‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’ পরলোকগত বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের বিখ্যাত গানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের। আর সাদামাটা উদ্বোধনীর ইতি টানা হয় যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদারের মায়ের মৃত্যুতে এক মিনিট নীরবতা পালনে। রাজনীতির উত্তাপ যে উৎসবের আনন্দে ভাটা ফেলবে, সেটা আগেই অনুমেয় ছিল। হয়েছেও তাই। অবশ্য ঘোষণা আগেই দেয়া ছিল। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে সিলেটে সাদামাটা উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে। আর জমকালো অনুষ্ঠানে পর্দা টানা হবে আন্তর্জাতিক এই আসরের। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) দেয়া কথা রেখেছে। আসলে রাখতে বাধ্য হয়েছে। সিলেট জেলা স্টেডিয়ামের ভেতরের পরিবেশ দেখে বোঝার উপায় নেই, বাইরে চলছে অবরোধ-হরতাল। তবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আনন্দে রাজনৈতিক প্রতিকূল পরিবেশ ছেদ ফেললেও, ফুটবলপ্রেমী সিলেটবাসীর ফুটবলের প্রতি টান স্টেডিয়ামে আসা রুখতে পারেনি।
১৮ হাজার দর্শকধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন স্টেডিয়াম দর্শক পরিপূর্ণ হওয়ার আগেই শুরু হয় বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের। সিলেটের স্থানীয় শিল্পীর গাওয়া গানের মূর্ছনা শুরুতে বিমোহিত করে দর্শকমন। গান হবে, নাচ থাকবে না তা কী হয়। গানের পরই বিখ্যাত মণিপুরী নৃত্যে সিলেটের ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়। নাচের পর পরই শূন্য গ্যালারি আস্তে আস্তে দর্শকে পরিপূর্ণ হতে থাকে। স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনার পর মঞ্চে আসেন দেশের দুই প্রখ্যাত শিল্পী শুভ্র দেব ও মিলা। ‘গোল গোল’ গানে দর্শকদের উন্মাদনা বাড়িয়ে দেয়ার কাজটি যথাযথ করেন শুভ্র। আর সেই উন্মাদনার মাত্রা দ্বিগুণ করেন এন্টারটেইনার মিলা। দর্শকদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে মাঠের এক প্রান্ত অন্য প্রান্তে ঘুরে ঘুরে গান পরিবেশন করেন তিনি। মিলার কণ্ঠ মাধুর্যের রেশ কাটতে না কাটতে এক ঝাঁক অতিথি নিয়ে অনুষ্ঠানের মূল মঞ্চে হাজির হন বাফুফের সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন। আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের স্বাগত বক্তব্য, পরে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার খেলোয়াড়দের সঙ্গে পরিচিত হয়ে বেলুন-পায়রা উড়িয়ে বহুল প্রতীক্ষিত বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের উদ্বোধন করেন তিনি। এ সময় অনুষ্ঠান মঞ্চে অর্থমন্ত্রী, বাফুফের সভাপতি ছাড়াও উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান জাহিদ আহসান রাসেল, সিলেটের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমেদ কামরান, বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদীসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট। ছয় জাতির এ টুর্নামেন্টে স্বাগতিক বাংলাদেশ ছাড়া মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, বাহরাইন, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর খেলবে। ছয়টি দল দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পরস্পরের মোকাবিলা করবে। গতকাল ৩০ মিনিটের সংক্ষিপ্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরই স্বাগতিক বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া ম্যাচ দিয়ে দীর্ঘ ১৫ বছর পর মাঠে গড়ায় বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আবারো শুরু হয়েছে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ। এখন থেকে তা নিয়মিত আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে বাফুফে। আর এ দাবি ফুটবলপ্রেমী দর্শক, খেলোয়াড়দেরও। ধারাবাহিকতা রক্ষার চ্যালেঞ্জে জয়ী হওয়া এখন বাফুফের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।