টিভি মিডিয়ার জনপ্রিয় মুখ নাদিয়া। একাধারে নৃত্য ও অভিনয়শিল্পী। দুই ক্ষেত্রেই অভিজ্ঞ তিনি। তবে নাচের চেয়ে অভিনয়েই বছরজুড়ে বেশি ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় নাদিয়াকে। অভিনয়, নাচ ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ে আজকের ‘আলাপন’-এ কথা বলেছেন এই শিল্পী। তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মারুফ কিবরিয়া
এখন কি নিয়ে ব্যস্ত আছেন?
এ মুহুর্তে ধারাবাহিকের কাজই বেশি চলছে। নতুন পাঁচটি নাটকে অভিনয় করছি। এগুলো হলো- এসএ হক অলিকের পরিচালনায় ‘আয়না ঘর’, আল হাজেনের ‘লড়াই’, হুমায়ুন ফরিদের ‘পাগলা হাওয়ার দিন’, সৈয়দ শাকিলের ‘সম্রাট’ ও অঞ্জন আইচের একটি ধারাবাহিক। এগুলো শিগগিরই বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচার হবে।
প্রচার চলছে কোনগুলো?
গত সপ্তাহ থেকে নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুলের পরিচালনায় ‘বাক্সবন্দী’ নাটকটি এনটিভিতে প্রচার শুরু হয়েছে। এছাড়া এটিএন বাংলায় ফজলুর রহমানের ‘জীবনের অলি গলি’ ও সবুর খানের ‘দাগ’ নাটক দুটি প্রচার হচ্ছে। পাশাপাশি ‘কমেডি অ্যাট কলোনি’, ‘পরণ কথা’, ‘গন্তব্য নিরুদ্দেশ’, ‘উত্তর পুরুষ’ ধারাবাহিকগুলো তো চলছেই।
বর্তমান সময়ের নাটক নিয়ে মূল্যায়ন কি?
চ্যানেল সংখ্যা বেড়েছে। সেসঙ্গে কাজের পরিমাণ বেড়েছে। কাজের মান নিয়ে তো সেক্ষেত্রে প্রশ্ন আসবেই। ভাল নাটক যেমন আছে, খারাপ কাজও হচ্ছে। এই অবস্থার মধ্য দিয়েই চলছে। তবে বর্তমান সময়ের নাটক একটু অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করি আমি। অস্থিরতা বলবো এই কারণে যে, অনেক প্রকৃত শিল্পীর কাজ কমে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে অযোগ্য লোকেরা কাজ করতে পারছেন। যে কারণে নানা সমস্যা তৈরি হচ্ছে। আর অনেক সময় শিল্পী নির্বাচনের জন্য নির্মাতার পরিবর্তে এজেন্সি কিংবা চ্যানেলের একটা প্রভাব থাকে। তারা নির্মাতাকে বলে দেন যে, নাটকে কোন কোন শ্ল্পিী কাজ করবেন। অস্থিরতার জায়গা এটাই।
ধারাবাহিক নাটকে ধারাবাহিতা থাকছে না। এ ব্যাপারে আপনার মত কি?
কাজ অনেক বেশি হচ্ছে বলে শিল্পীদের সিডিউল নিয়ে ঝামেলা হয়। যে কারণে গল্প যেভাবে যাওয়ার কথা সেভাবে যায় না। সে সময় যে সব শিল্পী উপস্থিত থাকেন তাদের দিয়েই গল্পটা টেনে লম্বা করার প্রয়োজন হয়। আরেকটা সত্যি কথা- ভাল গল্পের বড় অভাব। আর যারা লিখছেন তারাও অনেক সময় বেশি লিখতে গিয়ে ভালটা দিতে পারছেন না। এছাড়া বিজ্ঞাপনের একটা ঝামেলা তো রয়েছেই। নাটকের মাঝে বিজ্ঞাপন প্রচার শুরু হলে আর শেষ হয় না। কিংবা একটি নাটক কখন শুরু হবে সেই নির্দিষ্ট সময় ঠিক করা থাকে না। সাড়ে নয়টা বললে সাড়ে নয়টায় শুরু হয় না। আমরা অন্যদেশের সিরিয়াল দেখে ঘড়ির সময় মেলাতে পারি। কিন্তু আমাদের দেশে সেটা কখনো সম্ভব নয়। সত্যিকার অর্থে আমরা শিল্পীরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি দর্শক ফেরানোর জন্য। কিন্তু সবমিলিয়ে আসলে হয়ে উঠছে না। তবুও আশাবাদি যে, নাটকে এক সময় সুদিন ফিরে আসবে।
এসব সমস্যার পেছনে অনেকে বাজেট স্বল্পতাকে দায়ী করেন…
বাজেট সমস্যা তো রয়েছেই। তবে বাজেটের দোহাই দিয়ে স্বল্প মূল্যে একটি স্ক্রীপ্ট দাঁড় করিয়ে দেয় অনেকে। এটা একটা সমস্যা। আবার অনেক সময় দেখা যায় রাইটার স্ক্রীপ্ট দিচ্ছেন না। সেক্ষেত্রে নির্মাতারা নিজেরাই গল্পটা লিখে টেনে লম্বা করছেন। ফলে কোয়ালিটি থাকছে না।
নতুন শিল্পীদের কেমন লাগছে?
নতুনদের অনেকে ভাল করছেন। আবার অনেকে তারকাখ্যাতির জন্য কাজ করছেন। আমি মনে করি, যারাই মিডিয়াতে আসবেন অবশ্যই যেন কাজটাকে ভালবাসেন। মাথায় রাখতে হবে এটা আমার ভালবাসা। আর পেশাটার প্রতি সৎ থাকতে হবে। তাহলে নিজেকে ভাল শিল্পী হিসেবে দাঁড় করানো সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি।
নাচের ব্যস্ততা কেমন যাচ্ছে?
এখন তো তেমন কোন কাজ নেই। তবে আসছে শীতে একের পর এক স্টেজ পারফরম্যান্স থাকবে। তখন ব্যস্ততা বেড়ে যাবে।
টিভি চ্যানেলে নাচকে অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে বলে অনেক অভিযোগ। এ বিষয়ে আপনার কি মত?
এ নিয়ে অনেক আগে থেকেই আমি খুব আপসেট। ছোটবেলা থেকে শিখে আসা নাচ। এখন সেটার বেহাল। দর্শক প্রকৃত নাচের শিল্পীদের দেখতে পারছেন না। এখন টিভিতে বিশেষ দিন ছাড়া তেমন নাচের অনুষ্ঠান প্রচার হয় না বললেই চলে। আর একটা সত্যি হচ্ছে, প্রকৃত নাচের শিল্পীরা বঞ্চিত হচ্ছেন।
বিয়ে-সংসার এসব ব্যাপারে নতুন করে কিছু ভাবছেন?
না, এসব বিষয়ে এখন কিছু ভাবছি না। আর সব দায়িত্ব বাবা মায়ের ওপর দিয়ে রেখেছি। নতুন করে কিছু হলে তাদের মাধ্যমেই হবে।