বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হয়ে বিদেশে বসে গুপ্তহত্যা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়া দেশের ভাবমূর্তি নষ্টের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত জনসভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। এতে দলের কেন্দ্রীয়, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেন। বক্তব্যের শুরুতে পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ নিহতদের এবং ৩রা নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মমভাবে নিহত জাতীয় চার নেতাকে গভীরভাবে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে জনসভায় শেখ হাসিনা বলেন, দেশে মানুষ হত্যা করে যখন পারলেন না, তখন তিনি নিজেই বের হলেন, আদালতে হাজির হয়ে ঘরে ফিরে গেলেন। রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হয়ে বিদেশে গিয়ে সেখানে ষড়যন্ত্র করছেন। বিদেশীদের হত্যা করে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চেয়েছেন। এখন তিনি গুপ্তহত্যায় নেমেছেন। এ গুপ্তহত্যায় আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী, এমনকি লেখক, প্রকাশক কেউ বাদ যাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুনিদের পরিচয় কী? যারা ধরা পড়ছে, দেখা যাচ্ছে তারা ছাত্রশিবির অথবা বিএনপি-ছাত্রদল করতো।
খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দেশের মানুষ যখন শান্তিতে থাকে তখন একজনের মনে অশান্তি শুরু হয়। তিনি কে আপনারা বলেন? উপস্থিত নেতাকর্মীরা তখন ‘খালেদা খালেদা’ বলে জবাব দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ৯৩ দিন নিজেই নিজের অফিসে বসে থাকলেন। সরকার উৎখাত না করে তিনি নাকি ঘরে ফিরবেন না। তার আন্দোলন কী? হানাদার পাকিস্তানিদের মতো আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করলেন। ছোট্ট দুধের শিশু, কলেজছাত্রী, বাসের ড্রাইভার, হেলপার, সাধারণ মানুষ তারা কেউই রেহাই পায়নি। তিনি বলেন, এতকিছু করেও নির্বাচনে ৪০ ভাগ ভোট পড়লো। দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার এ মানুষ খুন করার রাজনীতি প্রতিহত করল। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনি অবরোধ প্রত্যাহার করেননি, তার অবরোধ চলছেই। কিন্তু মানুষ তাতে সাড়া দেয়নি। মানুষকে কষ্ট দিয়েই যেন তার যত শান্তি।
শেখ হাসিনা বলেন, কোন কোন মহল প্রচার চালাচ্ছে এদেশে আইএস আছে, সন্ত্রাস আছে। বিএনপিই এদেশে সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সেই সন্ত্রাস কঠোর হস্তে দমন করেছে।
কেউ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করলে তাকে রেহাই দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্যই এ গুপ্তহত্যা, খুন। তবে যারাই করুকনা কেন, এদের মুরব্বি বড় ভাই কারা? এদের খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনা হবে। আমি সাবধান করে দিতে চাই জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের কোন স্থান বাংলাদেশের মাটিতে হবে না। দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করা যাবে না। বাংলাদেশকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। উন্নয়নের পালে যদি কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চায় তাহলে দেশের মানুষ তার জবাব দেবে। রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা পেয়েছি। এই উন্নয়নের ধারা কেউ রুখতে পারবে না।
জাতীয় চার নেতার স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ই আগস্টের কিছুদিন পরেই জেলে চার নেতাকে হত্যা করা হয়। এর একটাই লক্ষ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধের চিহ্ন, আদর্শকে মুছে ফেলা। পঁচাত্তরের পর শুরু হয় হত্যা, ক্যু। যাদের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল, তাদেরই নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। কিন্তু খুনিদের বিচার করা হয়নি। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে ১৫ই আগস্ট খুনিদের রক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। তাদের পুরস্কৃত করা হয়।
তিনি বলেন, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের জিয়া শুধু ক্ষমাই করেননি। তাদের পুনর্বাসনও করেছিলেন। তাদেরকে রাজনীতি করার অধিকার দিয়েছিলেন। এদেরকে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী বানিয়ে স্বাধীনতার চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছিল। এই স্বাধীন দেশের পতাকা একাত্তরের খুনিদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন তার স্ত্রী। এরা স্বাধীনতা, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। দেশের মানুষ অশিক্ষিত থাক, দরিদ্র থাকবে, ধুঁকে ধুঁকে মরবে এটাই তারা চায়।
সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে পায় পুরস্কার আর বিএনপি পায় তিরস্কার। দেশের মানুষ আর তিরস্কার পেতে চায় না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। তাই দেশকে এগিয়ে নিতে ঐক্যবদ্ধভাবে সকলকে কাজ করতে হবে।
সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, যে কারণে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল, একই কারণে জাতীয় চার নেতাকেও হত্যা করা হয়। তিনি বলেন, আমরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আছি। কিন্তু অনেক সময় ক্ষমতায় থাকলে আমরা অলস হয়ে যাই। ষড়যন্ত্র এখনও চলছে। তাই সবসময় আমরা যেন চোখ কান খোলা রাখি। সৈয়দ আশরাফ বলেন, শেখ হাসিনা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে অনেক কাজ করছেন। তার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে।
দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, একাত্তরের অপশক্তি দেশকে পাকিস্তান বানাতে চায়। আর তাদের মুখপাত্র হচ্ছেন খালেদা জিয়া। অপশক্তি কখনই চায়নি বাংলাদেশ এগিয়ে যাক। তিনি বলেন, সকল ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, যখন আমরা দেশ গড়ার কাজে ব্যস্ত তখন খালেদা জিয়া একাত্তরের পরাজিত শক্তি নিজামী, আলবদর, আলশামস এদের প্রতিনিধিত্ব করছেন। মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের কঠোর সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের এই নেত্রী বলেন, তারা মুক্তিযুদ্ধকে ‘সিভিল ওয়ার’ বলেছিল।
আপনারা (অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল) উজাইছেন। কাছিমের মতো গলা বাইর করছেন। অ্যামনেস্টির কথায় বাংলাদেশ উঠবেওনা বসবেওনা।
প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেন, একজন নেত্রী বিদেশে বসে ষড়যন্ত্র করছেন। আপনার মেকাপের নিচে বাংলার জনগণ আপনার চেহারা চিনে ফেলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ বিভিন্ন পরাশক্তি রাষ্ট্রের উদ্দেশে তিনি বলেন, যারা গণতন্ত্র, উন্নয়নের কথা বলে তারাই বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়েছে।
প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, শেখ হাসিনা যতদিন আছেন, ততদিন বাংলাদেশে অপশক্তি ও অসামপ্রদায়িক শক্তি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না।
দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ, সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছার, যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল, ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইন প্রমুখ।