আরিফ উদ্দিন, গাইবান্ধা থেকে: নাপু এন্টারপ্রাইজের একটি বাস (ঢাকা-মেট্রো-ব-১১-৪৮১০) গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সীচা পাঁচপীর থেকে ৭০ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকা অভিমুখে রওনা দেয় শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায়। এর অধিকাংশ যাত্রীই ছিল দরিদ্র ও শধমজীবি মানুষ। যারা পরিবারের মুখে দুবেলা দুমুঠো অন্য যোগাতে ঢাকা যাচ্ছিল কাজের সন্ধানে। কিন্তু কে জানতো এই যাওয়াই তাদের শেষ যাওয়া হবে। বাসটি যখন রাত ১১টায় তুলসীঘাটের বুড়িরঘর এলাকা অতিক্রম করছিল পথযাত্রার ক্লান্তি তে বাসে সকল যাত্রীই তখন ঘুমিয়ে ছিল। হঠাৎ করেই বাসে রাস্তার পাশ থেকে ছুঁড়ে মারা হয় পেট্টোল বোমা। যা মুহুর্তেই গোটা বাসে ছড়িয়ে যায়। সাঘাটার উল্যাবাজারের এক যাত্রী ফরিদ মিয়া তার স্ত্রী যুথী আকতারকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তারা হঠাৎ করে বাসে পেছন ভাগে আগুন দেখতে পেয়ে চিৎকার করে ওঠেন। ড্রাইভারও বাস থামিয়ে দেয় রাস্তার ধারে। এই সুযোগে জীবন বাঁচাতে অনেকের মত তিনি এবং তার স্ত্রী লাফিয়ে আত্মরক্ষা করেন। তাতে তারা কিছুটা আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যায়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে দেখতে পান মুহুর্তেই গোটা বাস তখন দাউ-দাউ করে জ্বলছিল। ভেতরে মানুষের মরণ চিৎকার আর মানুষের আগুনে পোড়া চামড়া গন্ধ। অধিকাংশ যাত্রী লাফিয়ে পড়ে আহত অবস্থায় জীবন বাঁচাতে পারলেও আগুনে পোড়া কাঠের মত অঙ্গার হওয়া অবস্থায় উদ্ধার করা হলো সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ কালীর খামার গ্রামের খয়বর হোসেন দুলুর ছেলে সৈয়দ আলী (৪২), পশ্চিম চণ্ডিপুর গ্রামের সাইফ মিয়ার মেয়ে হালিমা বেওয়া (৪২), শাজাহান আলীর ছেলে সুমন মিয়া (২২), নাগের খামার গ্রামের বলরাম দাসের মেয়ে শিল্পী দাস (১০) এর লাশ। আর সেইসাথে উদ্ধার হলো গুরুতর অগ্নিদগ্ধ মোহাম্মদ তারা মিয়ার ছেলে সুজন (১০)। যে জীবিত থাকলেও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেন। পুড়ে যাওয়া লাশ গুলো এতটাই অগ্নিদগ্ধ হয়েছিল যে তাদের আত্মীয়-স্বজনরাও তাদের চিনতে পারছিলেন না। শেষ পর্যন্ত কারও পড়ণের লুঙ্গির আধাপোড়া কিছু অংশ, কারও নাগফুল, কারও গলার তাবিজ, কারও হাতের বালা দেখে তাদের সনাক্ত করা হয়। এসমস্ত পুড়ে অঙ্গার হওয়া মানুষের লাশ যখন দরিদ্র আত্মীয়-স্বজনরা বাড়ি নিয়ে যাচ্ছিল তখন হাসপাতাল চত্বরে এক হৃদয় বিদারক দৃশে্যর অবতারণা হয়। সবারই মনেই একটি প্রশ্ন কি ছিল আমাদের অপরাধ?