চট্টগ্রামে এবার ঘরে ঢুকে দশ বছরের এক শিশুকে গুলি করল ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। শিশুটির দুই পায়ে ৬টি গুলি লেগেছে। এর মধ্যে চারটি গুলি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বের করা গেলেও এখনও তার শরীরে রয়ে গেছে দুটি গুলি। সরাসরি হাড়ে বিদ্ধ হওয়ার কারণে গুলি দুটি সহজে বের করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের চিকিৎসকরা। চমেক হাসপাতালের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের ১১-বি নম্বর বেডে তীব্র যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে গুলিবিদ্ধ রাকিব।
শুক্রবার গভীর রাতে সাতকানিয়া উপজেলার ছমদারপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। রাকিবের ওপর হামলাকারীরা স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। হামলাকারীরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এখন পর্যন্ত উদ্ধার হয়নি ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্র। গুলিবিদ্ধ রাকিব ছমদারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র। স্থানীয় যুবলীগ-ছাত্রলীগের দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের বলি হতে হয়েছে তাকে।
রোববার দুপুরে চমেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, গুলিবিদ্ধ শিশু রাকিব হাসপাতালের বেডে শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। তার গুলিবিদ্ধ দুই পা ব্যান্ডেজে মোড়ানো। ব্যথায় কাতর রাকিব ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হামলার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলে, ‘ওরা আমার মামা হাসান কোথায় জিজ্ঞেস করে। আমি তাদের বলি মামা বাইরে গেছেন। আর তখনই ওরা আমাকে গুলি করে। আমি গুলি খেয়ে মাটিতে পড়ে গেলে ওরা আমার বুকে লাথি মারতে থাকে। আমার মা এসে আমাকে বুকে জড়িয়ে নেয়। মা না এলে হয়তো ওরা আমাকে মেরেই ফেলত।’ রাকিব আরও জানায়, তার দুই পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা। সে আবার আগের মতো হাঁটতে পারবে কিনা, স্কুলে যেতে পারবে কিনা এ নিয়ে শংকিত।
চমেক হাসপাতালের অর্থোপেডিক ওয়ার্ডের কর্তব্যরত সহযোগী অধ্যাপক ডা. শামীউল ইসলামের উদ্ধৃতি দিয়ে রাকিবের পিতা মো. সেলিম জানিয়েছেন, রাকিবের দুই পায়ে ৬টি গুলি লেগেছে। এর মধ্যে চারটি গুলি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বের করা গেলেও দুটি গুলি এখনও শরীরে রয়ে গেছে। হাড়ে বিদ্ধ হওয়ার কারণে গুলি দুটি এখনও বের করা যায়নি। তবে বর্তমানে তার অবস্থা উন্নতির দিকে। পুরোপুরি ভালো হতে একটু সময় লাগবে।
রাকিবের পিতা মো. সেলিম চমেক হাসপাতালে আহত সন্তানের পাশে দাঁড়িয়ে তার ছেলের ওপর সন্ত্রাসীদের হামলার বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, শুক্রবার রাত ১২টার দিকে ছাত্রলীগ ক্যাডার মামুনের নেতৃত্বে শুভ, তুহিন ও জাবেদসহ ১০ থেকে ১২ জনের একটি সশস্ত্র গ্র“প ছমদরপাড়া এলাকার ১ নম্বর গলিতে তার শ্বশুরবাড়িতে তার শ্যালক যুবলীগ কর্মী এনামকে মারতে যায়। সেখানে এনামকে না পেয়ে রাকিবকে গুলি করে। গুলির শব্দ শুনে ছুটে আসা প্রতিবেশী মোহাম্মদ ইলিয়াছ (৩৫) নামে এক ব্যক্তিকেও তারা গুলি করে। ঘটনার পর গুলিবিদ্ধ দু’জনকে প্রথমে সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। রাকিবের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় শনিবার রাতে তাকে চমেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, ছমদারপাড়ার আবুল বশরের ছেলে যুবলীগ কর্মী মোহাম্মদ এনামুল হক এবং তার বন্ধু মোহাম্মদ হাছানের সঙ্গে একটি চায়ের দোকানে একই এলাকার প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ জাকারিয়ার ছেলে ছাত্রলীগ কর্মী শুভ ও তুহিনের ঝগড়া হয়। ওই ঝগড়াকে কেন্দ্র করে একদিন পর হাছানকে একা পেয়ে ছাত্রলীগ কর্মী মামুনের নেতৃত্বে শুভ, তুহিন, জাবেদসহ কয়েকজন তাকে মারধর করে। খবর পেয়ে এনাম তার লোকজন নিয়ে এসে হাছানকে হামলাকারীদের কবল থেকে উদ্ধার করেন। এরপর হামলাকারীরা এনামের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। শুক্রবার রাত ১২টার দিকে আওয়ামী লীগ নেতা জাকারিয়ার তিন ছেলে মামুন, শুভ, তুহিন ও অপর এক ছাত্রলীগ কর্মী জাবেদসহ ১০ থেকে ১২ জনের একটি সশস্ত্র গ্রুপ এনামের বাসায় হানা দেয়। কিন্তু সেখানে এনামকে না পেয়ে তার (এনামের) ছেলে মনে করে ভাগ্নে রাকিবের দুই পায়ে পরপর কয়েক রাউন্ড গুলি করে পালিয়ে যায়।
রাকিবের মা রোজিনা আকতার বলেন, ‘আমার স্বামী সীতাকুণ্ডে জাহাজকাটা শিল্পে দিনমজুরের কাজ করে। গুলিবিদ্ধ ছেলের চিকিৎসা করানো আমাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে। আমাকে পশ্চিম ঢেমশা ইউনিয়নের আলীনগর এলাকায় বিয়ে দেয়া হলেও স্বামী ও ছেলেমেয়ে নিয়ে ছমদরপাড়ায় বাপের বাড়িতে থাকি। সেদিন সন্ত্রাসীরা আমার ভাইকে না পেয়ে আমার ছেলেকে গুলি করে। আমি ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে উদ্ধার না করলে তারা আমার ছেলেকে মেরেই ফেলত।’
সাতকানিয়া থানার ওসি ফরিদ উদ্দিন খন্দকার যুগান্তরকে বলেন, পূর্বশত্রুতার জের ধরে এনাম নামে একজনকে মারার জন্য যায় জাকারিয়ার পুত্ররা। ঘরে এনামকে না পেয়ে তারা দশ বছরের শিশুটিকে গুলি করে। জাকারিয়ার কাছে একটি লাইসেন্স করা বন্দুক রয়েছে। শুনেছি ওই বন্দুক দিয়ে শিশুটিকে গুলি করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখনও থানায় মামলা হয়নি। মামলা দায়ের করার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।