নতুন জীবনে পা দিয়েও তাদের চোখের কোণে পানি চিক চিক করেছে। পুরনোর জন্য মায়া কাটাতে তাদের অনেকদিন লাগবে। তাই শোভারানী মণ্ডল, সাবিত্রী বর্মন বা ননীবালা বর্মনদের মুখে একটাই কথা, জীবনের এতগুলো বছর একসঙ্গে, অত্মীয়স্বজনকে বিদায় জানিয়ে চিরদিনের মতো এক দেশ থেকে অন্য দেশে চলে আসা কী মন মেনে নেয়। এ বড় কষ্ট বাবা। চ্যারাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে ৬৩ জনের প্রথম দলটি যখন সীমান্ত পেরিয়েছেন তখন তাদের স্বাগত জানানো হয়েছে গান-বাজনা ও নাচ-গানের মধ্য দিয়ে। সীমান্তে নতুন বাসিন্দাদের বরণ করে নিতে উপস্থিত ছিলেন কোচবিহারের চেলাশাসক পি উলগানাথন, পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব। উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষও। পরে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে সীমান্ত থেকে তিন কিলোমিটার দূরে মেখলিগঞ্জ মহকুমার ভোটবাড়িতে তৈরি হওয়া টিনের অস্থায়ী আবাসে। তবে নতুন জীবনে এসেই বড় ধাক্কা খেয়েছেন তারা। পরিকাঠামো নিয়ে মোটেই খুশি নন তারা। ৪০০ বর্গফুটের ঘরে গাদাগাদি হয়ে থাকতে হবে এক একটি পরিবারকে। সঙ্গে নিয়ে আসা আসবাবপত্র রাখা নিয়েই তারা চিন্তিত। শৌচাগারও তৈরি হয়েছে ২০ জন পিছু একটি। কাজ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। চারদিকে ধুলো। অস্থায়ী শিবিরের বেহালদশা দেখে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক পরেশ অধিকারী, নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির মুখ্য সমন্বয়ক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত এদিন সেখানে যান। তাদের অভিযোগ, পরিকাঠামো তৈরির ক্ষেত্রে অনেক ঘাটতি রয়েছে। এজন্যই নভেম্বরের প্রথম থেকে ইচ্ছুক ভারতীয়দের আসার কথা থাকলেও তিন তিন বার তা পিছিয়ে দেয়া হয়েছিল। তবে কোচবিহারের জেলা শাসক দাবি করেছেন, অস্থায়ী শিবিরে বিদ্যুৎ, পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুলিশ ফাঁড়ি, দমকল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টার তৈরি করা হয়েছে। শিশুদের খেলার জন্য পার্ক তৈরি করা হয়েছে। প্রত্যেকের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে স্মার্ট কার্ড। এটি দেখিয়েই পাবেন নব সুবিধা এমন কি রেশনও। কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন অবশ্য জানিয়েছেন, সরকারি নিয়ম মেনেই অস্থায়ী ভাবে ওই ক্যাম্প তৈরি হয়েছে। সেখানে থাকার ব্যাপারে যদি কোন সমস্যা হয় তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বড় পরিবারের জন্য একাধিক ঘর বরাদ্দ করা হবে। এদিন বেলা দেড়টা নাগাদ বাংলাদেশের মধ্যে থাকা বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোর ভেতর থেকে হাতীবান্ধা উপজেলার ১৩৫ ও ১৩৬ গোতামারী ছিটমহল দুটি থেকে ১৭ পরিবারের ৬০ জন এবং পাটগ্রাম উপজেলার লতামারী ছিটমহল থেকে এক পরিবারের তিনজন ভারতে এসেছেন। রাজশাহী ডিভিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার সন্দীপ মিত্র তাদের সঙ্গে ছিলেন। প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়, ২৯ দিনের এক শিশুকন্যা নতুন করে যোগ হয় ওই দলে। তার নাম অবশ্য জনগণনায় ছিল না। গত ৩১শে জুলাই মধ্যরাতে ভারত-বাংলাদেশের ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় হয়। বাংলাদেশের মধ্যে থাকা বিলুপ্ত ভারতীয় ছিটমহলগুলির মোট ১০০৩ জন ভারতে আসার আবেদন জানিয়েছেন। তাদেরই ৬৩ জন প্রথম পর্বে ভারতে এসেছে। আগামী চারদিনের মধ্যে ধাপে ধাপে বাকিরাও এসে যাবেন।