রাজধানীর কূটনীতিকপাড়া গুলশানে দুষ্কৃতকারীদের গুলিতে ইতালির এক নাগরিক নিহত হওয়ার আগে দিয়ে হঠাৎই সেখানকারলাইটপোস্টের বাতি নিভে গিয়েছিল। ঘটনার সময় সেখানে থাকা এক ভিক্ষুক এ তথ্য জানিয়েছেন।
নিহত ব্যক্তির নাম তাভেলা সেজার (৫০)। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে নিরাপত্তাবেষ্টনীতে ঘেরা গুলশান-২-এর ৯০ নম্বর সড়কে জগিং করার সময় অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারীরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়। গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়ার পর তিনি মারা যান।
নিহত তাভেলা সেজার হল্যান্ডভিত্তিক আইসিসিওবিডি (ইন্টারচার্চ কো-অর্ডিনেশন কমিশন ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন) নামে একটি উন্নয়নমূলক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ছিলেন। গুলশান-১ এর ৩০ নম্বর রোডের ১৬ নম্বর বাড়িতে আইসিসিওর অফিস। থাকতেন গুলশান-২ এর ৫৪ নম্বর সড়কের ১১/বি নম্বর বাড়িতে। তবে পুলিশ নিহতের কাছে গুলশানের আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের একটি পরিচয়পত্রও পেয়েছে।
এ দিকে ঘটনার পরপর পুলিশের ভারপ্রাপ্ত আইজি মোকলেসুর রহমান, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। সিআইডি, ডিবি ও র্যাবের ক্রাইমসিন ইউনিট ঘটনাস্থল ঘিরে রাখে। পরে সেখান থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে। এ ছাড়া গুলির সময় কয়েকজন পথচারীর বক্তব্য নিয়েছে পুলিশ।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত আইজি মোকলেসুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আলামত অনুযায়ী এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে মনে হচ্ছে। এটি কোনো ছিনতাইয়ের ঘটনা নয়। কেননা দুষ্কৃতকারীরা তার কাছ থেকে কিছুই নেয়নি। তিনি বলেন, নিহত ব্যক্তি ইতালির নাগরিক বলে প্রাথমিকভাবে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। গুরুত্ব দিয়েই বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, তাভেয়া সেজার সান্ধ্যকালীন জগিং করছিলেন। তিনি ৯০ নম্বর সড়কের ফুটপাথ দিয়ে হাঁটার সময় দুষ্কৃতকারীরা গুলি করে। দুই অজ্ঞাত যুবক তাকে লক্ষ্য করে পরপর কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়। এ সময় রাস্তায় একটি মোটরসাইকেলে এক যুবক অপেক্ষা করছিল। গুলির পর ওই যুবকরা মোটরসাইকেলে পালিয়ে যায়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মোস্তাক আহমেদ বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর ওই ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হন। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানে রাত পৌনে ৮টার দিকে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার বুকে একটি ও পিঠের দিকে দু’টি এবং হাতের কনুইতে গুলির চিহ্নহ্ন রয়েছে। নিহতের কাছে গুলশানের আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের একটি পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে। তবে তিনি আইসিসিও নামে একটি বিদেশী এনজিওর কর্মকর্তা।
ঘটনাস্থলের অবস্থান অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশন থেকে ৬০০ গজ এবং প্রধান সড়ক থেকে ১০০ গজ দূরত্বে। ঘটনার সময় প্রত্যক্ষদর্শী আয়শা নামে এক পঙ্গু ভিক্ষুক জানান, তিনি ১৭ বছর যাবৎ ৯০ নম্বর সড়কের মাথায় (ঘটনাস্থল) ভিক্ষা করেন। অন্যান্য দিনের মতো গতকালও সেখানে ভিক্ষা করছিলেন। সন্ধ্যা হলে সেখানে লাইটপোস্টের বাতি হঠাৎ নিভে যায়। এর কিছুক্ষণ পরই একটি মোটরসাইকেলে তিন যুবক আসে। এদের মধ্যে দু’জন কালো মুখোশ পরা ছিল। অপরজন লাল ও সাদা রঙের টিশার্ট পরা ছিল। মুখোশ পরা দু’জন হঠাৎ একজনকে গুলি করে ওই মোটরসাইকেলে পালিয়ে যায়। এ সময় গুলির শব্দে রাস্তার লোকজন দৌড়ে চলে যায়। এতে ওই ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে যান। পরে হেলাল নামে এক পথচারী তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
ইউনাইটেড হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানান, সন্ধ্যা ৭টার দিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বিদেশী নাগরিককে হাসপাতালে আনা হয়। তার বুকে ও পিঠে তিনটি গুলির চিহ্নহ্নহ্ন ছিল। রাত পৌনে ৮টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
এ দিকে হত্যাকাণ্ডের পর নিহত তাভেলার সহকর্মীরা হাসপাতালে ছুটে যান। তাভেলার কর্মস্থল আইসিসিওবিডির হিউম্যান রিসোর্স (এইচআর) ম্যানেজার আলো রানী ঢালী জানান, তাভেলা সেজার গত মে মাসে ঢাকায় আসেন। তিনি ছিলেন প্রজেক্ট ম্যানেজার। চারটি প্রজেক্টের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। গুলশান-১ এর ৩০ নম্বর রোডের ১৬ নম্বর বাড়িতে আইসিসিওর অফিস। থাকতেন গুলশান-২ এর ৫৪ নম্বর সড়কের ১১/বি নম্বর বাড়িতে বি-৫ নম্বর ফ্যাটে। অফিস শেষে তিনি প্রতিদিন শেষ বিকেলে রাস্তায় জগিং করতেন বলে জানান।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, গুলির ঘটনার পরপর গুলশানের বিভিন্ন এলাকায় স্থাপিত ১০০ সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহের নির্দেশ দেয়া হয়। বিশেষ করে ৯০ নম্বর সড়কের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ছাড়াও ঘটনাস্থলের আশপাশ বিভিন্ন বাড়ির সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহে নামে।
র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ বলেন, গুলির ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। গুলির পর আহত ব্যক্তিকে একজন পথচারী উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। ঘটনাস্থলের আশপাশ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা করা হচ্ছে।