জীবিত অবস্থায় নিখোঁজ ছিলেন দুই দিন। তারপর পাওয়া যায় তার লাশ। ময়নাতদন্ত শেষে তাকে দাফনও করা হয়। ২ মাস ১৩ দিন পর মঙ্গলবার আদালতের নির্দেশে পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য কবর খুঁড়ে দেখা গেল লাশও নিখোঁজ। রয়েছে কাফনের কাপড়, নীল রংয়ের পলিথিন ও প্লাস্টিকের সুতলি।
সিলেটের বিশ্বনাথে দুই মাস আগে রহস্যজনক মৃত্যু হওয়া আবদুল মনাফ (৫০) নামের এক দিনমজুরের লাশ কবর থেকে গায়েব হয়ে গেছে।সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। আবদুল মনাফ উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের মৃত জবান আলীর ছেলে।
মঙ্গলবার আদালতের নির্দেশে লাশ উত্তোলনে গেলে কবরে লাশের বদলে পলিথিন পান উত্তোলনকারী শ্রমিকরা। কবরে লাশ না পাওয়ায় দিনভর এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করে। হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে হরিপুর গ্রামবাসীসহ এলাকার লোকজন কয়েক দফা বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার খাঁজাঞ্চী ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের আবদুল মনাফ গত ১৬ মে নিখোঁজ হন। এর দুইদিন পর বাড়ির একটি গোয়াল ঘর থেকে গলায় দঁড়ি লাগানো, হাঁটু ভাঁজ করা অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় নিহত মনাফের ভাই বিশ্বনাথ থানায় একটি অপমৃত্যু জিডি করেন। তবে আবদুল মনাফকে হত্যার অভিযোগে উস্তার আলী ও তার ছেলে মিন্টু মিয়াকে গ্রামবাসী পুলিশে সোপর্দ করেন।
নিহত আবদুল মনাফের সুরতহাল ও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয় পুলিশ।
পরবর্তীতে আবদুল মনাফকে হত্যা করা হয়েছে মর্মে তার ভাই আবদুল হাশিম বাদী হয়ে পাঁচজনের নামোল্লেখ ও আরো ৪-৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে গত ২৫ মে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-৩ এ একটি দরখাস্ত মামলা করেন। ওই মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- হরিপুর গ্রামের উস্তার আলীর ছেলে টিটু মিয়া (২৫), তার বাবা উস্তার আলী (৫৫), ভাই মিন্টু মিয়া (২২), লুৎফুর (৩২) ও একই গ্রামের মৃত মজর আলীর ছেলে কবিরুল (৩৫)।
আবদুল হাশিম আদালতে অভিযোগ করেন, তার ভাই আবদুল মনাফের ময়নাতদন্ত না করেই প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ। দাফনের সময় মনাফের শরীরে ময়নাতদন্তের কোনো (কাঁটাছেঁড়ার) দাগ পাওয়া যায়নি। সিলেট ওসমানী হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের ডা. ইফফাত ফারুকী আসামিদের দ্বারা প্রভাবিত ও বশীভূত হয়ে কোনো ধরনের ময়নাতদন্ত না করেই প্রতিবেদন দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। এ ঘটনায় তিনি পুনরায় ময়নাতদন্তের আবেদন করেন।
পরে সিলেটের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-২ এর বিচারক মো. নজরুল ইসলাম তার আবেদন আমলে নিয়ে গত ১৭ জুন পুলিশকে ৫ জুলাইয়ের মধ্যে পুনরায় ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করার আদেশ দেন।
এসময়ের মধ্যে ময়নাতদন্ত না হওয়ায় ২৬ জুলাই আদালত পুনরায় পুলিশকে ১০ আগস্টের মধ্যে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করার আদেশ দেন।
ওই আদেশের ভিত্তিতেই মঙ্গলবার আবদুল মনাফের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করতে যায় পুলিশ। এসময় নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেট ও বিশ্বনাথ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুহেল মাহমুদ, সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান, সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. আহমেদ সিরাজুম মুনির (রাহেল), বিশ্বনাথ থানার এসআই সুমন চন্দ্র সরকার উপস্থিত ছিলেন।
কিন্তু কবর খুঁড়ে আবদুল মনাফের লাশ পাওয়া যায়নি। লাশের বদলে কবরে একটি কাপড়, পলিথিন ও সুতলি পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান।