মিয়ানমারে ২৫ বছরের প্রথম জাতীয় নির্বাচনে বড় ধরণের জয়ের পথে রয়েছে বিরোধী দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)। দলটির মুখপাত্র বলেছেন, অনানুষ্ঠানিক ফলাফল অনুযায়ী, তারা অন্তত ৭০ শতাংশ আসনে জয় পেয়েছেন। দলের নেতা অং সান সু চি বলেন, আমার মনে হয়, ফলাফল কি হতে পারে, তার ধারণা সবাই পেয়ে গেছেন। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত ১৬০টি আসনের ফলাফল অনুযায়ী, ১৪৫টিতেই জয় পেয়েছে বিরোধী দল এনএলডি। অধিকতর ক্ষমতাস¤পন্ন পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের ৫৪টি আসনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৮টিতেই জিতেছে এনএলডি। ক্ষমতাসীন ইউনিয়ন সলিডারিটি ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) জিতেছে মাত্র ৩টি আসনে। এ খবর দিয়েছে বিবিসি ও আল জাজিরা। সামরিক বাহিনী সমর্থিত ইউএসডিপি ২০১১ সাল থেকে ক্ষমতায় রয়েছে। এর আগে মিয়ানমার সরাসরি সেনাবাহিনী শাসন করতো। এনএলডি বলছে, ইয়াঙ্গুনের ৪৫টি আসনের মধ্যে ৪৪টিতেই জয় পেয়েছে তারা। এছাড়া জাতীয়ভাবে ৭০ শতাংশ আসনই তাদের কবজায়। কিন্তু দলটির এ দাবি এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। মিয়ানমারের দুই কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্টের ৪৯৮টি আসনের জন্য ৯০টি দলের ৬ হাজারেরও বেশি প্রার্থী অংশ নিয়েছেন।
এনএলডি দলের মুখপাত্র উইন তেইন বলেন, তার দল কিছু প্রমাণ সংগ্রহ করেছে, যাতে দেখা যায় কর্তৃপক্ষ কিছু কাজ করেছে যা নির্বাচনী বিধির লঙ্ঘণ। তবে ইউএসডিপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ইউ হতায় উ বিবিসি বার্মিজকে বলেন, এনএলডির কাছে তার নিজেরই হিনথাডা আসনে তিনি হেরেছেন। তার এ মন্তব্যকেই নির্বাচনী ফলাফলের গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বলে মনে করা হচ্ছে। ইউ হতায় বলেন, আমরা কেন হেরেছি, সে কারণ অনুসন্ধান করে বের করতে হবে আমাদের। কিন্তু আমরা এখনও কোনো পর্যবেক্ষণ ব্যতিত ফলাফল গ্রহণ করছি না। আমরা এখনও সঠিক খবর জানি না। এর আগে ইয়াঙ্গুনে এনএলডি সদর দপ্তরের বাইরে বিশাল জনসমাগমে ভাষণ দেন সু চি। তিনি সকলকে ধৈর্য্য ধারণ করতে বলেন। প্রসঙ্গত, পার্লামেন্টের চার ভাগের এক ভাগ আসনই সেনাবাহিনীর জন্য বরাদ্দকৃত। তাই সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে হলে দুই-তৃতীয়াংশ আসনেই জিততে হবে এনএলডির। আর ৭০ শতাংশ আসনে জয়ের ব্যাপারে দলটির দাবি যদি সত্যি হয়, তবে সে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জিত হয়ে গেছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, শহুরে এলাকায় জনপ্রিয় দলটি যদি প্রত্যন্ত এলাকায়ও এভাবে জয় না পেত, তবে এনএলডির ক্ষমতাহরণ অসম্ভব ছিল। কারণ প্রত্যন্ত এলাকায় বিভিন্ন আঞ্চলিক দলই সাধারণত জয় পায়। আবার এ নির্বাচনে এনএলডি জিতলেও সু চি প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। কারণ, পূর্বের সামরিক সরকারের সংশোধনকৃত সংবিধান অনুযায়ী, যারা বিদেশী নাগরিককে বিয়ে করেছেন তারা প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। সু চি’র পরলোকগত স্বামী ছিলেন বৃটিশ নাগরিক, তার দুই ছেলেও বৃটিশ। তবে নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে তার দল থেকেই কেউ প্রেসিডেন্ট হবেন। সম্প্রতি সু চি বলেছেন, তার দল জিতলে তিনি ‘প্রেসিডেন্টের চেয়েও ওপরে থাকবেন’।