কোনদিন মসজিদে যায় নি প্যারিস হামলার মূল হোতা আবদেল হামিদ আবাউদ। এমনটি বলছে তার পরিবার। এমনকি সে পড়াশুনা করেছে খ্রিস্টান ক্যাথোলিক একটি বিদ্যালয়ে। হামলা চালানোর আগে গিয়েছিল সিরিয়াও। এ খবর দিয়েছে দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট। ফরাসি কর্তৃপক্ষ বলছে, আবদেল হামিদ আবাউদই প্যারিসের নৃশংস হামলার সম্ভাব্য মূল হোতা। ফরাসি রাজধানীর উপকণ্ঠের সেইন্ট ডেনিশ শহরে বুধবার পুলিশি অভিযানে নিহত হয় সে। কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে, আবাউদই ছিল ওই পুলিশ অভিযানের মূল লক্ষ্য। কারণ, তার আগেই বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, আবাউদই প্যারিসে গণহারে গোলাগুলির আয়োজন করে। শুক্রবার রাতে প্যারিসের ছয়টি স্থানে প্রায় একযোগে শুরু হওয়া ওই গোলাগুলি ও আত্মঘাতি বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয় প্রায় ১২৯ জন মানুষ।
খবরে বলা হয়েছে, আবাউদ প্রথম সিরিয়ায় যায় গত বছর। তবে তার ওপর ধর্মের প্রভাব অতটা কখনই ছিল না। বেলজিয়াম থেকে তখন অনেকেই সিরিয়ায় আইএস-এর হয়ে লড়তে যায়। এ বছরের শুরুর দিকে এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল নিউ ইয়র্ক টাইমসে। তখন বিস্ময় প্রকাশ করে তার বড় বোন বলেছিলেন, সে কখনও মসজিদে পর্যন্ত যায় না! আইএস-এর সঙ্গে যোগ দিতে ইচ্ছুক বা যোগ দেওয়া আরও অনেকের মতো, আবাউদও দৃশ্যত ক্ষমতা, সহিংসতা, দায়হীনতার ক্ষুদায় সিরিয়ায় গিয়েছিল। ধর্ম বিষয়টি হয়তো তার কাছে ছিল গৌণ।
বেলজিয়ামে জন্ম হয়েছিল আবাউদের। রাজধানী ব্রাসেলসের উপকণ্ঠে মোলেনবিক শহরে তার বড় হয়ে উঠা। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে এ শহরেই চলছে বেলজিয়াম কর্তৃপক্ষের তদন্তের মূল ফোকাস। একটি ক্যাথোলিক স্কুলে কিছুদিন পড়েছে সে। এরপর সেখান থেকে ঝরে পড়ে যায় কিংবা বহিষ্কৃত হয়। এরপর চুরি ও মাদকের জীবনে আচ্ছন্ন ছিল সে। তার পরিবারের মতে, ইসলামের চেয়েও ছোটোখাটো অপরাধের দিকেই ঝোঁক ছিল তার বেশি। এ কারণেই ২০১৪ সালের জানুয়ারির দিকে নিজের ১৩ বছর বয়সী ভাই ইউনেসকে নিয়ে সিরিয়ায় গেলে তারা হতবাক হয়ে যান। সিরিয়ায় প্রশিক্ষিত ও আরও বেশি উগ্র হয়ে উঠে সে। পরে ইউরোপে পুনরায় প্রবেশ করে গ্রিসের এথেন্স হয়ে। ইউরোপিয়ান সিকিউরিটি সার্ভিস তাকে তুলে নেয়। এমনকি পুলিশও তাকে আটকায়, তবে পরে ছেড়ে দেয়। এরপরই সে অদৃশ্য হয়ে যায়!
ফেব্রুয়ারিতে আইএস-এর ইংরেজি ভাষার ম্যাগাজিন দাবিক-এ একটি সাক্ষাৎকার দেয় সে। সেখানেই তার সিরিয়া গমনের ইঙ্গিত মেলে। সাক্ষাৎকারে সে দাবি করে, বেলজিয়ামে সে ফিরে গিয়েছিল ‘মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করা ক্রুসেডারদের বিপন্ন করতে’। সে আরও দাবি করে, তার ছবি গণমাধ্যমে চলে গেলেও, এক পুলিশ কর্মকর্তা তাকে চিনতে পারেনি। তার ছবির সঙ্গে গণমাধ্যমে দেখতে পাওয়া ছবি মিলিয়ে দেখলেও তাকে চিনতে পারেনি ওই পুলিশ সদস্য। সিরিয়া যাবার পথে অনেক গোয়েন্দা সংস্থা তাকে ধাওয়া করলেও, নিরাপদেই সেখানে পৌঁছতে পেরেছিল বলে দাবি করে সে। তার বক্তব্য ছিল, এসব প্রমাণ করে ক্রুসেডারদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অতিরঞ্জিত সক্ষমতাকে ভয় পাওয়া উচিৎ নয় মুসলিমদের। আমার নাম ও ছবি খবরের কাগজে প্রকাশিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এরপরও আমি নিজ দেশে প্রবেশ করতে পেরেছি। তাদের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা করেছি। এমনকি প্রয়োজন অনুযায়ী দেশত্যাগও করতে পেরেছি। ধারণা করা হচ্ছে, ফ্রান্সে এর আগে নস্যাৎ করে দেয়া অনেক হামলার পেছনে জড়িত ছিল আবাউদ। এর মধ্যে প্যারিসের উচ্চগতির ট্রেনে এক বন্দুকধারীর ব্যর্থ হামলা প্রচেষ্টাও অন্তর্ভূক্ত। কয়েকজন যাত্রী ওই বন্দুকধারীকে পরাস্ত করলে তার পক্ষে আর হামলা চালানো সম্ভব হয়নি। ধারণা করা হয়েছিল, সিরিয়া থেকেই ওই হামলা নিয়ন্ত্রণ করছিল আবাউদ। কিন্তু প্যারিস হামলার পর ওই ধারণা নিয়েই সন্দেহ দেখা দিয়েছে। কেননা, প্যারিস হামলার সময় ও পরে সে প্যারিস বা আশেপাশেই অবস্থান করছিল।