২০১৫-১৬ অর্থ বছরের বাজেট ঘোষণায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বরাদ্দ ৪৬ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন। প্রস্তাবিত বাজেটে খাতটিতে ৩ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি পূরণের অংশ হিসেবেই এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার সংসদে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের বিষয়কে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে সরকার। এক্ষেত্রে এরই মধ্যে উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জিত হয়েছে। এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। দেশে ডিজিটাল বিভাজন পরিহারে ৪ হাজার ৫৪৭টি ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের সহায়তায় বিভিন্ন পৌরসভায় পৌর ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমান মেয়াদে দেশের বিভিন্ন স্থানে হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইসিটি ইনকিউবেটর এবং কম্পিউটার ভিলেজসহ অন্যান্য অবকাঠামো তৈরির কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করা হবে। মহাখালী আইটি ভিলেজ, বরিশালের চন্দ্রদ্বীপ ক্লাউডচর, সিলেট ইলেকট্রনিক সিটি ও রাজশাহীর বরেন্দ্র সিলিকন সিটি স্থাপনের জন্য এরই মধ্যে জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া খুলনা, চট্টগ্রাম ও রংপুর বিভাগে হাইটেক ও সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপনের জন্য জমি নির্বাচন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রতিটি জেলায় তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে ১২টি জেলায় আইটি ভিলেজ স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বর্তমানে দেশে টেলিফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ঘনত্ব যথাক্রমে ৮০ দশমিক ১ শতাংশ ও ২৯ দশমিক ৩ শতাংশ উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, সবার জন্য ইন্টারনেট সহজলভ্য করতে প্রতি এমবিপিএস ব্যন্ডউইডথের মূল্য কমানো হয়েছে। জনগণকে ইন্টারনেট সেবা প্রদানের লক্ষ্যে সব জেলার ১ হাজার ৬টি ইউনিয়নে প্রায় ১১ হাজার কিলোমিটাল অপটিকাল ফাইবার কেবল স্থাপন করা হচ্ছে। এছাড়া সারা দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা প্রদানের জন্য ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক স্থাপনের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, সব ইউনিয়ন পরিষদে অনলাইন জন্মনিবন্ধন পদ্ধতি চালু হয়েছে। কৃষি খাতেও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। সারা দেশে ২৪৫টি কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্রকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের সেবা প্রদান করা হচ্ছে। সরকারি কার্যক্রমে গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে ৮০০টি সরকারি অফিসে ভিডিও কনফারেন্সিং ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে আট হাজার ডাকঘর ও ৫০০টি উপজেলা ডাকঘরকে ই-সেন্টারে রূপান্তরের কাজ চলছে। ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে এ কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।
আসন্ন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন ব্যয় মিলিয়ে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ হাজার ২১৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় ১ হাজার ৭৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর এ খাতে সংশোধিত উন্নয়ন ব্যয় ৮০৪ কোটি টাকা।
আর ডাক ও টেলিযোগাযোগ খাতে আসন্ন অর্থবছর মোট ২ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এর মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৭১ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর খাতটির উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ রাখা হয় ৯৮৫ কোটি টাকা।