খেলছেন তো আরো কত আগে থেকেই। কিন্তু লিটন কুমার দাশের জন্য ‘একদম মনের মতো’ গিয়েছে গত ক্রিকেট মৌসুমটা। শেষ প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে রনি তালুকদারের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাঁর ব্যাটে। আবাহনীর হয়ে ১৬ ম্যাচে এক সেঞ্চুরি ও পাঁচ ফিফটিসহ ৬৮৬ রান ৪২.৮৮ গড়ে। এরপর ১৬তম জাতীয় ক্রিকেট লিগে ৮৫.৩৩ গড়ে দেশের ইতিহাসের রেকর্ড ১,০২৪ রান রংপুর বিভাগীয় দলের এ ব্যাটসম্যানের। এমন পারফরমেন্সের আলো লিটনকে এনে দাঁড় করিয়েছে ‘স্বপ্নের মতো’ আন্তর্জাতিক অভিষেকের দুয়ারেও।
ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ পারফরমেন্সের পুরস্কার হিসেবে পাকিস্তান সিরিজের টেস্ট দলেও ছিলেন, তবে খেলার সুযোগ হয়নি। ১০ জুন থেকে ভারতের বিপক্ষে শুরু হতে যাওয়া একমাত্র টেস্টে ডান হাতের অনামিকার চোটের জন্য অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের উইকেটকিপিং না করার সম্ভাবনা লিটনের অভিষেকের সুযোগ তৈরি করে রেখেছিল আগেই। এর মধ্যে আবার চোটের জন্য মাহমুদ উল্লাহর ছিটকে পড়াটা একাদশে লিটনের অন্তর্ভুক্তির দাবি জোরালো করেছে আরো। এ অবস্থায় লিটনও যেন স্বপ্নের অভিষেকের ক্ষণগণনা করতে শুরু করে দিয়েছেন, ‘ভারতের মতো দলের বিপক্ষে অভিষেক হওয়াটা যেকোনো খেলোয়াড়ের জন্যই স্বপ্নের মতো।’ কেন? সে ব্যাখ্যাও মিলেছে ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত ওপেনারের ভূমিকায় খেলা এ ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে, ‘ভারতের বিপক্ষে খেলতে পারলে আমি অবশ্যই নিজেকে ভাগ্যবান মনে করব। কারণ ওরা সব সময় টেস্ট র্যাংকিংয়ে এক থেকে তিনের মধ্যে থাকে।’ খেলার সুযোগ পেলে অভিষেকটা স্বপ্নের মতো করে রাঙানোর ইচ্ছেও আছে লিটনের। গতকাল দুপুরে ম্যাচ ভেন্যু ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ দলের প্রথম অনুশীলনের পর বললেন, ‘একাদশে যদি জায়গা হয়, তাহলে সেটি আমার জন্য হবে অনেক বড় সুযোগ। ভারতের মতো বড় দলের বিপক্ষে দারুণ পারফর্ম করার চেয়ে বড় স্বপ্ন তো আর কিছু হতে পারে না। আর সব ক্রিকেটারেরই অভিষেকে দারুণ কিছু করার স্বপ্ন থাকে। আমি চেষ্টা করব নিজের শতভাগ উজাড় করে দেওয়ার।’
অবশ্য নিজের চেনা পজিশনে যে লিটনের ব্যাটিং করার সুযোগ হবে না, সেটিও নিশ্চিত করেই বলা যায়। এ ওপেনারের সুযোগ হলে হবে লোয়ার মিডল অর্ডারে। তাতেও আপত্তি নেই তাঁর। বরং যেকোনো পজিশনে ব্যাটিং করার মানসিক পূর্বপ্রস্তুতিও আছে বলে জানালেন তিনি, ‘দলের প্রয়োজনে যেকোনো পজিশনে ব্যাটিং করতে আমি প্রস্তুত। তা ছাড়া আমি ওপেনার বলে যে পেছনে খেলতে সমস্যা হবে, এমনটা আমার মনে হয় না। লোয়ার অর্ডারে ব্যাটিং করার অভিজ্ঞতাও আমার আছে। ওপেনার তো হয়েছি মাত্র দুই বছর হলো। এর আগে তো পেছনেই নামতাম। ব্যাটিং করতাম পাঁচ, ছয় কিংবা সাত নম্বরে।’ তবে ব্যাটিংই শুধু নয়, লিটনকে উইকেটকিপিংও করতে হতে পারে। সেই চ্যালেঞ্জ সামলানোর মানসিক প্রস্তুতিও নিয়ে রাখতে হচ্ছে এ তরুণকে, ‘মুশফিক ভাইয়ের অধিনায়কত্বে খেলতে পারাটা আমার জন্য অনেক ভালো লাগার হবে। তবে তাঁর সামনে উইকেটকিপিং করা আমার জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জেরও। আমি আমার সামর্থ্যের সেরাটা দিয়ে খেলতে প্রস্তুত।’ সব মিলিয়ে প্রস্তুতিটা অভিষেকটা ‘মনের মতো’ করে রাঙানোরও!