বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির কঠোর সমালোচনা করেছেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। এ নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সংসদ অধিবেশন কিছু সময়ের জন্য উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে বিরোধীদলীয় সদস্যরা সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেন। সঙ্গে সঙ্গে এর বিরোধিতা করেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। পরে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ব্যাখ্যা দেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে দশম সংসদের সপ্তম অধিবেশন শুরু হয়। শুরুতে এমপিদের অভিনন্দন জানিয়ে স্বাগত বক্তব্য দেন স্পিকার। এরপর সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মনোনয়ন দেয়া হয়। এই ৫ সদস্যের সভাপতিমণ্ডলীতে আব্দুস শহীদ, কাজী কেরামত আলী, তাজুল ইসলাম, ফখরুল ইমাম এবং উম্মে কুলসুম স্মৃতি রয়েছেন। পরে ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট এপিজে আবদুল কালাম, সাবেক সংসদ সদস্য ও এরশাদ সরকারের প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমেদ, সাবেক স্পিকার শেখ রাজ্জাক আলীসহ সাবেক সংসদ সদস্য ও বিশিষ্ট জনদের মৃত্যুতে সংসদে শোক প্রস্তাব আনা হয়। তাদের আত্মার শান্তি কামনায় নিজ নিজ আসনে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন শেষে মোনাজাত করা হয়। এর আগে সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে আগামী ১০ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অধিবেশন চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অধিবেশন চলবে আট কার্যদিবস। প্রতি কার্যদিবসে বিকাল ৫টায় অধিবেশন শুরু হবে। স্পিকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে কমিটির সদস্য সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ও জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, মইন উদ্দিন খান বাদল এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক উপস্থিত ছিলেন। প্রশ্নোত্তরপর্ব শেষে অনির্ধারিত আলোচনা উত্থাপন করেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। বক্তৃতা শেষে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যদের নিয়ে সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেন রওশন এরশাদ। অন্য সময়ে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললে হইচই করলেও এসময় সরকারি দলের সদস্যরা নিশ্চুপ ছিলেন। বিরোধী দলের ওয়াকআউটের সময় ফ্লোর নিয়ে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বিরোধী দলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, উনি প্রশ্ন করলেন, কিন্তু সরকারের কথা না শুনেই চলে যাচ্ছেন। এটা গণতন্ত্রসম্মত হলো না। রওশন এরশাদ বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির কঠোর সমালোচনা করে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য কমেছে। অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। সাধারণ মানুষ ভেবেছিলো এখন জ্বালানির দাম কমবে। জনজীবনে স্বস্তি ফিরে আসবে। কিন্তু বাস্তবে উল্টো ঘটনা ঘটলো। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হলো। তিনি বলেন, কর্মসংস্থানের অভাব, যানজটসহ নানা কারণে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তারপর বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি জনজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে। বিনিয়োগ, উৎপাদন, যাতায়াত সব ক্ষেত্রে সংকট তৈরি করবে। তিনি বলেন, জনগণ যখন সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাচ্ছে, তখন সংসদীয় কমিটি বলছে মূল্য আরও বাড়ানো উচিত। আরও বাড়ানোর ঘোষণাও দিচ্ছে। তারা স্বস্তির বদলে জনজীবনে অস্বস্তি দিতে চায়। তিনি বলেন, পেট্রোবাংলা ২০ হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে। তারপরও কেন মূল্য বৃদ্ধি? আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্য বিবেচনায় নিয়ে সকল প্রকার জ্বালানির মূল্য দ্রুত কমানোর দাবি জানান তিনি। বিরোধীদলীয় নেতার বক্তব্যের জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়নি বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে। উৎপাদন মূল্যের থেকে কমে বিদ্যুৎ বিক্রি করতে হয়। আর বিদ্যুতের যে মূল্য বেড়েছে তা খুবই সামান্য। ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধিতে নিম্নবিত্ত মানুষের ওপর কোন প্রভাব ফেলবে না। কারণ ৩০০ ইউনিটের বেশি যারা ব্যবহার করেন তাদের জন্য এটা প্রযোজ্য। তিনি আরও বলেন, আজকের বিরোধী দল যখন ক্ষমতায় ছিলো, এমনকি চার দলীয় জোট সরকারের আমলে মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ আসতো। আর এখন মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ যায়। আগামী ৩ বছরের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য কমানোর বিষয়ে তিনি বলেন, এখন দাম কমলেও আগামীতে আন্তর্জাতিক বাজারে যে বাড়বে না তার নিশ্চয়তা নেই। এখন কমিয়ে আগামীতে বাড়লে আমরা কি আবারও বাড়াবো? তিনি বলেন, গ্যাসের মূল্য মাত্র ৩০ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। এটা জনগণের কথা বিবেচনায় নিয়েই করা হয়েছে। সরকারের ভর্তুকি নিয়ে বিপিসি লোন শোধ করা হচ্ছে। তাদের ২৯ হাজার কোটি টাকা লোন আছে। তিনি আরও বলেন, সরকারের লক্ষ্য সকলের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি সরবরাহ। সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে। এক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।