২০০৮ সালের ১৯ জুলাই। শনিবার। দুপুর ১টা ২৯ মিনিট। প্রিয়জনদের কাঁদিয়ে তৎকালীন জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে থাইল্যান্ডের পথে পাড়ি জমিয়েছিলেন অসুস্থ আরাফাত রহমান কোকো। তারপর একে একে কেটে গেছে সাতটি বছর। নানা আইনী জটিলতা আর নিরাপত্তাহীনতার কারণে সুস্থ হয়ে প্রিয় মায়ের সান্নিধ্যে ফেরা হয়নি তার। প্রিয় দেশ, প্রিয় মানুষদের ছেড়ে নির্বাসনেই থাকতে হয়েছে বিদেশের মাটিতে। অবশেষে প্রিয় সেই মাটি, পরম প্রিয় মমতাময়ী সেই মায়ের কোলো ফিরে আসার স্বপ্নপূরণ হচ্ছে তার। তবে সেই ফিরে আসা আর জীবিত নয়, প্রিয় স্বদেশের মাটিতে তিনি ফিরে আসছেন লাশ হয়ে।
শনিবার দুপুরে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে না ফেরার দেশে চলে গেছেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নয়ন মনি কোকো।জরুরি অবস্থার সময় গ্রেফতার আরাফাত ২০০৮ সালে তৎকালীন সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পাওয়ার পর চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড গিয়েছিলেন। সেখান থেকে পাড়ি জমিয়েছিলেন মালয়েশিয়ায়।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর এবং রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার আগ পর্যন্ত দুই ছেলেকে ঘিরেই ছিল খালেদার জীবনযাপন। পরে রাজনীতিতে আসেন তিনি, এক সময় আসেন তারেকও।কিন্তু ওয়ান-ইলেভেনের সময়টিতে ভেঙে যায় জিয়া-পরিবার। তিন সদস্য তিন দেশে বসবাস করেন পরবর্তী সময়ে। খালেদা জিয়া বাংলাদেশে, তারেক লন্ডনে, কোকো মালয়েশিয়ায়।
২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে মায়ের সঙ্গেই গ্রেফতার হয়েছিলেন আরাফাত রহমান কোকো।
কারাভোগের পর ২০০৮ সালের ১৭ জুলাই। বৃহস্পতিবার। বিকেলের দিকে সাময়িক মুক্তি পেয়ে চিকিৎসাধীন কোকো বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন সেল থেকে বেরিয়ে আসেন। বিকেল পাঁচটার দিকে তাকে চিকিৎসার জন্য দুই মাসের সাময়িক মুক্তির নির্দেশ দেয় ওয়ান ইলেভেন সরকার।
মুক্তির পর রাস্তার ধারে অপেক্ষারত নেতা-কর্মী ও পথচারীদের অনেকে সদ্যমুক্ত কোকোকে হাত নাড়িয়ে শুভেচ্ছা জানান। হাসপাতালের সামনে এবং আশেপাশের রাস্তায় তখন যানজটের সৃষ্টি হয়। কোকো কারারক্ষী ও চিকিৎসক-কর্মচারীদের সঙ্গে করমর্দন করে হাসপাতাল থেকে বিদায় নেন। ৫টা ৫৫ মিনিটে তাকে অক্সিজেন লাগিয়ে ঢাকা সেনানিবাস এলাকার বাড়ির উদ্দেশে হাসপাতালের একটি অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়।সন্ধ্যা ৭টার দিকে কোকো শহীদ মঈনুল সড়কে বাসায় পৌঁছেন। বাসার প্রধান গেটের কাছে এসময় তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান এবং মামা সাঈদ এস্কেন্দারের স্ত্রী নাসরিন এস্কেন্দারসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা অপেক্ষা করছিলেন। কোকোকে নিজেদের মধ্যে পেয়ে সবাই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। দুই মেয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।
ওই দিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কারা শাখা থেকে জারি করা এক আদেশে আরাফাত রহমান কোকোকে চিকিৎসার জন্য ১৭ জুলাই থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর ২০০৮ পর্যন্ত সাতটি শর্ত দিয়ে সাময়িক মুক্তির আদেশ দেওয়া হয়।
এর একদিন পর ২০০৮ সালের ১৯ জুলাই থাই এয়ারওয়েজের একটি বিমানে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়েন আরাফাত রহমান কোকো। কোকোর সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী শর্মিলা রহমান তাবাসুম, দুই মেয়ে জাইকা রহমান ও জাফিয়া রহমান এবং শ্যালক মুস্তাকিম রেজা। সেদিন বিমানবন্দরে কোকোকে বিদায় জানিয়েছিলেন তার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ও আতিকুর রহমান লিমনসহ কয়েকজন আত্মীয়-স্বজন।