চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি তপন চৌধুরী বলেছেন, ‘শুধু আমরা না, পুরো দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উদ্যোক্তারা কঠিন অবস্থার মধ্যে আছেন। বেশ কিছু ক্রেতা ইতিমধ্যেই ফিরে গেছে। কারখানার উৎপাদন কমে গেছে।’
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, ‘কারখানা চলছে। তবে বন্দর থেকে কাঁচামাল আনতে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। এ ছাড়া অতিরিক্ত পরিবহন ভাড়া গুনতে গিয়ে প্রতিদিনই ক্ষতি বাড়ছে। এমন অবস্থায় ক্রেতারা উল্টো দাম কমানোর জন্য চাপ দিচ্ছে। তারা (ক্রেতারা) বলছে, এই পরিস্থিতির মধ্যেও তারা কাজ দিচ্ছে। যেন তারা দয়া করছে।’
আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে দেশের উদ্যোক্তাদের পরিচয় ঘটানো ও স্থানীয়ভাবে যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করতে ঢাকা আন্তর্জাতিক বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতের যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী আজ বুধবার শুরু হচ্ছে। বিটিএমএর সঙ্গে তাইওয়ানের চ্যান চাও ইন্টারন্যাশনাল ও হংকংয়ের ইয়োর্কার্স ট্রেড অ্যান্ড মার্কেটিং সার্ভিস কোম্পানি যৌথভাবে চার দিনব্যাপী এই প্রদর্শনীর আয়োজন করছে। আজ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ডিটিজি নামের এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের বিটিএমএর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে প্রদর্শনীর বিষয়ে বিস্তারিত জানান সংগঠনটির সভাপতি তপন চৌধুরী। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিটিএমএর সহসভাপতি ফজলুল হক, শওকত আজিজ ও আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, পরিচালক আবদুল মান্নান মিয়া, চ্যান চাওয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টাইগার লিন প্রমুখ।
এক প্রশ্নের জবাবে বিটিএমএর সভাপতি বলেন, বিদেশি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ভারত, চীন বা ভিয়েতনামের জন্য আলাদা কোনো ভালোবাসা নেই। তারা যে দেশ থেকে কম দাম ও দ্রুত পণ্য সরবরাহ পাবে, সেখানেই কাজ দেবে। তিনি বলেন, ‘আমরা ক্রেতাদের এসব চাহিদা পূরণ করতে পেরেছি বলেই আজকের এই অবস্থানে পৌঁছেছি। তাই কীভাবে আমরা বলি, সবকিছু সুন্দর চলছে। ক্রেতারা যাবে না।’ তিনি আরও বলেন, বর্তমান অবস্থা যত দীর্ঘায়িত হবে, ক্ষয়ক্ষতি তত বাড়বে। এটা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই।
ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের কাছে সহায়তা চাইবেন কি না, জানতে চাইলে তপন চৌধুরী বলেন, ‘ক্ষতি নিয়ে সরকারের সঙ্গে আমাদের প্রতিনিয়তই কথা হচ্ছে। আমাদেরও বাস্তবসম্মত উদ্যোগ থাকতে হয়। আমরা তো সরকারকে বলতেই পারি, তবে সরকারই বা কোথা থেকে দেবে। আমাদের ইনকামের টাকাই তো রাজস্ব খাতে যায়। সরকার তো আর টাকা ছাপায় না যে চাইলাম আর দিয়ে দিল।’
বিটিএমএর সভাপতি বলেন, ‘আজ আমরাই যখন ক্ষতিগ্রস্ত, পুরো শিল্পকারখানা ক্ষতিগ্রস্ত, তখন সরকারের হাত কীভাবে শক্তিশালী হবে? সরকার তো আকাশ থেকে টাকা এনে দেবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, সরকার অর্থনীতিকে সচল রাখতে সাধ্যমতো সহায়ত করবে।’
প্রদর্শনী: এবারের ১২তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতের যন্ত্রপাতির প্রদর্শনীতে ৩৩ দেশের ৮৮০টি যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। ১৬টি হলে এসব প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৬০টি বুথ থাকবে। প্রদর্শনীর এক যুগ পূর্তি উপলক্ষে ১২টি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেওয়া হবে। আগামী শনিবার পর্যন্ত প্রদর্শনী প্রতিদিন দুপুর ১২টা রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। মেলায় কোনো প্রবেশ ফি নেই।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রদর্শনীর মাধ্যমে বস্ত্র ও পোশাকশিল্পের প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা স্পিনিং, উইভিং, ডায়িং-প্রিন্টিং-ফিনিশিং টেস্টিং, ওয়াশিং, এমব্রয়ডারি, সেলাইয়ে সর্বশেষ প্রযুক্তি ও উন্নত মানের যন্ত্রপাতি সম্পর্কে জানতে পারবেন। প্রয়োজনে মেলা প্রাঙ্গণ থেকে কিনতেও পারবেন। গত বছর ডিটিজিতে ২০ কোটি ডলারের যন্ত্রপাতি বিক্রি হয়।
বিটিএমএর সভাপতি তপন চৌধুরী বলেন, গত বছর প্রাইমারি টেক্সটাইল বা বস্ত্র খাতে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়েছে। এটি তার আগের বছরের চেয়ে ১৮ শতাংশ বেশি। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, অবকাঠামো, গ্যাস ও বিদ্যুৎ চাহিদামতো পাওয়া গেলে ২০২১ সালের মধ্যে বস্ত্র ও পোশাক খাতের রপ্তানি আয় ৫ হাজার কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।