টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে অর্থায়নের প্রয়োজনীয়তা উন্নয়ন সহযোগীদের সামনে তুলে ধরতে ঢাকায় শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের (বিডিএফ) বৈঠক। আজ রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দুদিনব্যাপী বৈঠকের উদ্বোধন করবেন বলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন জানান। গতকাল শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে বিডিএফ সম্মেলন নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি। মেজবাহউদ্দিন বলেন, গত মে মাসে আদ্দিস আবাবা ও সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য যেসব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা অর্জনে যে অর্থের প্রয়োজন হবে তা দাতাদের কাছে তুলে ধরাই এবারের বিডিএফ সম্মেলনের প্রধান উদ্দেশ্য। পাশাপাশি চলমান সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরকিল্পনা বাস্তবায়নে অর্থায়নের বিষয়টিও দাতাদের জানানো হবে বলে জানান তিনি। ইআরডি সচিব বলেন, বাংলাদেশের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, রূপকল্প ২০২১ ও টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সরকার ইতিমধ্যে যে নীতি কৌশল নির্ধারণ করেছে তাও দাতাদের সামনে উপস্থাপন করা হবে। উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে তারা কতটুকু সহযোগিতা করতে পারে তা সম্মেলনে আলোচনা করা হবে। সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সরকারি কর্মকর্তা ও দাতা দেশগুলোর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা অংশ নেবেন। এক প্রশ্নের উত্তরে ইআরডি সচিব বলেন, শুধু বৈদেশিক সহায়তা থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য প্রতিবছর ৮ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন সম্ভব নয়। এজন্য অভ্যন্তরীণ সম্পদ ব্যবহারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে। এবারের সম্মেলনে ৭টি অধিবেশনে সরকার ও দাতাগোষ্ঠীর অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কিভাবে দেশের উন্নয়ন বেগবান করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হবে। এবারের ফোরামের মূল প্রতিপাদ্য- সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ থেকে উচ্চ মধ্য আয়ের দেশে উত্তরণ। এছাড়া কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা ও জলবায়ু পরিবর্তন, অর্থনৈতিক ভিত্তি সুদৃঢ়করণ, অবকাঠামো উন্নয়ন কৌশল নির্ধারণ, কার্যকর উন্নয়ন সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অংশীদারিত্ব শক্তিশালীকরণ, স্বাস্থ্য ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ, সামাজিক সুরক্ষা ও লিঙ্গ সমতায় অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল ধারায় সম্পৃক্তকরণ বিষয়ে আলোচনা হবে। ২০১৫ পরবর্তী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার গৃহীত হওয়ার পরপরই এবারের সম্মেলন হওয়ায় টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রাগুলো জাতীয় পর্যায়ে বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আলোচনার বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে মনে করেন মেজবাহউদ্দিন। ফোরামের আলোচনা ও গৃহীত সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে একটি যৌথ প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় পরামর্শক গ্রুপের (এলসিজি) কো-চেয়ার ও ইউএসএআইডির হেড অব মিশন জ্যানিনা জেরুজালস্কি বলেন, বাংলাদেশ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে।
এমনকি গত কয়েক বছর ধরে ছয় শতাংশের বেশি মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি খুবই উৎসাহব্যঞ্জক। সম্মেলনের সময় উন্নয়ন মেলায় সরকারি-বেসরকারি মিলে ৪১টি স্টল থাকবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।