নন্দিত অভিনেত্রী বিপাশা হায়াত। দেশের মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অঙ্গনকে দক্ষ অভিনয়শৈলী দিয়ে যে কজন আলোকিত করেছেন তাদেরই একজন তিনি। প্রায় তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে শিল্পচর্চার সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন বিপাশা হায়াত। একজন নাট্যকার ও নাট্য নির্মাতা হিসেবেও তিনি প্রশংসিত হয়েছেন। তবে আগের মতো আর এখন তাকে খুব বেশি অভিনয়ে দেখা যায় না। বিপাশা ব্যস্ত তার সংসার নিয়ে। অবশ্য আঁকাআঁকির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছেন তিনি। সমপ্রতি এ তারকা প্রাণ ডেইরি লিমিটেডের পণ্য প্রাণ পাউডার মিল্কের বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হয়েছেন। এ বিজ্ঞাপনের চুক্তিস্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এসেছিলেন প্রাণ কার্যালয়ে। সেখানেই আলাপকালে সামপ্রতিক ব্যস্ততা ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ে কথা বলেন বিপাশা। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মারুফ কিবরিয়া
দীর্ঘদিন পর কোন বিজ্ঞাপনে কাজ করছেন। এ প্রসঙ্গে কিছু বলুন।
প্রাণ পাউডার মিল্কের বিজ্ঞাপনটির কাজ সম্পর্কে আগেই অবগত হয়েছি। বেশ কয়েকবার এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা হয়। আমার কাছে কাজটি ভালো লাগে। বিশেষত এটি একটি বড় বাজেটের বিজ্ঞাপন। আর বড় বাজেটের যেকোন কাজের মানই ভালো হয়। তাই সবদিক বিবেচনা করে বিজ্ঞাপনচিত্রটিতে কাজ করতে সম্মত হয়েছি। এটি নির্মাণ করবেন নাফিস রেজা। এখানে আমার চিত্রাঙ্কন এবং মাতৃত্বের গুণকে ফুটিয়ে তোলা হবে। যার গল্প হবে, একজন মা তার সন্তানের প্রতি যথেষ্ট যত্নশীল। পাশাপাশি তিনি তার কাজেও সমান গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। ছেলেমেয়েদের খাবারের আবদার পূরণেও তিনি সব সময় সেরাটাই দিতে সচেষ্ট। টিভিসির গল্পটি আমার কাছে ভালো লেগেছে। আশা করছি দর্শকদেরও ভালো লাগবে।
একসময় পর্দায় আপনাকে নিয়মিত দেখা গেছে। এখন নিয়মিত নন কেন?
অভিনয় তো করছি। তবে সেটা মাঝে মধ্যে। আসলে এটা নির্ভর করে ভালোলাগার ওপর। গল্প ও চরিত্র পছন্দ হলে অভিনয় করি। তাছাড়া আমি সময় করে উঠতে পারি না এটাও একটা বড় কারণ। সংসার-সন্তান গুছাতে হয়। আর বর্তমানে আমি ছবি আঁকাতেই বেশি মনোযোগী।
নাটক নির্মাণ ও চিত্রনাট্য লেখা- সেগুলোর কি অবস্থা?
সেগুলোও চলছে। আমার কাছে কোন কিছুই ধরাবাঁধার ব্যাপার নয় যে, ইচ্ছে না হলেও করতে হবে। যখন মনে হবে লিখবার মতো কোন গল্প পেয়েছি, কিংবা এই গল্পটা নির্মাণ করা উচিত তখন করবো।
আপনি তো চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছিলেন। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অনেক প্রশংসা পেয়েছেন। বড় পর্দায় নিয়মিত হতে ইচ্ছা হয়নি?
অবশ্যই হয়েছে। অনেক প্রস্তাবও পাই নানা সময়ে। কিন্তু নিজেকে সেগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারি না। ‘আগুনের পরশমনি’ ও ‘জয়যাত্রা’ ছবিতে কাজ করেছি আমি। এ ধরনের ছবি আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে কয়টা হয়? আমি এখনও চলচ্চিত্রে কাজ করতে প্রস্তুত যদি সেটা আরেকটা ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘আগুনের পরশমনি’ অথবা ‘জয়যাত্রা’ হয়। আমি অভিনেত্রী, অভিনয়ে আমার আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু আমি যেভাবে কাজ শিখে ও করে নিজেকে আজ এখানে নিয়ে এসেছি আমার কাজের পরিবেশ ও চরিত্রটাও তো তেমনি হওয়া চাই।
এখনকার নাটক নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?
এখনকার নাটকে পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ কম হচ্ছে। ভালো কাজ যেমন হচ্ছে তেমনি খারাপটাও হচ্ছে। তবে মন্দের ভিড়ে ভালোর সংখ্যাটা হারিয়ে যাচ্ছে। ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক কাজ হচ্ছে। অনেক নতুন নির্মাতা শিল্পী কাজ করছেন। আসলে এসব নিয়ে বললে সমাধানটা আসবে না। সবাই মিলে কাজ করতে হবে। তাহলে ভালো কিছু প্রত্যাশা করা যাবে।
আপনার আঁকা ছবি নিয়ে নতুন কোন প্রদর্শনীর কথা ভাবছেন?
আসলে একটি একক প্রদর্শনীর জন্য অনেক দিন ধরেই প্রস্তুতি নিতে হয়। সেটি পাঁচ বছরেও হতে পারে, দশ বছরেও হতে পারে। কেউ আবার এক-দুই বছরেই করে ফেলতে পারেন। গেল আগস্টে আমার প্রথম প্রদর্শনী ‘স্মৃতির রাজ্যে’ অনেক সময় নিয়ে করেছিলাম। সবাই খুব প্রশংসা করেছেন। আমিও উৎসাহ পেয়েছি। ছবি আঁকছি। বিভিন্ন যৌথ প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছি। পৃথিবীর যেখানেই বড় বড় শিল্পীদের প্রদর্শনীর খবর পাই যাওয়ার চেষ্টা করি। অনেক কিছু শিখা যায়। সব মিলিয়েই নিজেকে তৈরি করছি। আরও একটি একক প্রদর্শনী করতে চাই। হয়তো সেটা দুবছর কিংবা পাঁচ বছর পর।
নতুন যারা মিডিয়ায় কাজ করছেন তাদের কেমন লাগছে?
প্রচুর নতুন মুখ আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছে। এদের বেশিরভাগই ভালো কাজ করছে। অনেক নতুন নির্মাতাও এসেছেন যাদের নির্মাণের বিষয় ও ধরন আমার ভালো লাগে। তবে অনেকের মধ্যেই জানার কমতি আছে, জানার আগ্রহটাও কম। এটা ঠিক নয়। আমরা যারা একসময় প্রচুর কাজ করেছি তারা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো থিয়েটার স্কুল থেকে অভিনয় শিখে এসেছি। যারা নির্মাণ করতেন তারাও ছিলেন অনেক জানা শোনা মানুষ। এখন থিয়েটারের কর্মীরা শোবিজে মূল্যায়ন পাচ্ছেন না। কারণ শিল্প বাদ দিয়ে এখন ব্যবসাটাই প্রাধান্য পাচ্ছে। তাই জনপ্রিয়তার জন্য মানহীন নির্মাণ বাড়ছে। যে যাই করুক সে যেন সেটা ভালোভাবে রপ্ত করে আসে। ব্যবসা আগেও ছিল, কিন্তু শিল্প চর্চাকে সামনে রাখতে হবে। ভালো নির্মাণ ও অভিনয়ের পাশাপাশি শিল্পীর আচরণ, জীবনবোধও শিল্প চর্চার বিষয়।
ব্যক্তিজীবন কেমন যাচ্ছে?
আলহামদুল্লিাহ। স্বামী, ছেলে-মেয়ে নিয়ে খুব ভালো আছি। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।