স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহে বাঁশের খুঁটি আর টিনের দিয়ে নির্মিত বিদ্যালয়ে পাঠদান চলছে আট বছর। ক্লাসরুম বলতে দুটি প্লাসটিকের চেয়ার, ১০টি বেঞ্চ, দুটি ভাঙা ব্লাকবোর্ড, দুটি ডাস্টার। বিদ্যালয়ের একপাশে বাশেঁর চাটায়ের বেড়া তাও উইপোঁকায় খাওয়া। এমনই ভাবে আট বছর ধরে ঝিনাইদহে পৌর এলাকায় দরিগোবিন্দপুর ও ছোট ভুটিয়ারগাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলছে পাঠদান (তৃতীয় ধাপে সরকারি করণ)। বিদ্যালয় সুত্রে জানাযায়, দরিগোবিন্দপুর ও ছোট কামারকুন্ডু গ্রামে দেড় কিলোমিটারের মধ্যে কোন বিদ্যালয় ছিলনা। ফলে গ্রামবাসীর প্রচেষ্টায় ২০০৭ সালে এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক খুরশিদা জাহান রতœা বাংলামেইলকে জানান, তাঁর বাবার দেওয়া ১৬ শতক জমির ওপর ২০০৭ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০০৮ সালে প্রাথমিক অনুমোদন পাওয়া যায়। ২০১৩ সালে সরকারি গেজেট ভুক্ত হয়। এখানে শিক্ষক আছেন চার জন । তাঁরা এখনো গেজেট ভুক্ত না হওয়ায় বেতন পান না। ফলে তারা আট বছর ধরে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ১৫০ জন শিক্ষার্থী আছে। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় বিদ্যালয়টি গ্রামের শুরুতে অবস্থিত । বিদ্যালয়ের টিনের যে বেহাল দশা একটু ঝড় আসলেই টিনগুলো উড়ে পড়বে। স্কুলের একপাশে কোন রকমে বেড়া দেওয়া আছ্ে উইপোঁকায় খেয়ে জরাজীর্ণ করে ফেলেছে। ওই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী পলি খাতুন বাংলামেইলকে বলেন, আমি পাঁচ বছর এ স্কুলে পড়ছি, ফাইভে উঠে বেঞ্চে বসে ক্লাস করার ভাগ্য হলো। আগে বাড়ি থেকে বেদে পাটি নিয়ে আসতাম, চটের বস্তা নিয়ে এসে স্কুলে মেঝেতে বিছিয়ে লেখাপড়া করতাম। স্যারও আমাদের সাথে চটে বসে ক্লাস নিতেন। তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী লিমা খাতুন বলেন, বর্ষার সময় আসলেই আমাদের স্কুলে পানি ঢুকে যায়, ক্লাস করা যায় না। তখন মাটিতে বসে ক্লাস করলে ঠান্ডা কাশি ও জ¦র হয়। চতুর্থ শ্রেণরি ছাত্রী তাসলিমা খাতুন বলেন, অন্য স্কুল কেমন সুন্দর, আমাদের স্কুলে বসার জায়গার কথা মনে উঠলে আমার এস্কুলে পড়ালেখা করতে আসতে মন চাইনা। ওই স্কুলের সহকারি শিক্ষিকা চম্পা খাতুন বলেন, আমাদের স্কুলে দেড় কিলোমিটার দুর থেকেও অনেক শিক্ষার্থী পড়তে আসে। বৃষ্টি হলেই আমাদের স্কুলে পানি ঢুকে স্যাঁত সেঁতে হয়ে যায়। একটি কাঁচা সৌচাগার আছে সেটিও অস্বাস্থ্যকর। ওয়ার্ড কমিশনার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ পযর্ন্ত ঝড়ে বিদ্যালয়টি তিনবার চাল উড়ে পড়ে গেছে। গ্রামবাসী ও শিক্ষকেরা টাকা দিয়ে বিদ্যালয়টি দাঁড় করিয়েছেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা খুরশিদা জাহান রতœা বলেন, ২০১২ সাল থেকে তার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সমাপনী পরীক্ষায় শতভাগ পাস করে আসছে। খেলাধুলার প্রতিযোগিতায়ও বিদ্যালয়ে ভাল অবদান রেখেছে। বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আব্দুল খালেক বাংলামেইলকে বলেন, আমি চেষ্টায় আছি, শিক্ষা সচিব মহোদয়, আমাদের বিদ্যালয়ের বিল্ডিং শ্রীঘই হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সুবীর কুমার ঘোষ বলেন, বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য শিক্ষা অধিদপ্তরে লেখা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব এ সমস্যা সমাধান হয়ে যাচ্ছে। আর শিক্ষকেরা গেজেট ভুক্ত হলে তারাও বেতন পাবেন।