বাংলাদেশসহ জলবায়ু পরিবর্তনের বড় ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে বাঁচাতে আসন্ন প্যারিস সম্মেলনে ‘আইনগত বাধ্যবাধকতাসহ চুক্তি’র তাগিদ দিয়েছে ঢাকা। পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক জানিয়েছেন- চলতি মাসের শেষে ফ্রান্সে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২১) বাংলাদেশ তার বক্তব্য তুলে ধরতে বেশ জোরালো প্রস্তুতি নিচ্ছে। জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক চুক্তিতে যেন ‘বাস্তুচ্যুত ও অভিবাসিত মানুষের অধিকার নিশ্চিত’ করা হয় সেই বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে ঢাকা। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের ক্ষতি নিয়ে আলোকচিত্রসহ একটি বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে পররাষ্ট্র সচিবসহ বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা এসব কথা বলেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় কোস্ট ট্রাস্ট বাংলাদেশ ও ইক্যুইটি বিডি প্রকাশনা উৎসবের আয়োজন করে। সেখানে বক্তারা একটি বিষয়ে অভিন্ন অবস্থান ব্যক্ত করেন তা হলো- এবারের সম্মেলনে কার্যকর একটি চুক্তি না হলে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনেক বড় ঝুঁকিতে পড়বে। আলোচনায় ওঠে আসে- কেবল খাতাকলমে চুক্তি হলে কারোই কোন লাভ হবে না। চুক্তিটি সই হওয়া এবং তা বাস্তবায়নে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে বাধ্য করার তাগিদ দিয়ে বক্তারা বলেন, যদি তা না করা যায় তাহলে ওই চুক্তি বিশ্ব জলবায়ু মোকাবিলায় কোন ভূমিকা রাখতে পারবে না। পররাষ্ট্র সচিব জানান, বাংলাদেশ বরাবরই এ ইস্যুতে সোচ্চার রয়েছে। আগামী বছর এ বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সেখানে বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। জলবায়ু অভিবাসন বিষয়ে জাতিসংঘের যে কমিটি রয়েছে, বাংলাদেশ ও জার্মানি তার কো-চেয়ার। তবে বাংলাদেশ সরকার শুধু একা নয়, নাগরিক সমাজকেও এ কাজে যুক্ত করার পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রকাশনা অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে পল্লীকর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদ বলেন, শিল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলো যদি তাদের কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ না কমায়, তাহলে শুধু বাংলাদেশের মতো দেশগুলোই ডুববে না, উন্নত দেশগুলোকেও ডুবতে হবে। সারা পৃথিবীতে মস্ত বড় সংকট দেখা দেবে। তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক তহবিল গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড থেকে ঋণ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এমন কথা ছিল না। কথা ছিল, জলবায়ু তহবিল অনুদান হিসেবে দেয়া হবে। এ বিষয়গুলোকেও প্যারিস সম্মেলনে তুলে ধরতে হবে। অনুষ্ঠানে জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, প্যারিস সম্মেলনে যাওয়া বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করা হচ্ছে না। এতে বাংলাদেশ দল দুর্বল হয়ে পড়বে। কেননা, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এর সঙ্গে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা যুক্ত ছিলেন। অপর জলবায়ু বিশেষজ্ঞ জিয়াউল হক মুক্তা বলেন, প্যারিসে যে চুক্তিটি হবে তা এমনভাবে হতে হবে যে, কোন রাষ্ট্র যদি এই চুক্তি না মানে তাহলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ থাকবে। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন, জলবায়ু বিশেষজ্ঞ আতিক রহমান ও বইটির প্রধান আলোকচিত্রী দীন মোহাম্মদ শিবলী প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।