রাজধানীর গোড়ানে বাসায় ঢুকে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী নিলয় নীল (৪০) নামে এক ব্লগারকে জবাই করে হত্যা করেছে দুবৃর্ত্তরা। নিহত নিলয় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ওই বাসায় থাকতেন। গত ৩ আগস্ট তিনি ফেসবুকে এক পোস্টে হত্যার শিকার হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন।
খিলগাঁও থানার ওসি মুস্তাফিজুর রহমান জানান, শুক্রবার দুপুরে গোড়ান এলাকার ১৬৭ নম্বর বাসার পাঁচতলা ভবনের এক বাসায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। জুমার নামাজের পর ভাড়ার উদ্দেশ্যে বাসা দেখার নাম করে কয়েকজন যুবক প্রবেশ করেন ওই বাসায়। এরপর নিলয়কে জবাই করে হত্যা করা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় ঘটনাস্থলে গিয়ে বলেন, ‘নিলয়ের গলা ও ঘাড়ে এলোপাতাড়ি কোপের চিহ্ন রয়েছে। এর আগে অন্য ব্লগারদের যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, এক্ষেত্রেও হত্যাকাণ্ডের ধরণ একই রকম।’
নিলয় হত্যার ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম প্রিয়.কম-কে বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের ধরণ আর কৌশল দেখে মনে হচ্ছে এর আগে ব্লগার অভিজিৎ রায়, আশিকুর ও অনন্ত হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত সেই গ্রুই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছি। নিলয়ের ফেসবুক থেকেও তথ্য নিচ্ছি। নিলয়কে এর আগে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছিল কী না , দিয়ে থাকলে কারা দিয়েছিল তাও জানার চেষ্টা করছি।’
নিলয় হত্যার প্রতিক্রিয়ায় গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার প্রিয়.কম-কে বলেন, ‘এই সরকারই এখন ব্লগার হত্যায় পৃষ্ঠপোষকতা করছে। এত দিন ব্লগারদের হত্যা করা হয়েছে, তার কোনো বিচার হয়নি। এখন যারা বিচার দাবি করছে, তাদেরকেও হত্যা করা হচ্ছে।’
তিনি জানান, ‘ব্লগার নিলয় গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী হিসেবে ব্লগার হত্যার বিচার দাবি করে আসছিলেন। তার জন্যেই তাকে হত্যা করা হলো। এত দিন ব্লগারদের রাস্তায় হত্যা করা হতো এখন ঘরে ঢুকে হত্যা করা হচ্ছে। এই সরকার ব্লগারদের ঘরেও নিরাপত্তা দিতে পারছে না।’
ইমরান এইচ সরকার বলেন, ‘দেশে বিচারহীনতার কারণেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। মায়ের পেটের শিশুও রেহাই পাচ্ছে না।’
এ বছরের ১৫ মে ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে তিনি জানান, ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ হ্ত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশে যোগ দিয়ে ফেরার পথে দুজন অনুসরনকারীর অস্তিত্ব টের পান তিনি। এরপর তিনি এই ঘটনায় জিডি করতে গিয়ে মুখোমুখি হন উদ্ভট পরিস্থিতির। কেউ জিডি নেয়নি। বরং পরামর্শ দিয়েছে ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশ ছেড়ে চলে যান’।
উল্লেখ্য, এবছর ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে খুন হন ব্লগার ও বিজ্ঞান বিষয়ক লেখক অভিজিৎ রায়। ৩০ এপ্রিল তেজগাঁও এলাকায় খুন হন আরেক ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু। এরপর ১২ মে সিলেটে খুন হন ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ। এর আগে ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার খুন হন।