বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে খুব আলোচিত নাম এখন। ভারতের বিপক্ষে ফতুল্লায় যে একমাত্র টেস্টটি শুরু হচ্ছে আগামীকাল, তাতেও তার নাম বারবার আসবে আলোচনায়। কিন্তু তার সামনে আলোচনার এই বিষয়টি আনলে তিনি কেমন যেন লজ্জা পান। আসলে সেটা বিনয়। পরম বিনয়ী হয়ে যান মমিনুল হক। কি রেকর্ড তার সামনে তা মাথায় আনতে চান না। ভুলে থাকতে চান সব। মাঠে গিয়ে নিজের খেলাটা খেলার দিকেই তার মন। অথচ কোথায় না দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের এই ক্ষুদ্রাকৃতির বিশাল ব্যাটসম্যান।
স্যার ভিভ রিচার্ডস, বীরেন্দর শেবাগ ও গৌতম গাম্ভিরকে তিনি ধরে ফেলেছেন পাকিস্তানের বিপক্ষের টেস্ট সিরিজে। ওই তিন কীর্তিমানের মতো মমিনুলেরও রেকর্ড টানা ১১ টেস্ট ফিফটি বা তার চেয়ে বড় ইনিংস খেলার। সহজ রেকর্ড নয়। এখন সামনে কেবল এবি ডি ভিলিয়ার্স। তার রেকর্ড টানা ১২টি ফিফটি বা তার চেয়ে বড় ইনিংস খেলার। ভারতের বিপক্ষে মমিনুল একটি ফিফটি করতে পারলেই ছুঁয়ে ফেলবেন এই মুহূর্তে সব ফরম্যাটেই সেরা ব্যাটসম্যান ডি ভিলিয়ার্সকে। কতো বড়ই না অর্জনের হাতছানি।
কিন্তু এই প্রসঙ্গ আনলেই নির্লিপ্ততা আর নিরাবেগ মানসিকতা ফুটে ওঠে মমিনুলের উচ্চারণে। এমন রেকর্ডের কথাও ভাবেন না মমিমুলন! “এটা আমার মাথায় কাজ করে না।” ২৩ বছরের মমিনুলের ভাষ্য, “আপনারা যখন বলেন, তখন একটু মনে পড়ে। এরপর আবার ভুলে যাই। আপনারা চলে গেলে আর মনে থাকবে না। চেষ্টা করবো পরবর্তীতেও যেন মনে না আসে।”
ফতুল্লায় অনুশীলনের পর সাংবাদিকদের সামনে এসেছিলেন মমিনুল। সেখানেই সবাই জানতে চান মমিনুলের কথা। কি ভাবছেন তিনি রেকর্ড নিয়ে? কিন্তু একি! রেকর্ড টেকর্ড নিয়ে তার মাথাব্যথা নেই। ডি ভিলিয়ার্সের মতো ক্রিকেটারের পাশে গিয়ে দাঁড়ানোর চিন্তাটাও তার মাথায় খেলে না! নিজেকে স্বযত্নে এসব থেকে দূরে সরিয়ে রাখেন মমিনুল। তার টার্গেটটা ভিন্ন। শুনুন মমিনুলের কণ্ঠে, “আগের ম্যাচগুলোতে আমি যেভাবে খেলে এসেছি, এখনো চিন্তা শুধু সেভাবে খেলে যাওয়া। কারো পাশে গিয়ে বসার টার্গেট আমার নেই। দেশের মানুষ আমার কাছে যে প্রত্যাশাটা করেন সেটা পূরণ করাই আমার টার্গেট।”
২০১৩ সালের ৮ মার্চ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গল টেস্টে মমিনুলের অভিষেক। সেই থেকে আলোচনায় তিনি। ব্যাটে দারুণ ধারাবাহিক তিনি। বিশ্ব ইতিহাসেও ঢুকে পড়েছেন তিনি। ১৪ ম্যাচ খেলেছেন। ৪ সেঞ্চুরি ও ৯ ফিফটিতে তার রান ১৩৮০। গড় ৬০.০০। ঠিকই পড়েছেন। গড় তার ৬০। সর্বকালের সেরা গড়ের রেকর্ডের পঞ্চম স্থানে অবস্থান মমিনুলের। স্যার ডন ব্র্যাডম্যান (৯৯.৯৪), গ্রায়েম পোলক (৬০.৯৭), জর্জ হেডলি (৬০.৮৩), হারবার্ট সাচলিফের (৬০.৭৩) পরেই অবস্থান মমিনুলের। এ তো বিরাট কীর্তি বটে। কিন্তু সেই কীর্তিকেও সোজা ব্যাটে খেলে কি সুন্দরভাবেই না নিরাবেগ থাকেন মমিনুল। লক্ষ্য থাকে শুধু দেশের প্রত্যাশা পূরণের। এই তো বাংলাদেশের মমিনুল। ছোটোখাটো আকৃতির বড় মানুষ, বড় ব্যাটসম্যান।