দলে ফিরেই মান রাখলেন ইমরুল কায়েস। কেবল নিজের নয়, মান বেঁচেছে বাংলাদেশ দলেরও। কেউ বড় ইনিংস করতে না পারলেও বাংলাদেশ দলের সংগ্রহ প্রায় আড়াই শ’ ছুঁই ছুঁই। ইমরুলের অবদান ৭৬। ইনিংসের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সর্বোচ্চ রান যোগ করলে দাঁড়ায় ৭৪। দুই বন্ধু সাব্বির ও নাসির পিঠাপিঠি নেমে করেন যথাক্রমে ৩৩ ও ৪১। ৯ উইকেটে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৪১। সাকিব আল হাসানের হঠাৎ চলে যাওয়াতেই কপাল খোলে ইমরুলের। অবশ্য তার আগেই নির্বাচকরা ইমরুলকে এই সিরিজের জন্য বিচেনায় আনেন সৌম্য সরকারের জায়গায়। নিজের প্রথম সন্তান জন্মের সময় স্ত্রীর পাশে থাকার জন্য পরশু রাতেই যুক্তরাষ্ট্রের পথে রওনা দেন সাকিব। আর হাতে চোট পাওয়ায় দলের বাইরে চলে যান সৌম্য। আর এতেই দুয়ার খুলে যায় মেহেরপুরের এই সম্ভাবনাময় ওপেনারের।
ওয়ানডেতে প্রায় অপাঙ্ক্তেয়ই হয়ে পড়েছিলেন বাঁহাতি এ ব্যাটসম্যান। টানা কয়েকটি খেলায় দু’অঙ্কের কোঠায় পৌঁছতে না পারায় নির্বাচকরা তাকে বাদ দিতে বাধ্য হন। গত বছর মার্চের শুরুতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫৯ রান করার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলেন ইমরুল। তিন খেলায় করেন ৯, ১ ও ১। দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম তিন খেলায় থাকেন একাদশের বাইরে। চতুর্থ খেলায় সুযোগ মিললেও করেন মাত্র ৫ রান। ফলে বিশ্বকাপের দলে আর জায়গাই হয়নি তার। তারপরও তার প্রতি নির্বাচকদের চোখ ও মন দু’টিই ছিল। যে কারণে, চোট পাওয়ায় যখন এনামুল হক বিজয়ের বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যায় তখন নির্বাচকরা ইমরুলকেই উড়িয়ে নিয়ে যান অস্ট্রেলিয়ায়। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া তো আর ঘরের মাঠ নয় যে, গিয়েই যে কেউ দাঁড়িয়ে যেতে পারেন। ইমরুলও পারেননি। ভিন্ন কন্ডিশন এবং বিশ্বকাপের মতো উঁচু মঞ্চ। টানা তিন খেলায় ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও ভারতের বিপক্ষে তার অবদান ২, ২ ও ৫ রান। ফলে যা হওয়ার তাই হয়। সমলোচনার ঝড় ওঠে, দল থেকে ঝরে পড়েন ইমরুল। এরপর দেশের মাটিতে ঐতিহাসিক তিন সিরিজে পাকিস্তান, ভারত আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে দলে সুযোগ মেলেনি তার। এতে ভেঙে পড়েননি ২৮ পেরুনো এ ওপেনার।
টেস্ট দলে স্থান তার পাকাই অনেকটা। তবুও ওয়ানডেতে না খেলার আক্ষেপ ছিলই। এ আক্ষেপটা মেটাতে ঘরোয়া ক্রিকেটে ছিলেন সচেষ্ট। ফলও পেলেন। ডাক এলো, একাদশেও জায়গা হলো। ভাগ্যযোগে পাওয়া সুযোগ বেশ কাজে লাগালেন। প্রাথমিক বিপর্যয় সামলে দলকে একটা লড়াকু সংগ্রহ দিতে ভূমিকা রাখে তার ব্যাট। ৭৬ কোন বিরাট ইনিংস নয়, তবুও অন্যরা যেখানে তার প্রায় অর্ধেক সেখানে তিনি উজ্জ্বলই। বিশেষ করে তামিমের বিদায়ের পর সবার আস্থার জবাব দিতে ব্যর্থ লিটন দাসও ফিরে যান তখন সবার চোখ ছিল তার দিকে। তাকে রেখেই ফিরে যান বিশ্বকাপের তারকা মাহমুদুল্লাহ আর তারই ভায়রা গত ম্যাচের
সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকুর রহমান। তখন দলের রান সবে ১২৭। ইমরুলের অবশ্য তখন আরেকটু সচেতন হওয়ার প্রয়োজন ছিল। নিজের ও দলের জন্য সেটাই ছিল দাবি। কিন্তু হঠাৎ যেন ধৈর্যহারা হয়ে গেলেন। ছক্কার পর ওভাবে না হাঁকাতে গেলেও পারতেন। ফলে ২০১০-এর ফেব্রুয়ারিতে করা একমাত্র শতরানের পর আরেকটির সম্ভাবনা নস্যাত হয়ে যায়। কেবল তাই নয়, ৭৬-এর বেশি রানের ইনিংস তিনি খেলেন সেই ২০১১ সালের এপ্রিলে (অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঢাকায় ৯৩)। এই ৭৬ তার তৃতীয় সর্বোচ্চ। তার গড় স্ট্রাইক রেট যেখানে ৬৫ সেখানে ৮৯ বলে ৭৬ (স্ট্রাইক রেট ৮৫) মন্দ বলা যাবে না। এর মধ্যে ২৪ আসে চার ছক্কায় আর ২৪ রান আসে ছয় চারে-১০ বলেই ৪৮ রান। এটি তার ৫৭ ওয়ানডেতে ১১তম ফিফটি। তিনি যখন আউট হন তখন দলের স্কোর ১৫১। তবে তার আগে চতুর্থ উইকেটে মুশফিকের সঙ্গে যে ৪৮ রানের জুটি গড়েন সেটিই ছিল ইনিংসের সেরা। এ বছর ওয়ানডেতে বাংলাদেশ সর্বাধিক ১০টি শতরানের জুটি গড়লেও এদিন কোন জুটিই ৫০ হয়নি। ইমরুলের বিদায়ের পর সাব্বির-নাসির যদি ৪২ রানের জুটি গড়তে না পারতেন তবে দলকে সত্যিই বিপদে পড়তে হতো। এর আগে টানা তৃতীয় খেলায় টসে জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠান জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক চিগুম্বুরা। ১৯ রানে তামিমকে বিদায়ের হাসিও ফোটে তার মুখে। এরপর ৫০ না হতেই যখন লিটনও আউট তখন হাওয়ায় উড়ছে সফরকারীরা। এরপর ৭৯ রানের মাথায় ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বিদায় নেন বিশ্বকাপের নায়ক মাহমুদুল্লাহও। ফলে ক্রেমার আর পানিয়াঙ্গারার বলে প্রায় অলআউট হতে বসে বাংলাদেশ। শেষ আট বলে আল আমিন আর মুস্তাফিজ ঠেকা দিলে অলআউট হওয়ার লজ্জা থেকে বাঁচে মাশরাফির দল।