নাশকতা দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের কঠোর অবস্থান থেকে সরবে না। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গ্রহণ করা জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত থাকবে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এই কঠোর অবস্থানেই দেশের পরিবেশ পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেকটা উন্নতি হয়েছে। এ পরিস্থিতি ধরে রাখা এবং আরও সহনীয় পর্যায়ে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনে কঠোর থেকে কঠোরতর অবস্থানে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া আছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, নাশকতা-সহিংসতায় যারা জড়িত তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। দেশের যে কোনো অঞ্চলে পুলিশ, র্যাব, বিজিবিকে আক্রান্ত বা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা হলে কঠোরতর ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। নাশকতাকারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের আইনের হাতে তুলে না দেওয়া পর্যন্ত এই কঠোর অবস্থান অব্যাহত থাকবে।সরকার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপ মানুষকে সাহস জুগিয়েছে। হামলা চালানোর সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ যেমন হামলাকারীদের হাতেনাতে ধরে ফেলছে, সাধারণ মানুষও আসছে এগিয়ে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মানুষ হামলার সময় দুর্বৃত্তদের পাকড়াও করে গণপিটুনি দিচ্ছে। মানুষের মধ্যে প্রতিরোধ গড়ে তোলার মানসিকতা রাজধানী থেকে শুরু হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার কারণে মহানগর, জেলা শহর ও মহাসড়কে সহিংসতা কমে এসেছে। কিছু প্রত্যন্ত এলাকায় দুর্বৃত্তরা সহিংস ঘটনা ঘটাচ্ছে। যারা নাশকতার সঙ্গে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছে। যারা এখনো আছে, তাদের আইনের হাতে তুলে না দেওয়া পর্যন্ত আমরা কঠোর অবস্থান থেকে সরব না।’ র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান বলেন, ‘সন্ত্রাসী কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত সহিংসতা নাশকতা বন্ধ না হবে, তত দিন আমাদের এ অবস্থান বজায় থাকবে। অপারেশন অভিযান শিথিল করা হবে না।’ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, নাশকতা সহিংসতাকারীদের কোনোভাবেই ছাড়া দেওয়া হবে না। মানুষের জানমাল রক্ষায় প্রয়োজনীয় যা করার ডিএমপি পুলিশ তা-ই করবে। জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াতসহ ২০-দলীয় জোটের টানা অবরোধ-হরতালে দেশজুড়ে জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর অব্যাহত থাকলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও কঠোর অবস্থান নেয়। ইতিমধ্যে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন সহিংসতায়। দুর্বৃত্তদের অব্যাহত আগুন-বোমাসহ হামলায় পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেটসহ কয়েকশ’ নারী-পুরুষ আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন অনেকে। টানা অবরোধ-হরতালে দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ঢাকা, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, নারায়ণগঞ্জ, পাবনা, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, লালমনিরহাট, নীলফামারী, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, বগুড়া, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, সিলেট ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নিরাপত্তা পরিস্থিতি নাজুক। যে কারণে এ জেলাগুলোয় চলমান নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের লাগাম টানতে ইতিমধ্যে বিজিবি মোতায়েন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দেশে চলমান নৈরাজ্য মোকাবিলায় পুলিশ কর্মকর্তাদের ইতিমধ্যে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক। জানুয়ারিতে রাজারবাগ পুলিশ লাইন মাঠে পুলিশ সপ্তাহের সমাপনী বক্তব্যে কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিজ নিজ কর্মস্থলে রাতের মধ্যেই যোগ দেবেন। নিজ নিজ এলাকায় কীভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখা যায় সে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। রাতেই নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’ ওই রাত থেকেই পুলিশ অভিযান চালায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের টহল বাড়ানো হয়েছে। সহিংসতাপ্রবণ এলাকার থানার সামনে তৈরি করা হয়েছে বাঙ্কার। সেখানে সশস্ত্র অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। ৩৯১টি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাতেও নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা।