শাকিব খান। দেশীয় চলচ্চিত্রের এ সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়ক। দীর্ঘ সময় ধরে বাংলা চলচ্চিত্রে তার আসন নাম্বার ওয়ান। সম্প্রতি এ নায়ক এফডিসিতে শফিক হাসানের ‘ধুমকেতু’ ছবির কাজ করছিলেন। সেখানে বর্তমান সময়ের বাংলা ছবি, প্রেক্ষাগৃহ সংকট এবং চলচ্চিত্রের নানাদিক নিয়ে ‘আলাপন’-এ কথা বলেছেন তিনি। তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন কামরুজ্জামান মিলু
কেমন আছেন ? আজ কি ছবির কাজ করছেন ?
ভালো আছি। এইতো আজ ‘ধুমকেতু’ ছবির কাজ করছি। এ ছবিতে আমার বিপরীতে অভিনয় করছেন পরীমনি। ছবির কাজ কিছু বাকি রয়েছে। আজ ফাইটসহ বেশকিছু দৃশ্যের কাজ হচ্ছে।
এখন তো রাত ৮টা। কতক্ষণ কাজ করবেন ?
রাত ১০টা পর্যন্ত শিফট। পুরো সময়ই কাজ করব। প্রযোজক, পরিচালক ও শিল্পী সমিতি মিলে শুটিং টাইম নিয়ে এখন নতুন নিয়ম করা হয়েছে। সেই নিয়ম মেনেই কাজ করছি। সকলে এই নিয়মে কাজ শুরু করেছে। বিষয়টি আমার কাছে বেশ ভালো মনে হয়েছে। সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কাজের মাঝে ব্রেকও রয়েছে। এতে শিল্পীরা একটানা কাজ করে ক্লান্ত হবে না এবং সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে পারবে।
এখন আপনি কোন কোন ছবির কাজ নিয়ে ব্যস্ত ?
বর্তমানে বেশকিছু নতুন ছবির কাজ করছি। আর কিছু ছবির কাজ প্রায় শেষ। নতুন ছবির মধ্যে রয়েছে বুলবুল বিশ্বাসের ‘রাজনীতি’, মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের ‘সম্রাট’, শামীম আহমেদ রনির ‘মেন্টাল’, হাসিবুর রেজা কল্লোলের ‘সত্তা’ আর উত্তম আকাশের ‘রাজা ৪২০’। এছাড়া সাফিউদ্দিন সাফির ‘পূন্যদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী টু’ ছবিটিও শেষ পর্যায়ে। খুব শিগগিরই এটি মুক্তি পাবে।
যৌথ প্রযোজনার ছবি নিয়ে আপনার মন্তব্য জানতে চাই?
অনেক বছর ধরেই দুই বাংলার আর্টিস্ট, টেকনেশিয়ান যৌথ প্রযোজনার ছবিতে কাজ করছে। আগের মত এখনো যৌথ প্রযোজনায় ছবি তৈরি হচ্ছে, ওপারের মত আমাদের শিল্পীরাও দুই বাংলায় কাজ করছে। আমিও খুব শিগগিরই যৌথ প্রযোজনার ছবিতে কাজ করতে যাচ্ছি।
জেনেছি, এফডিসিকে ঘিরে সরকার অনেক পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ বিষয়টি নিয়ে বলুন?
সরকার ভাল কিছু উদ্যোগ নিচ্ছেন। এই যেমন ২০০ সিনেমা হল এফডিসি থেকে কন্ট্রোল করা হবে। সেন্ট্রাল সার্ভার বসবে এফডিসিতে। এটা একটা ভালো উদ্যোগ। কোনো পাইরেসি হবে না। সরকারের অনেক কাজের মধ্যে একটা কাজ দর্শকদের সুষ্ঠ বিনোদন দেয়া। পুরো বিশ্বের কাছে আমাদের ছবিগুলোকে আমরা উপস্থাপন করার চেষ্টা করছি। আর সরকার এসব উদ্যোগ নিলে অচিরেই বাংলা ছবির একটা পরিবর্তন আমরা খুঁজে পাব।
ডিজিটাল ছবি চালানোর জন্য সিনেমা হলে দক্ষ মেশিন অপারেটর প্রয়োজন। এসব না থাকায় অনেক হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, এই বিষয়ে বলুন?
ব্যবসা ঠিক রাখার জন্য হল মালিকদের হলে মেশিন লাগানো প্রয়োজন। পুরোনো অকেজো মেশিন নিয়ে বসে থেকে তারা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। যদি বলি, আমি একটা মুদি দোকান দিয়ে বসি, আর সেখানে যদি ভালো জিনিসপত্র না থাকে তাহলে তো কেউই কিনবে না। ঠিক তেমনি অনেক সিনেমা হলের মালিকেরই ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য এবং দর্শকদের বিনোদন দেবার জন্য হলে মেশিন বসানো প্রয়োজন। তারা ডিজিটাল মেশিন হলে বসানোর বিষয়টি সম্পর্কে পর্যাপ্ত জানে না। অনেকে এ জন্য ভয়ে সিনেমা হল বন্ধ করে দিচ্ছে। এসব কারণে অনেক সিনেমা হল ইতিমধ্যে বন্ধ হয়েও গেছে। বর্তমান সময়ে সব সিনেমা হলকে যুগপযোগী করে তুলতে হবে। সিনেমা হলের পরিবেশ, ফ্যান, বসার সিটসহ নানা বিষয়ে নজর দিতে হবে। ভালোভাবে এসব নিয়ে ভাবলে সবাই ব্যবসায় ভালো করবে।
প্রযোজক সমিতির সঙ্গে আপনাদের (শিল্পীদের) কিছুদিন আগে মিটিং হয়েছে? কি নিয়ে কথা বলেছেন?
শিল্পী সমিতির কার্যক্রম চলছে। সবচেয়ে বড় বিষয় সবাই একত্রিত হয়ে শিল্পের উন্নয়ন করতে হবে। প্রযোজক সমিতির উপদেষ্টা কমিটি বেশ জোরালোভাবে কাজ করছে। কয়েকদিন আগেই সভাপতি নাসির উদ্দিন দিলু ভাইয়ের সঙ্গে এই নিয়ে মিটিং হয়েছে। তিনিসহ কমিটির সবাই বেশ জোরালো ভূমিকা রাখছে। আগের কমিটিটা অতটা ভালো ছিল না। সামনের মিটিং-এ চলচ্চিত্রের পরিবেশক, হল মালিক, সবার সঙ্গে কথা বলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অচিরেই তারা সব সমস্যা দূর করবে। সবাই মিলে কাজ করব। প্রযোজক, পরিচালক, শিল্পী সমিতির সবাই মিলে একটা জোট হয়ে কাজ করব। চলচ্চিত্রের উন্নয়নের জন্য পাইরেসি রোধেও আমরা কাজ করছি।
অনেক ছবি তো নির্মাণ হচ্ছে, কিন্তু দুই-চারটি ছাড়া প্রযোজকরা সব ছবিতেই ক্ষতির সন্মুখীন হচ্ছেন। এ বিষয়টা কিভাবে দেখছেন?
ডিজিটাল ছবি মানেই কিন্তু খরচ বেশি। অনেকে অল্প বাজেটে ছবি বানাতে গিয়ে দর্শকদের মানসম্পন্ন ছবি দিতে পারেননি। সেসব ছবির প্রযোজক লস করেছে এবং ছবিতে লগ্নি করা টাকা ফেরত পায়নি। তবে ভালো প্রযোজক ও পরিচালকরা ঠিকই ভালো মানের ছবি নির্মাণ করেছেন। আর সেই টাকা তারা লাভসহ ফেরতও পেয়েছেন। এই যেমন আমার দুই ঈদে দুই ছবির ফলাফল তো বেশ ভালো ছিল। আমার মনে হয়, ভালো ও দক্ষ পরিচালক, সেইসঙ্গে ছবির গল্পটা যদি ভালো হয়, দর্শকরা অবশ্যই দেখেন। তবে ইদানিং নতুন কিছু মেধাবী পরিচালকের পরিচালনায় ভালো কিছু ছবি নির্মাণ হচ্ছে। এই যেমন- শামীম আহমেদ রনির ‘মেন্টাল’, বুলবুল বিশ্বাসের ‘রাজনীতি’, মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের ‘স¤্রাট’ এবং হাসিবুর রেজা কল্লোলের ‘সত্তা’ ছবিগুলো দর্শক গ্রহণ করবে বলে আশা করছি। কাজ শুরু করলেই আসলে বোঝা যায়, কোন ছবিটি কিভাবে দর্শক গ্রহণ করবেন।
এবার ভিন্ন প্রসঙ্গ, শাকিব খান কবে কাকে বিয়ে করবেন?
বিয়ে নিয়ে বর্তমানে সত্যি ভাবছি না। তবে বিয়েটা করা জরুরি। আর বিয়ে তো করে ফেলতে চাই। সমস্যা হচ্ছে, বিয়ের জন্য পাত্রী পাচ্ছি না। এবার বিয়ে নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ২০১৬ তে না হলেও ২০১৭ সালে বিয়ের কাজটা শেষ করে ফেলবো।
নিজে কি আর প্রযোজনা করতে চান না ?
আমার নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে আমি চাইলেই ছবি নির্মাণ করতে পারি। তবে আমার সঙ্গে যারা পুরোনো প্রযোজক রয়েছেন, সত্যি বলতে তারা ভালো ছবির প্রযোজক। তাদের কাজ শেষ করে আমি যৌথ প্রযোজনার ছবিতে কাজ করব। আর আমার হাতে সময়ও নেই। এমনকি সামনের ঈদেও আমার প্রযোজনায় নতুন ছবি আসবে না। তাই আপাতত নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে সময় হলে আমার প্রযোজনায় মানসম্মত ছবি দর্শকদের আবারও উপহার দিব।