রানা প্লাজা ধসে আহত ও নিহত শ্রমিক পরিবারের সদস্যরা এবার প্রাপ্য ক্ষতিপূরণের ৩০ শতাংশ পেতে যাচ্ছেন। ক্ষতিপূরণের জন্য আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নেতৃত্বাধীন রানা প্লাজা সমন্বয় কমিটি বিষয়টির চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। এর আগে ক্ষতিপূরণের ৪০ শতাংশ পেয়েছিলেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা।
ভবনধসে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের দাবিনামা বা ক্লেইম ফরম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য ৩ কোটি মার্কিন ডলার বা ২৪০ কোটি টাকা প্রয়োজন। তবে রানা প্লাজা ডোনারস ট্রাস্ট ফান্ড নামের আন্তর্জাতিক তহবিলে জমা আছে ২ কোটি ১০ লাখ ডলার। এই অর্থ থেকে গত বছর পাঁচ কিস্তিতে আহত ও নিহত শ্রমিক পরিবারের ২ হাজার ৭৭০ জন তাঁদের প্রাপ্য ক্ষতিপূরণের ৪০ শতাংশ পান। অবশ্য এ থেকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের প্রাপ্ত সহায়তা ও এককালীন দেওয়া ৫০ হাজার টাকা কর্তন করে রাখা হয়েছিল। আর এবার ক্ষতিপূরণের বাকি ৬০ শতাংশের মধ্যে ৩০ শতাংশ অর্থ দেওয়া হচ্ছে।
জানা যায়, গত জানুয়ারিতে সমন্বয় কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু প্রক্রিয়া শেষ করতেই দেড় মাস চলে গেছে। শেষমেশ চলতি সপ্তাহে অনুমোদন দেওয়া হয়। বিভিন্ন দেশে পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর বড় জোট ক্লিন ক্লথ ক্যাম্পেইন (সিসিসি) গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সিসিসি রানা প্লাজা সমন্বয় কমিটিরও সদস্য।
জানতে চাইলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন রানা প্লাজা সমন্বয় কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) সহকারী নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মেদ। তিনি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, চলতি মাসের মধ্যেই সবার ব্যাংক হিসাবে ক্ষতিপূরণের ৩০ শতাংশ অর্থ চলে যাবে। তিনি জানান, গত বছর দাবিনামার কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় ধাপে ধাপে অর্থ দেওয়া হয়েছিল। এবার সেটি হচ্ছে না। সবাই একসঙ্গে পাবেন।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১৩৬ জন শ্রমিক নিহত হন। আহত হন আরও অনেকে। এ ঘটনার পর দেশে-বিদেশে সমালোচনার ঝড় উঠলে আইএলওর নেতৃত্বে রানা প্লাজা সমন্বয় কমিটি গঠিত হয়। এতে বিদেশি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান, দেশি-বিদেশি শ্রমিক সংগঠন ও সরকারের প্রতিনিধিরা আছেন।
জানা যায়, রানা প্লাজা ধসে ২ হাজার ৮৩২ জন আহত, নিহত ও নিখোঁজ শ্রমিক পরিবারের ৫ হাজার ২২ জন সদস্য দাবিনামা পূরণ করেন। তাঁদের মধ্যে নিখোঁজ শ্রমিক আছেন ১৪১ জন। তাঁদের সবার জন্য পৃথক ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে। অবশ্য সবাই ক্ষতিপূরণ পাবেন না, কারণ অনেকেই কম আহত হয়েছেন। আবার কেউ কেউ অনেক আগেই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেছেন। এমনটাই জানিয়েছেন সমন্বয় কমিটির সদস্যরা। জানা যায়, এবার ৩০ শতাংশ ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন প্রায় ২ হাজার ৮০০ জন।
এদিকে সব মিলিয়ে ৭০ শতাংশ ক্ষতিপূরণ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হলেও বাকি ৩০ শতাংশের অর্থ প্রাপ্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছেই না। আন্তর্জাতিক তহবিলে এখনো ৯০ লাখ ডলারের ঘাটতি আছে। দীর্ঘদিন ধরেই ক্রেতা ও ব্র্যান্ড তহবিলে কোনো অর্থ দিচ্ছে না। তবে গত ফেব্রুয়ারিতে ইতালিভিত্তিক গ্লোবাল ফ্যাশন ব্র্যান্ড বেনেটন ক্ষতিপূরণের অর্থ দিতে সম্মত হয়। এক বিবৃতিতে ব্র্যান্ডটি তখন জানায়, বৈশ্বিকভাবে গ্রহণযোগ্য তৃতীয় পক্ষের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তারা ক্ষতিপূরণের অর্থ দিতে কাজ করছে।
এ বিষয়ে ক্লিন ক্লথ ক্যাম্পেইন গতকালের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলছে, বেনেটন ক্ষতিপূরণের বিষয়টি নিয়ে এখন চুপ। বেনেটন দাবি করছে, ন্যায্য পাওনা পরিশোধ নিয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষায় আছে তারা। অবশ্য এই প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করছে না বেনেটন। এমনকি কোন পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে কিংবা কত অর্থ ও সময়সীমা কী, সে বিষয়েও ব্র্যান্ডটি কোনো ঘোষণা দিচ্ছে না—এমন অভিযোগ করেছে সিসিসি।
সিসিসির পক্ষ থেকে বেনেটনের প্রতি শিগগিরই ক্ষতিপূরণের জন্য অন্তত ৫০ লাখ ডলার রানা প্লাজা ডোনারস ট্রাস্ট ফান্ডে দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে জোটের প্রতিনিধি স্যাম মাহের বলেছেন, ‘তহবিলে ৯০ লাখ ডলারের ঘাটতি অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা দেখতে চাই, বেনেটনসহ অন্য ব্র্যান্ডগুলো এই ঘাটতি পূরণে যথাযথ দায়িত্ব নিচ্ছে।