মানব পাচার প্রতিরোধ, জড়িতদের গ্রেপ্তার, বিচারের দাবি এবং স্থানীয় পর্যায়ের নাগরিকদের সচেতনতায় ‘রোড মার্চ’ করতে যাচ্ছে আইন সালিশ কেন্দ্রের (আসক)-এর হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার ফোরাম।
আসক’র তদন্ত ও তথ্য সংরক্ষণ ইউনিটের পরিচালক নূর খান প্রিয়.কমকে জানান, এই কর্মসূচির মাধ্যমে কয়েকটি দাবি তুলে ধরা হবে। তিনি আশাবাদী সরকার এই বিষয়গুলোর প্রতি নজর দিবেন।
আসকের দাবিগুলো হলো- সমুদ্রপথে বিদেশগামী নিখাঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনা, মানবপাচার রোধ আইন ২০১২-এর নির্দিষ্ট বিধিমালা কর্যকর করা, পাচারকারী দালালদের আইনের আওতায় আনা, মানব পাচার সম্পর্কে মালয়েশিয়া থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়ার সাথে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং পাচার হওয়া মানুষদের দেশে ফিরিয়ে এনে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।
জাতিসংঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন মতে, সমুদ্রপথে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত হয়ে এক বছরের ব্যবধানে মানব পাচার বেড়েছে ৬১ শতাংশ। প্রধানত মালয়েশিয়ার উদ্দেশে পাচার হওয়া এসব মানুষের মধ্যে বাংলাদেশিদের পাশাপাশি রোহিঙ্গাও রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত মালয়েশিয়ার উদ্দেশে বঙ্গোপসাগর দিয়ে অবৈধভাবে গেছেন ৫৩ হাজার লোক। আগের বছর এ সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৩ হাজার। অক্টোবর থেকে জানুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশি পাচারের ঘটনা দেখা গেছে।
পাচার হওয়া মানুষগুলোর মধ্যে যারা উদ্ধার হয়েছে, তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, সমুদ্রপথের যাত্রার ভয়াবহতা এবং নির্মম নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়।
আসক বলছে, আইন শৃঙ্খলা-বাহিনীর তৎপরতায় হয়তো জড়িতদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব। তবে স্থানীয় পর্যায়ে বসবাসকারী নাগরিকদের মধ্যে পাচার রোধে করণীয় বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা দরকার। আর এ জন্যই স্থানীয় পর্যায়ে মানবাধিকার সুরক্ষা নিয়ে কর্মরত নাগরিকবৃন্দ এবং পেশাজীবীদের সমন্বয়ে সচেতনতামূলক এই কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।
অভিবাসন ও মানব পাচারবিষয়ক দেশীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটিং মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট বা রামরুর হিসাবে, ২০১৪ সালে পাচারের সময় বাংলাদেশিদের মধ্যে ৫৪০ জন গভীর সমুদ্রে মারা গেছেন। নিখোঁজ রয়েছেন অনেকেই। তাদের মধ্যে কেবল সিরাজগঞ্জ জেলার বাসিন্দা প্রায় ৫০০। একই জেলার ২৫০ জনের সন্ধান মিলেছে থাইল্যান্ডের বিভিন্ন কারাগারে। তিন হাজার ৫০০ পরিবারের অধিকাংশ থেকেই মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ আদায় করেছে পাচারকারীরা।
তবে মানবাধিকার কর্মী নূর খানের দাবি, ‘বাংলাদেশ থেকে পাচার কিংবা অপহরণের সঠিক তালিকা সরকার ইচ্ছা করলেই তৈরি করতে পারবে। কিন্তু সরকার তা করছে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার মতে, সরকার মনে করে মানবপাচার তাদের দুর্বলতা। থাইল্যান্ড, মালেশিয়ায় রাজনীতিবিদরা গ্রেপ্তার হলেও বাংলাদেশে কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি।’
আগামী ৮ মার্চ কক্সবাজার শহর থেকে টেকনাফ পর্যন্ত এ কর্মসূচিতে আসক’র নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালসহ দেশের বরেণ্য নাগরিকরা উপস্থিত থাকবেন ।