বিজ্ঞানীরা এবার মারাত্মক একধরনের স্তন ক্যানসারের জন্য দায়ী জিন শনাক্ত করেছেন। এতে দুরারোগ্য ট্রিপল-নেগেটিভ ব্রেস্ট ক্যানসার (টিএনবিসি) রোগে আক্রান্তদের প্রাণরক্ষাকারী নতুন চিকিৎসাপদ্ধতি আবিষ্কারের চেষ্টায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। এই সাফল্যের কৃতিত্ব যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ওয়েলকাম ট্রাস্টের স্যাংগার ইনস্টিটিউটের একদল গবেষকের।
টিএনবিসি হচ্ছে স্তন ক্যানসারের সবচেয়ে ভয়াবহ ধরনগুলোর একটি। এতে আক্রান্ত রোগীদের প্রায় এক-চতুর্থাংশই রোগটি ধরা পড়ার পর পাঁচ বছরের বেশি বাঁচতে পারেন না। কেমব্রিজ ও স্যাংগারের গবেষকেরা বিসিএলইলেভেনএ নামের একটি বিশেষ জিনের খোঁজ পেয়েছেন, যা টিএনবিসিতে আক্রান্ত প্রতি ১০ জনের মধ্যে আটজনের শরীরের বেশি মাত্রায় পাওয়া যায়।
গবেষকদের এই সাফল্যের ফলে স্তন ক্যানসারের চিকিৎসায় বড় ধরনের অগ্রগতির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এখন জিনটিকে দমিয়ে রাখা এবং প্রাথমিক পর্যায়ে টিএনবিসি ধরা পড়ার পর স্তন অপসারণের মাধ্যমে রোগীর জীবন বাঁচানোর চেষ্টায় চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা নতুন কৌশল প্রয়োগ করার সুযোগ পাবেন। এ ব্যাপারে নেচার কমিউনিকেশনস সাময়িকীতে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ওয়ালিদ খালেদ বলেন, মানবদেহের কোষ নিয়ে গবেষণা করে তাঁরা নিশ্চিত হয়েছেন, টিএনবিসির জন্য দায়ী বিসিএলইলেভেনএ জিনের উপস্থিতিই দায়ী। গবেষণাগারে ইঁদুরের স্তনের কোষে সক্রিয় বিসিএলইলেভেনএ জিন যোগ করে দেখা যায়, সেগুলো ক্যানসার কোষের মতো আচরণ করে। আর মানুষের টিএনবিসি কোষের তিনটি নমুনায় ওই জিনের সক্রিয় উপস্থিতির মাত্রা কমিয়ে দেখা যায়, তাতে ক্যানসারের বৈশিষ্ট্য কিছুটা কমে।
বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১০ হাজার মানুষের টিএনবিসি রোগটি ধরা পড়ে। হার্সেপটিনের মতো ওষুধ প্রয়োগ করে স্তন ক্যানসারের সাধারণ যে চিকিৎসা প্রচলিত রয়েছে, তাতে এই রোগটি সারে না। কারণ, টিএনবিসি হচ্ছে সবচেয়ে আগ্রাসী ধরনের স্তন ক্যানসারগুলোর একটি। এতে আক্রান্ত নারীরা রোগটি ধরা পড়ার পর মাত্র ৭৭ শতাংশ পাঁচ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকেন। কিন্তু অন্য ধরনের স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর ৯৩ শতাংশ পাঁচ বছর পর্যন্ত সময় পান।
গবেষকেরা তিন হাজার রোগীর ক্যানসার কোষ বা টিউমারের জিনগত বৈশিষ্ট্য যাচাই করে দেখেছেন। জিনগুলো কীভাবে স্টেম সেল এবং বিভিন্ন টিস্যুর বিকাশে প্রভাব ফেলে, তা পর্যবেক্ষণ করেন। ক্যানসার মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে—এমন রোগীদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে আটজনের শরীরেই বিসিএলইলেভেনএ জিনটির তুলনামূলক বেশি সক্রিয়তা দেখা যায়।
কেমব্রিজ ব্রেস্ট ক্যানসার রিসার্চ ইউনিটের পরিচালক অধ্যাপক কার্লোস ক্যালডাস বলেন, নতুন এই গবেষণার ফলাফল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি স্তন ক্যানসারের ব্যাপারে তাঁদের সামগ্রিক ধারণাকে স্পষ্ট করতে সহায়ক হবে। ফলে চিকিৎসা ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়াটাও প্রভাবিত হবে। ক্যানসারের জন্য দায়ী নতুন একটি জিনের সন্ধান পাওয়ায় রোগটির নতুন চিকিৎসাপদ্ধতি আবিষ্কারের পথ সুগম হলো।
ক্যানসার নিয়ে গবেষণাকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও ওই গবেষণার সাফল্যকে স্বাগত জানিয়েছে। যুক্তরাজ্যের ক্যানসার রিসার্চ ইউকে নামের একটি প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এমা স্মিথ বলেন, এখন টিএনবিসি মোকাবিলায় নতুনভাবে অগ্রসর হওয়া যাবে। নারীর স্তন ক্যানসারের আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে ওই বিশেষ জিন একই ধরনের ভূমিকা পালন করে কি না, তা যাচাই করতে হবে।
ব্রেকথ্রু ব্রেস্ট ক্যানসার নামের একটি প্রতিষ্ঠানের গবেষণা কর্মকর্তা ক্রিস্টোফার রানচেল বলেন, টিএনবিসি মূলত অতি আগ্রাসী একধরনের স্তন ক্যানসার এবং টেমোক্সিফেনের মতো হরমোনাল থেরাপি বা চিকিৎসা প্রয়োগ করে এতে কোনো উপকার হয় না। তাই রোগটির সুনির্দিষ্ট চিকিৎসাপদ্ধতি আবিষ্কার করাটা খুবই জরুরি।
Posted by Ab Emon