পরজনমে মিলনের আশায় আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন রাজশাহীর প্রেমিক-প্রেমিকা যুগল। গতকাল দপুরে নগরীর চণ্ডীপুরে প্রেমিকা শারমিন খাতুনের রুম থেকে ওই যুগলের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় একটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়। তাতে লিখা ছিল, ‘আমরা দুজন দুজনকে ভালবাসি। কিন্তু আমাদের মিলন হলো না। পরজনমে মিলনের আশায় আমরা চলে গেলাম। আমাদের মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। মৃত্যুর পরে আমাদের দুজনের কবর যেন একসাথে দেয়া হয়’।
বাসার মালিক ও প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, ওরা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বাসার দোতলায় একটি রুম ভাড়া নিয়েছিল। তবে শারমিনের পিতার দাবি, তার মেয়েকে তিনি নিজেই বাসা খুঁজে দিয়েছিলেন । সঙ্গে কেউ থাকতো না। এছাড়া মৃতদেহের পাশ থেকে উদ্ধার হওয়া চিরকুটটি তার মেয়ের হাতের লেখা না। ছেলে বা অন্য কেউ তার মেয়েকে হত্যা করেছে।
এছাড়া আব্দুল মোমিনের বন্ধু ইসলামী ব্যাংক নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থী শাহীন আলম মানবজমিনকে জানান, ‘মোমিন ওই বাড়িরই নিচতলায় ভাড়া থাকতেন। কখনও প্রেমিকার কথা আমাদের কাছে বলেনি।’
নিহত শারমিন (১৯) পবা উপজেলার দামকুড়া শিতলাই এলাকার চাঁন মিয়ার মেয়ে এবং রাজশাহী ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন নার্সিং কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। অন্যদিকে আব্দুল মোমিনের (২২) বাড়ি নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার চকরধিনাথ গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে ও রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল নার্সিং কলেজের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার রাত থেকে তাদের ঘরের দরজা বন্ধ থাকতে দেখা যায়। শারিমন খাতুনের পরিবারের লোকজনও তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। এ অবস্থায় সকাল ৯টার দিকে কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে স্থানীয়রা ঘরের পেছনের জানালা দিয়ে দেখতে পান ঘরের মধ্যে মোমিনের লাশ ঝুলে আছে। আর শারমিনের লাশ জানালার পাশে ঘরের এক কোনায় অর্ধেকাংশ খাড়া হয়ে এবং অর্ধেকাংশ মেঝেতে পড়ে আছে।
বাড়ি মালিক সোনালী খাতুন মানবজমিনকে জানান, ‘দুই মাস আগে স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বাড়ির দোতলায় একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে থাকতো তারা। সেভাবে কোন খোঁজ-খবর নেয়া হয়নি। তবে মেয়ের বাবা মাঝে মাঝে আসতেন। গত শুক্রবার বিকালে তিনি এসেছিলেন বলে এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানতে পেরেছি।’
অন্যদিকে শারমিনের পিতা দাবি করেছেন, ‘মেয়েকে তিনি নিজেই বাসা খুঁজে দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালেও এসে হাত খরচের টাকা দিয়ে যান। আজকে (শনিবার) রুম ভাড়ার টাকা দিতে এসে দেখেন ঘরের এক কোনায় মেয়ের লাশ পড়ে আছে আর ছেলের লাশ ঘরের মাঝে ঝুলছে।’ তারা একসঙ্গে থাকতো না। ওই ছেলের কথাও তিনি কখনো শুনেননি।
তিনি আরও বলেন, ‘মৃতদেহের পাশ থেকে উদ্ধার হওয়া চিরকুট তার মেয়ের হাতের লেখা না। ছেলে বা অন্য কেউ তাকে হত্যা করেছে। ওই চিরকুটটি তার ছোট শ্যালক আতিকুল শারমিনের লেখার সাথে মিলিয়ে দেখেছে।’ তিনি নিজে অশিক্ষিত হলেও মেয়েকে শিক্ষিত করে স্বাবলম্বী করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সে স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। মেয়ের লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে তাকে।
রাজপাড়া থানার উপ-পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, প্রাথমিকভাবে দুজনেই প্রেমঘটিত কারণে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পেলেই বিস্তারিত জানা যাবে।
রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান বলেন, ঘটনাস্থল থেকে একটি চিরকুট এবং ওই কক্ষের ভেতর থেকে আলামত হিসেবে একটি সিরিঞ্জ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে চিরকুটটি কার হাতের লেখা তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে শারমিনকে হত্যার পর তার প্রেমিক মোমিন আত্মহত্যা করতে পারে- এমন ধারণা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এরই মধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় তথ্য ও আলামত সংগ্রহ করেছে সিআইডি ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন। লাশের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে এলে নিশ্চিত হওয়া যাবে কিভাবে তারা মারা গেছে।