নান্দনিকতার দিক থেকে এককভাবে সেরা ইনিংস খুঁজে বের করা যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। একই সাথে, টেস্ট ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া ইনিংসের তালিকাটাও বেশ লম্বা। আর সেই লম্বা তালিকাটাকে ছোট করে এনেছে ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ইএসপিএন ক্রিকইনফো। চলুন জেনে নেয়া যাক সেই সব ইনিংসের কথা…
৩৭৫, ব্রায়ান লারা (ওয়েস্ট ইন্ডিজ), প্রতিপক্ষ – ইংল্যান্ড, (১৯৯৩-৯৪)
টেস্ট ক্রিকেটে তার মনে রাখার মতো ইনিংসের অভাব নেই। এসব ইনিংসের মধ্যে তার ১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করা ৩৭৫ রানের ইনিংসটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই ম্যাচে গ্যারি সোবার্সের করা ৩৬৮ রানের সর্বোচ্চ রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছিলেন ব্রায়ান লারা। টানা দুইদিন ব্যাটিং করে অ্যাঙ্গুস ফ্রেজার, অ্যান্ডি ক্যাডিক ও ফিল টাফনেলের মতো বোলারের ঘাম ঝড়িয়েছেন।
১০০*, কিম হিউজ (অস্ট্রেলিয়া), প্রতিপক্ষ – ওয়েস্ট ইন্ডিজ (১৯৮১-৮২)
কিমের হিউজের জীবনের সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা ছিল ১৯৮১ সালে অ্যাশেজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে যাওয়া। এর পরপরই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অধিনায়কের পদ থেকে সরে দাড়ান তিনি। কিন্তু, তার বিদায়টা আরও সুখকর হতে পারতো। তার সময়ে ব্যাটসম্যান হিসেবে তার অবস্থান ছিল সেরাদের তালিকায়। আর সে সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস লাইন আপ ছিল সর্বকালের অন্যতম ‘ভয়ঙ্কর’। সেই মাইকেল হোল্ডিং, অ্যান্ডি রবার্ট, জোয়েল গার্নার এবং কলিন ক্রফটের মতো বোলারদের মুখোমুখি হওয়ার মতো বুকে বল নিয়েই মাঠে নামতেন কিম। প্রথম ইনিংসে তার ১০০ রানের অপরাজিত ইনিংস সত্ত্বেও অস্ট্রেলিয়া করেছিল মোটে ১৯৮ রান। তারপরও জিতে যায় অস্ট্রেলিয়াই। আর ওই এক টেস্ট জিতেই সিরিজটা চলে যায় অজিদের পকেটে।
১৩২, আজহার মাহমুদ (পাকিস্তান), প্রতিপক্ষ – দক্ষিণ আফ্রিকা (১৯৯৭-৯৮)
১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একটি টেস্ট আজহার মেহমুদের ক্যারিয়ারে সব সময়ই স্মরনীয় হয়ে থাকবে। সেই ম্যাচে তার করা ১৩২ রান ম্যাচ জেতায় পাকিস্তানকে। ৮৯ রানে পাকিস্তান যখন পাঁচ উইকেট হারায় তখন আজহার মাহমুদ হাল ধরেছিলেন দলের। বোলিংয়ে অ্যালান ডোনাল্ড ও শন পোলকের সাথে ছিলেন ফেইন ডি ভিলিয়ার্স ও ল্যান্স ক্লুজনারের মতো বোলার। তাদের সেই বোলিং লাইন আপ ভেঙ্গে দিয়ে মেহমুদ সেদিন তার ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছিলেন। তার রানের উপর ভর করে সে ম্যাচে পাকিস্তান ২৯ রানের জয় পায়।
১৮৮, ক্লেমেন্ট হিল (অস্ট্রেলিয়া), প্রতিপক্ষ – ইংল্যান্ড (১৮৯৭-৯৮)
ক্লেম হিল জাতীয় পর্যায়ে দারুন ক্রিকেট খেলে জাতীয় দলে এসেছিলেন। ১৮৯৭-৯৮ সালে মেলবোর্নে ইংল্যান্ডের সাথে এক ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইন আপ ভেঙ্গে পড়লো। টম রিচার্ডসন, জেটি হেয়ার্ন ৫৭ রানে নিয়ে নেন ছয় উইকেট। সে অবস্থা থেকে তার ১৮৮ রানের দারুণ এক ইনিংস অস্ট্রেলিয়াকে ম্যাচ জেতায়। সম্ভবত অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ডের মধ্যে সপ্তম উইকেটে ১৬৫ রান সবচেয়ে সুন্দর পার্টনারশিপ ছিল, যা ম্যাচ ও অ্যাশেজ জিততে সাহায্য করেছিল।
২৮১, ভিভিএস লক্ষণ (ভারত), প্রতিপক্ষ – অস্ট্রেলিয়া (২০০০-২০০১)
টানা ১৬ টেস্ট জিতে অস্ট্রেলিয়া তখন পুরো ক্রিকেট বিশ্বকে স্তম্ভিত করা দিয়েছে। ২০০০ সালের সে ম্যাচে জিতে গেলে অস্ট্রেলিয়ার ১৭ ম্যাচ জেতা হতো। ভারত তখন ফলোঅনের সামনে দাঁড়িয়ে, উইকেটে ভিভিএস লক্ষণের সাথে রাহুল দ্রাবিড় এলেন। বাকিটা ইতিহাস; চার উইকেটে ২৩২ রান থেকে শুরু করেছিলেন। ২৮১ রান করে লক্ষণ যখন আউট হলেন দলীয় রান তখন ৬০৮! ৩৭৬ রানের অবিস্মরনীয় এক জুটি গড়ে ততক্ষণে ইডেন গার্ডেনে অজিদের ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছেন লক্ষণ-দ্রাবিড় (১৮০)।
বাকিটুকু তো সবারই জানা। চতুর্থ উইকেটে ভারতের দেয়া ৩৮৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা অস্ট্রেলিয়া; অত:পর হরভজন সিংয়ের স্পিন-ঘুর্ণির সামনে তাসের কেল্লার মত ভেঙে পড়া – সবই তো একেকটা বিস্ময়।