দেশে মোট ২৭টি টেলিভিশন চ্যানেল রয়েছে। তথ্য ও সংবাদভিত্তিক কয়েকটি চ্যানেল ছাড়া প্রতিটিতেই নানা রকম অনুষ্ঠানের পাশাপাশি চলছে একাধিক ধারাবাহিক নাটক। পুরনো ও নতুন মিলিয়ে অনেক শিল্পীই অভিনয় করছেন এসব নাটকে। প্রথম ২০-২৫ পর্ব শেষে নাটকগুলো দর্শকের আলোচনায় এলেও পরবর্তী সময়ে গল্প থাকে না বলে মুখ ফিরিয়ে নেন দর্শকরা। নির্মাতা, প্রযোজক ও চ্যানেল সবার প্রচেষ্টা দর্শকের কাছে নাটক পৌঁছানো। কিন্তু সেক্ষেত্রে বরাবরই ব্যর্থ হচ্ছেন সবাই। গুটিকয়েক ধারাবাহিক নাটক বাদ দিলে বাকি সব কটির এ বেহাল বলে বলছেন কেউ কেউ। আর এসব কারণে দর্শক মূলত দারস্থ হচ্ছেন ভারতীয় টিভি সিরিয়ালের দিকে। সেসব নাটকের প্রতিই এখন তাদের বেশি আগ্রহ। এর ফলে ধারাবাহিকভাবে বিপর্যয় ঘটছে ধারাবাহিক নাটকের। বাংলাদেশী ধারাবাহিক-গুলোর প্রতি এমন অনাস্থা তৈরি হওয়ার পেছনে অবশ্য কিছু কারণ খুঁজে বের করেছেন নাট্যবোদ্ধারা। দর্শক বিরক্তির অন্যতম কারণ হিসেবে ভালো গল্পের অভাব, বাজেট স্বল্পতা, টিভি চ্যানেলের উপযুক্ত নিয়ম-কানুন ও পরিবেশের অভাবকে চিহ্নিত করেছেন তারা। এ ব্যাপারে বিশিষ্ট অভিনেতা ও নির্মাতা আবুল হায়াত বলেন, একটা নাটক নির্মাণের ক্ষেত্রে দরকার ভালো গল্প। আর সেটাই আমাদের নেই। একজন নির্মাতা একটি গল্প নিয়ে নাটক নির্মাণ শুরু করলে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেন না। এটা গল্পের অভাবেই হয়। দেখা যায়, ১৫-২০ পর্ব শেষ হলে নাটকের গল্প থাকে না। দর্শকও গল্পটা খুঁজে পান না। যে কারণে তাদের মাঝে নাটকের প্রতি এমন বিরক্তি আমরা দেখতে পাই। একজন অভিনেতা নয়, দর্শক হিসেবেও যদি দেখি, গুটি কয়েক ছাড়া আমাদের বেশির ভাগ ধারাবাহিক নাটকগুলো ভালো গল্পের অভাবে দর্শক হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত। নির্মাতাদের মাঝে এখনও একটি দীর্ঘ ধারাবাহিক নাটক দীর্ঘ সময় ধরে টেনে নিয়ে যাওয়ার মতো অভ্যাস গড়ে ওঠেনি বলে মনে করেন বিশিষ্ট অভিনেতা তারিক আনাম খান। তার মতে, আমাদের নির্মাতাদের মধ্যে সেরকম অভ্যাস গড়ে ওঠেনি। একটি ধারাবাহিক নাটককে লম্বা সময় ধরে টেনে নিয়ে যাওয়া একটা বড়
চ্যালেঞ্জের বিষয়। আমি গল্প নিয়ে কিছু বলছি না। আমার কাছে মনে হয় ভারতীয় সিরিয়ালগুলোর মাঝে যে এক ধরনের টান টান উত্তেজনা থাকে সেটা আমাদের নাটকগুলোর মধ্যে দর্শক খুঁজে পান না। যে কারণে তাদের আকর্ষণের জায়গাও সেটিই থাকে। একজন নির্মাতার ধারাবাহিক নাটকের মধ্যে ধারাবাহিকতা রাখাটাই বড় বিষয়। সেটাই যেন পারছেন না অনেকে। এদিকে নির্মাতা দীপু হাজরা বলেন, গল্পই হলো মূল সমস্যা। একটি নাটক নির্মাণের ক্ষেত্রে ভাল গল্প প্রয়োজন। যা আমাদের নাটকগুলো নির্মাণের ক্ষেত্রে এখন পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া দর্শকের কাছে নাটক গ্রহণযোগ্য করে তোলার পেছনে চ্যানেল বড় ভূমিকা পালন করে। আর এ চর্চা থেকে আমাদের চ্যানেলগুলোর কর্তৃপক্ষ সরে আসছেন। এসব কারণেই ধারাবাহিক নাটকের প্রতি দর্শকের অনাগ্রহ তৈরি হচ্ছে। এদিকে অভিনেতা ও নির্মাতা মীর সাব্বির এ প্রসঙ্গে ভিন্ন মতই পোষণ করলেন। তিনি বলেন, ধারাবাহিক নাটক হোক আর খণ্ডই হোক। দুই ক্ষেত্রেই দর্শক চাহিদা রয়েছে। গল্প ভালো হচ্ছে না, শিল্পী সংকট, কিংবা শিল্পী ও নির্মাতাদের মধ্যে সমস্যা। এসব দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমার কথা হলো- চ্যানেল নিয়ে। আমাদের দেশে চ্যানেলগুলো ২৪ ঘণ্টাই খবর, টকশো আর বিজ্ঞাপন প্রচার করে যায়। আর এর ফাঁকে ফাঁকে নাটক প্রচার হচ্ছে। যে কারণে দর্শক নাটক দেখতে পাচ্ছেন না। ভারতের দিকে তাকালে দেখা যাবে তাদের
সুষ্ঠু নিয়ম-নীতি আছে। যে চ্যানেলে সিরিয়াল প্রচার হচ্ছে সেখানে হয়তো একটি বা দুটি অন্য অনুষ্ঠান রাখা হয়েছে। এছাড়া খবর কিংবা টকশোকে প্রাধান্য দিচ্ছে না। এটা তাদের ভালো একটি দিক বলেই আমি মনে করি। আমাদের নিয়ম-নীতির অভাব রয়েছে। পাশাপাশি ভাল পরিবেশও নেই বলে আমার কাছে মনে হয়। কারণ, চ্যানেলের কাছে নাটকের প্রস্তাব নিয়ে গেলে তাদের পছন্দের শিল্পী নিয়ে নাটকে অভিনয় করানোর জন্য চাপ দেয়। এটা কোন ভাল পরিবেশ হতে পারে না। এসব সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারলে আমাদের ধারাবাহিক নাটকগুলো দর্শক গ্রহণযোগ্যতা অচিরেই পাবে বলে আমার বিশ্বাস।