বম্বে হাইকোর্টের রায়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন সালমান খান। এই নির্দেশে আমরা বাকিরাও সহজে নিঃশ্বাস নিতে পারছি। ১৩ বছরের দীর্ঘ হিট-অ্যান্ড-রান মামলায় সম্প্রতি বিচারক যখন সাজা স্থগিত ও সালমানের জামিন মঞ্জুর করলেন, তখনই দীর্ঘ এই নাটকে এল অ্যান্টি ক্লাইম্যাক্স। মজার ব্যাপার, সেদিন সকালেই নামজাদা এক খবরের কাগজের বিজ্ঞাপনে জ্বলজ্বল করে উঠল অভিযুক্ত স্টারের ছবি। বিজ্ঞাপনে চশমার সেই কোম্পানির নাম আবার ‘ইমেজ’। অদ্ভূত সমাপতন। আমি নিজেই তখন ভাবলাম – কী ঔদ্ধত্য! কী সময়জ্ঞান! জেলগামী এক স্টারকে প্রোমোট করার জন্য সাহস লাগে, আত্মবিশ্বাস লাগে। অমিত দেশাইয়ের আবেদন হাইকোর্ট খারিজ করে দিলে কী হত? এই ‘ইমেজ’ টিম কি বিজ্ঞাপন প্রকাশের আগে ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করতে চেয়েছিল? এখানেই বিষয়টি আরও আশ্চর্যের। ভক্তদের চোখে সালমান কিছুতেই কোনও ভুল করতে পারেন না। তিনি বলিউডের এমন একজন স্টার, যিনি ব্যক্তিগত জীবনে বিভিন্ন নেতিবাচক কাণ্ড ঘটিয়ে বারবার নিজেকে অপমানিত করেছেন। তাতে অবশ্য তাঁর ভক্তদের কিচ্ছু এসে যায় না। বক্স অফিসে তাঁর মুভির সাফল্যেও কোনও প্রভাব ফেলে না এসব। সালমানের পাঁচটি ব্লকবাস্টার রেকর্ড হিট করেছে বক্স অফিসে। যদিও তাঁর পাঁচটি ফ্লপ ছবি তাঁকে দেবতার আসন থেকে টেনে নামাতে পারেনি। পাড়ায় সালমান শ্যুটিং করছেন, এই খবরটা কানে গেলেই হাজার হাজার ভক্ত সেখানে জড়ো হয়ে যান। সবসময় বডিগার্ডের ব্যূহের
গণ্ডিতে বেষ্টিত হয়ে থাকেন সালমান। তিনি কোনও অনুষ্ঠানে গেলে, আয়োজকরা বাড়তি ১০জন বাউন্সার আনান তাঁর জন্য। ধারাবাহিকভাবে সাক্ষাত্কার দেওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া, সাংবাদিকদের পাত্তা না দেওয়া এসব হামেশাই করে থাকেন। তবু সালমানকে নিয়ে মতামতের ক্ষেত্রে দ্বিধাবিভক্ত প্রেসওয়ালারাও। এমনকী দর্শকরাও এই স্টারের থেকে বিশেষ কিছু পান না। সালমানের সীমিত ক্ষমতার মধ্যে যেটা রয়েছে, তা হল তাঁর রসবোধ। তাঁর মুখে একটা রসিকতা হামেশাই শোনা যায় যে, তিনি ভালো অভিনয় করতে পারেন। যেটা তাঁর নিজের কানে শোনা নিজের সম্পর্কে সবচেয়ে মজার গুজব। শোভা দে, এইসময়
১৩ বছরের এই সোপ-অপেরা আরও ১৩ বছর চলতে পারে। কে গুনতে যাচ্ছে? ওই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন যাঁরা, তাঁদের কথা ভাবার সময় কারও নেই। তাঁদের জীবন তো শেষ। আদালত নির্দেশিত ক্ষতিপূরণ ছাড়া কোনও সাহায্যের হাত তাঁদের দিকে এগিয়ে দেওয়া হয়নি। তবু অদ্ভূত ব্যাপার, সালমানের সেবামূলক কাজ ও উদার মানসিকতার প্রশংসায় গলা ফাটিয়ে যাচ্ছেন তাঁর সমর্থকরা। প্রশ্ন উঠছে এখানেই। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের দেখভালের দায়িত্ব নেওয়ার কথা, কেন একবারও শোনা যায়নি এই অভিনেতার মুখে। একজন সেলিব্রিটির ক্ষমতা একটা জোড়া ফলা তলোয়ারের মতো। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যক্তি চরিত্রের ওপর ভিত্তি করেই এই ক্ষমতা গড়ে ওঠে। কিন্তু, কিছুক্ষেত্রে আবার হয়ও না। একজন সেলিব্রিটির ট্রায়াল চলাকালীন, তাঁর প্রতি মানুষের অসম প্রতিক্রিয়া প্রতিফলিত হতে দেখা যায়। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আইন তো আইনই। কেউ তার ওপরে নন। হলিউডে বিষয়টিকে এভাবেই দেখা হয়। সেজন্যই রবার্ট ডাউনি জুনিয়রের মতো বিশ্ববন্দিত তারকাকেও বেআইনিভাবে মাদক রাখার জন্য শাস্তি পেতে হয়। ঠিক আর পাঁচজনের মতোই। সেক্ষেত্রে কোনও ছুট দেওয়া হয়নি বা পক্ষপাতিত্বও করা হয়নি। জেলে দেওয়া হয়নি ‘মায়ের হাতে তৈরি খাবার’। কিন্তু এই ভারতবর্ষে আমরা সেসবের থেকে অনেক দূরে।
আমাদের বিচারব্যবস্থার পর্যালোচনার এটাই সবচেয়ে সঠিক সময় এবং এক্ষেত্রে কিছু সংস্কার প্রয়োজন। শুনানি চলছে এমন হাজার হাজার মামলার অভিযুক্তরা, বছরের পর বছর জেলের ঘানি টানছে।
তাদের জামিন বন্ড দেওয়ারও সুযোগ নেই, আবার মামলা লড়ার জন্য অভিজ্ঞ আইনজীবী রাখারও ক্ষমতা নেই। অভাগা এই মানুষগুলোর জেলে দিন কাটতে কাটতেই জীবন শেষ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও অত্যন্ত বেশি। সালমান খানের এই উত্তেজনাপূর্ণ মামলায় বান্দ্রা পুলিশ স্টেশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টর দীনেশ এম পাটকরের দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকার কথা অবশ্যই উল্লেখ করা দরকার।
অনেক আগেই এই মামলা বন্ধ হয়ে যেতে পারত। কারণ এই মামলার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলি(৬৮-র মধ্যে ৫৬টি) খুঁজে পাচ্ছিল না পাটকর ও তাঁর দল। খুব কম মানুষই জানেন পাটকরকে কেমন দেখতে। পাটকরের খোঁজই বা ক’জন রাখেন। কিন্তু তাঁর অধ্যাবশায় দেখিয়ে দিয়েছে, একজন সত্ পুলিশকর্মী কীভাবে একটা তদন্তের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন। নিঃসন্দেহে পাটকর তাঁর কর্তব্য পালন করেছেন। কেউ তাঁকে এজন্য পদক বা বকশিস দেবেন না, কেউ তাঁকে মনেও রাখবেন না। কিন্তু, আমার কাছে তিনিই হলেন প্রকৃত নায়ক। ভারতে যদি এরকম আরও দীনেশ পাটকর থাকত, হয়তো অন্যান্য মামলাগুলির ফলও অন্যরকম হত।ইমেজ তৈরির বিষয়ে কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই পাটকরের। তাঁর জন্য নেই কোনও অনুরাগী, কোনও ফুলের স্তবক। আরও অনেক বিজ্ঞাপনে সই করবেন সালমান খান। তাঁর পরের মুভি আবার একটা ব্লকবাস্টার হবে, যা অন্যান্য সব ব্লকবাস্টারকে ছাপিয়ে যাবে। এটাই জীবন। সালমানের জন্য জীবন আনন্দের।