রাজধানীতে ডাক ঢোল পিটিয়ে হকার উচ্ছেদের ঘোষণা দিয়ে অভিযান চালানো হলেও বিকেলেই আবার দখলে চলে গেছে।
রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় এ চিত্র দেখা গেছে। সিটি কর্পোরেশন ঘোষণা দিয়ে সোমবার সকালে তাদেরকে উচ্ছেদ করলেও কয়েক ঘন্টার মধ্যে আবারো ফুটপাত এবং রাস্তাঘাট দখল করে হকাররা। ফুটপাতের হকার এখন রাস্তায়। বেশকিছুদিন ধরেই রাজধানীর এই চিত্র। ফুটপাতে পা ফেলার জায়গা নেই। কোন কোন এলাকায় ফুটপাত ছাড়িয়ে এখন রাস্তায় বসছে হকার। বিশেষ করে রাজধানীর গুলিস্তান, বায়তুল মোকারর, জিপিও, ক্রীড়া ভবন, দৈনিক বাংলা, স্টেডিয়াম, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, কাপ্তান বাজার, দিলকুশা, মতিঝিল, ফকিরাপুল, টিকাটুলি, সদরঘাট, বঙ্গবাজার, নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, ঢাকা কলেজ, গাউছিয়া, যাত্রাবাড়ি, পোস্তগোলা, জুরাইন, শাহবাগ, মালিবাগ-মৌচাক, ফার্মগেট, মহাখালী, মিরপুর ১০ নম্বর, গাবতলীসহ রাজধানীর ব্যস্ততম এমন কোন এলাকা নেই যেসব এলাকার ফুটপাত ফাঁকা আছে। কোন কোন এলাকায় ফুটপাতে জায়গা না পেয়ে এখন হকার বসানো হয়েছে রাস্তার উপর। এতে বিভিন্ন এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এমনকি, স্পর্শকাতর এলাকাগুলোর ফুটপাতও দখল হয়ে গেছে। রাজধানীর মিরপুর রোডের ফুটপাতে দেখা যায় দোকানদাররা রাস্তায় পসরা সাজিয়ে বসেছে, আর ক্রেতারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে দরদাম করছে। পুরো ফুটপাত জুড়েই দোকান আর দোকান। নিউমার্কেট উত্তর প্লাজায়ও ওই একই অবস্থা দেখা যায়। রাস্তায় দাড়িয়ে মানুষ কেনা-কাটা করায় কখনো কখনো মানুষের জটে গাড়ীর জট লেগে যাচ্ছে। আর হেটে যারা পথ চলছেন তাদের সবাই প্রধান সড়ক ধরেই যাচ্ছেন। রাজধানীর গুলিস্তানের কয়েকটি রাস্তার পুরোটাই বাজার। ওই রাস্তাগুলোতে কোন যানবাহন ঢোকা নিষেধ। ক্রেতা-বিক্রেতারাই কেবল সেখানে ঢুকতে পারবে।
এই এলাকার যারা স্থায়ী ব্যবসায়ী রয়েছেন তারাও আছেন মহা বিপাকে। অনেক সময় স্থায়ী দোকানের সামনে। স্পর্শকাতর জায়গাগুলোও হকারদের দখলে। বঙ্গভবনের পাশে দিলকুশা জুড়ে গড়ে উঠেছে বিশাল পণ্য মার্কেট। এখানে মাছ-গোস্ত থেকে শুরু করে এমন কিছু নেই যা পাওয়া যায় না। একই অবস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সোনালী ব্যাংকের সামনেও। এখানে গভীর রাত পর্যন্ত চলে কেনা-কাটা। স্পর্শকাতর ও সুরক্ষিত এলাকা হলেও হকারদের জন্য কোন বিধি-নিষেধ নেই।
সূত্র জানায়, অধিকাংশ এলাকায় অভিযোগ রয়েছে পুলিশের কিছু অসৎ সদস্য ফুটপাত দখল করে ইজারা দিয়েছে। বিনিময়ে প্রতিটি দোকান থেকে প্রতিদিন নিচ্ছে ২০ থেকে ৫০ টাকা। এছাড়াও স্থানীয় মাস্তান, প্রভাবশালী মহল এবং রাজনৈতিক কোন কোন নেতাও ফুটপাত থেকে চাঁদা নিচ্ছেন। এদিকে, এসব বিষয়ে জানার জন্য ঢাকার পুলিশ কমিশনারের মোবাইলে ফোন করে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। বাংলাদেশ হকার ফেডারেশনের সভাপতি আবুল কাশেম বলেছেন, ফুটপাত নিয়ন্ত্রণ করে লাইনম্যানরা। লাইনম্যান নামক চাঁদাবাজরাই হকার বসায়। একজন হকার বেশী বসাতে পারলেই লাইনম্যানের দিনে ৫০-১০০ টাকা উপার্জন।
অপরদিকে হকারদের কারণে ফুটপাতে হাটতে না পেরে সাধারণ পথচারীদের দাবি হকার উচ্ছেদের। মানুষের সেই দাবীকে সামনে রেখে এবারের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগে মেয়র প্রার্থীদের কারো কারো লিখিত এবং কারো কারো অলিখিত প্রতিশ্রুতি ছিলো ফুটপাত হকারমুক্ত করার।
জানা গেছে, বেশ কয়েকটি রাস্তা থেকে হকার তুলে দেয়া হয়। দুই প্লাটুন পুলিশের সহায়তা নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। গতকাল প্রায় ৩০ হাজার হকারকে ওই এলাকা থেকে তুলে দেয়া হয় সকালের দিকে। কিন্তু বিকেলেই দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। বিকেল ৪ টার দিকে দেখা যায় যেসব রাস্তা দিয়ে হকারদের তুলে দেয়া হয়েছে সেসব রাস্তা আবারো হকাররা দখল করে নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতেই এই ঘটনা ঘটে। হকার সমিতি জানায়, রাজধানীতে প্রায় আড়াই লাখ হকার আছে। হকার উচ্ছেদের প্রতিবাদে ইতিমধ্যে কিছু কিছু সংগঠন রাস্তায়ও নেমেছে। কিন্তু সাধারণ পথচারীদের একটিই দাবি ফুটপাত পরিস্কার করা।