলকামান ও দুটি প্রিজন ভ্যান দিয়ে এখনো রাস্তা আটকানো আছে। এর আগে বৃহস্পতিবারও দিনের বেলায় ফটকের তালা খুলে দিয়ে রাতে আবার তালা দেয় পুলিশ।
বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত গুলশানের ৮৬ নম্বর সড়কের ৬ নম্বর বাড়িটির সামনে ও ডান পাশে দুটি ফটক আছে। দুই ফটকের সামনে ও রাস্তায় পুলিশের প্রায় ১০০ জন নারী ও পুরুষ সদস্য এখনো পাহারায় আছেন। ৩ জানুয়ারি রাত থেকেই সেখানে পার্কিং করা অবস্থায় আছে পুলিশের দুটি পিকআপ ভ্যান, দুটি জিপ ও চারটি মাইক্রোবাস। পুলিশের পাশাপাশি র্যাবকেও গতকাল দুপুরে এ সড়কে টহল দিতে দেখা গেছে।এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারি সূত্রগুলো বলছে, তাদের কাছে খবর ছিল ৫ জানুয়ারি সমাবেশ করার লক্ষ্যে খালেদা জিয়া ৩ জানুয়ারি রাতেই নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যাবেন। সমাবেশ করতে পারলে নেতা-কর্মীদের নিয়ে নয়াপল্টনে অবস্থান নিতে পারেন বলেও গোয়েন্দা তথ্য ছিল। এ কারণে দুই দিন আগেই খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখার কৌশল নেওয়া হয়।বিএনপির নেতাদের দাবি, ৩ জানুয়ারি রাত সাড়ে আটটায় খালেদা জিয়া গুলশানের কার্যালয়ে আসেন। এর মধ্যে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থানরত দলের নেতা রুহুল কবির রিজভী ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়েন। তাঁকে দেখতে খালেদা জিয়া নয়াপল্টনে যেতে চেয়েছিলেন। এরই মধ্যে রাত নয়টার দিকে পুলিশ গিয়ে তাঁর কার্যালয় ঘিরে ফেলে। একপর্যায়ে ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়। রাত ১১টার দিকে খালেদা জিয়া কার্যালয় থেকে বের হতে তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তার মাধ্যমে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখন পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, খালেদা জিয়াকে বাসা পর্যন্ত যেতে দেওয়া হবে। এ সময় তাঁর গাড়ির সামনে-পেছনে পুলিশের দুটি করে চারটি গাড়ি থাকবে। এটা জেনে তিনি আর বের হওয়ার চেষ্টা করেননি।খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন একজন চিকিৎসকসহ এমন কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি দাবি করেন, ৫ জানুয়ারি বিকেলে খালেদা জিয়া কার্যালয় থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাঁকে লক্ষ্য করে যে পেপার স্প্রে ছোড়ে, তাতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মরিচের মতো ঝাঁজালো এই রাসায়নিকের প্রতিক্রিয়ায় খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
অবশ্য এই অসুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম দাবি করেন, খালেদা জিয়া অসুস্থতার ভান করেছেন।বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয় সূত্র জানায়, খালেদা জিয়াসহ প্রায় ৫০ জন ওই কার্যালয়ে আছেন। এঁদের মধ্যে আছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন সুলতানা, দলের নেতা বিলকিস জাহান, খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আবদুল কাইয়ুম, প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মাহবুবুল আলম ডিউ, মিডিয়া উইংয়ের দুই সদস্য শায়রুল কবির খান, শামসুদ্দীন দিদার, খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা সমন্বয়ক আবদুল মজিদসহ ব্যক্তিগত নিরাপত্তা দলের ৩৫ জন সদস্য। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার বাসার গৃহকর্মী কুলসুমসহ কার্যালয়ের কর্মচারীরাও আছেন।কার্যালয় সূত্র জানায়, এ কার্যালয়ে চা ছাড়া আর কোনো রান্নাবান্না হয় না। অবরুদ্ধ হওয়ার প্রথম দিন খালেদা জিয়ার জন্য গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেল থেকে খাবার আনা হয়। এর পরদিন থেকে খালেদা জিয়ার খাবারসহ প্রতিদিন আরও ১০-১৫ জনের খাবার রান্না করে পাঠান তারেক রহমানের স্ত্রীর বড় বোন শাহীনা খান। অন্যদের খাবার-দাবার সরবরাহ করছেন দলের নেতারা।
এছাড়া গতকাল দলের নেতা কম্ীদের খাবার ফিরিয়ে দিয়েছে পুলিশ।