পুলিশ হত্যাসহ নাশকতার মামলার পলাতক আসামি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বিএনপিপন্থী সাতজন কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। গত শনিবার দিবাগত রাতের এই বৈঠকের মধ্যস্থতা করেছেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র নিযাম-উল আযীম।
আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন, সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর প্যানেল মেয়র নুরুজ্জামান টিটোর নেতৃত্বে বৈঠক করা কাউন্সিলরা আওয়ামী লীগে যোগ দিতে যাচ্ছেন। এ নিয়েই তাঁরা আওয়ামী লীগ নেতা লিটনের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
জানতে চাইলে রাজশাহী নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি লিটন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শরীরটা একটু খারাপ করছে। এ বিষয়ে পরে কথা হবে। তোমরা কিছু মনে করো না।’
লিটনের বাড়িতে বৈঠকে অংশ নেওয়া আসামিরা সবাই পুলিশের খাতায় পলাতক বলে নিশ্চিত করেছেন নগরীর বোয়ালিয়া থানার ওসি মাহামুদুর রহমানসহ পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, এসব আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশ অব্যাহতভাবে অভিযান চালাচ্ছে। তবে লিটনের বাড়িতে তাঁদের গোপন বৈঠক করার বিষয়টি পুলিশের জানা ছিল না। জানতে পারলে পুলিশ লিটনের বাড়ির সামনে পাহারা বসাত বলেও দাবি করেন ওই কর্মকর্তা।
তবে পুলিশের আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, লিটনের বাড়িতে বৈঠকের বিষয়টি পুলিশ জানত। কিন্তু তাঁদের আটক করতে গেলে ঝামেলা হবে জেনে পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়নি। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতা লিটনের বাড়ি থেকে মাত্র কয়েক হাত দূরেই অবস্থিত উপশহর পুলিশ ফাঁড়ি। ওই পুলিশ ফাঁড়ির একাধিক সদস্যও ওই বৈঠকের কথা জানতেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শনিবার রাত ১০টার দিকে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-২ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর পলাতক বিএনপি নেতা নুরুজ্জামান টিটোর নেতৃত্বে বিএনপিপন্থী সাতজন কাউন্সিলর খায়রুজ্জামান লিটনের উপশহরের বাড়ি যান। ১০-১২টি মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে এই কাউন্সিলররা তাঁদের সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে লিটনের বাড়ি যান। এরপর তাঁরা লিটনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। রাত পৌনে ১২টার দিকে ওই বৈঠক শেষ হয়।
লিটনের বাড়ি থেকে বের হতে দেখা গেছে নগর সংস্থার ভারপ্রাপ্ত মেয়র নিযাম-উল আযীম, প্যানেল মেয়র-২ নুরুজ্জামান টিটো, ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবু বাক্কার কিনু, ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুস সোবহান লিটন, ১৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বেলাল আহমেদ, ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর টুটুল, ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আশরাফুল হাসান বাচ্চু ও ২৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহজাহান আলী ও একজন প্রকৌশলীকে।
ভারপ্রাপ্ত মেয়র বলেন, ‘একনেকে রাসিকের নতুন যে রাস্তা সংস্কার প্রকল্প পাস হলো, এ জন্য সাবেক মেয়র লিটনকে ধন্যবাদ জানাতেই বিএনপিপন্থী ওই কাউন্সিলররা এসেছিলেন। তাঁরা কোনো গোপন বৈঠক করতে আসেননি।’
আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ একজন নেতা হিসেবে লিটনের বাড়িতে যে কেউ আসতেই পারেন বলে মন্তব্য করেন নিযাম-উল আযীম। তিনি বলেন, এতে দোষের কিছু নেই।
প্যানেল মেয়র-২ নুরুজ্জামান টিটো সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই তড়িঘড়ি করে চলে যান।
বিএনপির একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, নুরুজ্জামান টিটোসহ যেসব কাউন্সিলর লিটনের সঙ্গে দেখা করতে গেছেন, তাঁদের সবার নামেই ২০১৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর নগরীর লোকনাথ স্কুল মার্কেটের সামনে পুলিশ কনস্টেবল সিদ্ধার্থ হত্যা ও আরো কয়েকটি নাশকতার ঘটনায় মামলা রয়েছে। একেকজনের বিরুদ্ধে অন্তত চার-পাঁচটি করে মামলা রয়েছে। গত জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকেই এসব কাউন্সিলর পলাতক রয়েছেন। তাঁরা নগর ভবনে যান না।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, সরকারি দলে যোগদানের উদ্দেশ্যে বিএনপিপন্থী ওই কাউন্সিলররা লিটনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আওয়ামী লীগে যোগদান করলে কী ধরনের সুবিধা পাবেন, মূলত সেটা নিয়ে দেনদরবার করতেই লিটনের সঙ্গে অনেকটা গোপনে বৈঠকে বসেন তাঁরা।
নাম প্রকাশ না করে আওয়ামী লীগের একজন নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিএনপিপন্থী কয়েকজন কাউন্সিলর আওয়ামী লীগে যোগ দিতে চান। কী প্রক্রিয়ায় তাঁদের দলে যোগদান করানো হবে, সেটি নিয়েই মূলত আলোচনা হয়েছে।’