চেন্নাই এক্সপ্রেস। বিখ্যাত ছবির নাম। ছবিটা দেখার পর শুধু চিন্তা করতাম, যদি একবার যেতে পারতাম। পাহাড়, সমুদ্রের রাজ্যে! কিন্তু স্বপ্নটা যে এমনভাবে সত্যি হয়ে যাবে, এখনও ভাবলে অবাক হয়ে যাই।
গত ২রা সেপ্টেম্বর হতে ৩রা অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের ৭৬ জন শিক্ষার্থী, আমাদের দুইজন প্রফেসর সহ তামিলনাড়ুর চেন্নাই এবং নামাক্কলে ইন্টার্নশিপের অংশ হিসেবে অবস্থান করি। চেন্নাই এর মাদ্রাস ভেটেরিনারি কলেজে ১৫ দিন এবং নামাক্কল ভেটেরিনারি কলেজে ১৫ দিন। চেন্নাইয়ে পোষা প্রাণিদের (কুকুর, বিড়াল, পাখি) চিকিৎসা এবং তাদের ম্যানেজমেন্ট দেখে সত্যি অনেক কিছু হাতে কলমে শিখেছি। এই এক মাসে পুরোদস্তর ডাক্তারিবিদ্যা রপ্ত করেছি।
শুধু যে ইন্টার্নি নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, তা নয়! ইন্টার্নির ফাঁকেফাঁকে যতটুকু সময় পেয়েছি চেন্নাই এর অলিগলি সব চক্কর দিয়েছি। মেরিনা বীচ, জহরলাল নেহেরু স্টেডিয়াম, চিতাম্বারাম ক্রিকেট স্টেডিয়াম, আরিগনার আন্না জুয়োলজিক্যাল পার্ক (এশিয়ার মধ্যে বৃহত্তম),সমুদ্রের পাড় ঘেঁসে seashore Temple, পুরাকীর্তির মধ্যে Five rathas। চেন্নাই থেকে ৬০০ কিলোমিটার দূরে নামাক্কল জেলায় (পাহাড়ে ঘেরা একটি শহর) নামাক্কল ফোর্ট (টিপু সুলতান ফোর্ট নামেও পরিচিত), কয়েকটি বিখ্যাত মন্দির, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, Anjayana Temple, আর হ্যাঁ, Yercaud এর কথা তো বলাই হয় নি, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪০০০ ফুট ১৬০০মিটার উপরে, মেঘ আর পাহাড়ের মিলনভূমি।
ময়ূর আর সাপ আমাদের নিত্যসঙ্গী ছিলো নামাক্কল ভেটেরিনারি কলেজে। কলেজের হোস্টেলের পিছনে পাহাড়ে দলবেঁধে ট্রাকিং করেছি আমরা। এভাবে ঘুরতে ঘুরতে আর ইন্টার্নির ব্যস্ত সিডিউল এর মাঝে কখন যে দিনগুলো ফুরিয়ে গেল, টেরই পেলাম না। তারপর ফিরে আসার সময়। চেন্নাই থেকে Chennai mail এ করে (যদিও চেন্নাই এক্সপ্রেসে চড়া হয় নি) ২ রাত ১দিন ট্রেনের মধ্যে জার্নি করে হাওড়ায় আসলাম ৫ তারিখ। তারপর ৬ তারিখ কলকাতার হাওড়া টু ঢাকা। সবচেয়ে মজা পেয়েছি ট্রেন জার্নি করে ভারতে। আর হ্যাঁ, তামিল ভাষাটাও রপ্ত করেছি কিছুটা।
৬ তারিখ রাতে আমরা ৭৬ জন নবীণ ভেটেরিনারিয়ান সুস্থভাবে ঢাকায় বাস থেকে নামি। শিক্ষা জীবনের ছোট অধ্যায়ে নতুন একটি পালক যুক্ত হলো আমাদের।