সন্ধ্যা নামলেই রাজধানীর সংগীতপ্রেমীদের মিলনমেলা বসে আর্মি স্টেডিয়ামে। এমন চিত্র গত ক’দিনের। উপলক্ষ বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সংগীত উৎসবে দেশ-বিদেশের শিল্পীদের সুরের মূর্ছনায় সিক্ত হওয়া। শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় আর্মি স্টেডিয়ামে মিনু হকের পরিচালনায় পল্লবী ড্যান্স সেন্টারের ভরতনাট্যম নৃত্য পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ উৎসবের প্রথমদিনের অনুষ্ঠান। এরপর পণ্ডিত সুরেশ তালওয়ালকারের তত্ত্বাবধানে বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থীরা পারফরম করেন। তাদের সঙ্গে হারমোনিয়ামে লহরা বাজিয়েছেন অজয় যোগলেকর। তৃতীয় পরিবেশনা ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের ধ্রুপদ। পরিবেশনাটি পরিচালনা করেন বিভাগের অধ্যাপক ড. অসিত রায়, পরিচালকের সহযোগী হিসেবে ছিলেন সহকারী অধ্যাপক শলোক হোসেন। ধ্রুপদ পরিবেশনায় ছিলেন অনামিকা সরকার, অর্পিতা চক্রবর্তী, হুমায়ূন কবীর, মনিশ বিশ্বাস, মৌসুমী বিশ্বাস, শুভেন্দু সরকার তনুশ্রী সেন। তাদের সঙ্গে পাখওয়াজে সংগীত করেন সংগীত বিভাগের লেকচারার আলমগীর পারভেজ। এরপর আয়োজনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর কর্নাটকি বাঁশি পরিবেশন করতে মঞ্চে আসেন জয়াপ্রদা রামমূর্তি। প্রথমদিনের আয়োজনে আরও সংগীত পরিবেশন করেন রাহুল শর্মা (সন্তুর), কৌশিকী চক্রবর্তী (খেয়াল), পণ্ডিত কুশল দাস (সেতার) এবং বিদুষী বম্বে জয়শ্রী (কর্নাটকি সংগীত)। এ উৎসবের দ্বিতীয় দিনে জয়ন্তি কুমারেশের বীণায় আকুল হয় আর্মি স্টেডিয়াম। তার মোহজাগানিয়া বীণার সুরে বুঁদ ছিল কয়েক হাজার শ্রোতা। বীণার তালে শীতের শহরে জমে উঠেছে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সংগীত উৎসব। শিল্পীকে পাখওয়াজে সহযোগিতা করেন আর শংকরানারায়ণন এবং ঘটমে এস কৃষ্ণস্বামী। বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সংগীত উৎসবে এবারই প্রথমবারের মতো সরস্বতী বীণা পরিবেশিত হয়। রাত যত গভীর হয় ততই জমে ওঠে উচ্চাঙ্গ সংগীতের এ বিশাল আয়োজনটি। দ্বিতীয় রাতের শেষ পরিবেশনা ছিল পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর। তার জন্য অপেক্ষাও ছিল বিস্তর। সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে ভোর অব্দি এ আয়োজনের একটাই গুণ। ক্লান্তিহীন এক মোহ আপনাকে আবিষ্ট করে রাখবে। সেই আবেশেই ইতি টানতে পণ্ডিতজী রাগ বৈরাগী ও মিশ্র যোগিয়া রাগে বাংলা গান ‘যামিনী হলো যে ভোর’ পরিবেশন করেন। শিল্পীকে তবলায় সহযোগিতা করেন সত্যজিৎ তালওয়ালকার, হারমোনিয়ামে অজয় যোগলেকার এবং কণ্ঠসংগীতে সহযোগিতা করেন অনল চ্যাটার্জী। পরিবেশনা শেষে শিল্পীর হাতে উৎসব স্মারক তুলে দেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি। দ্বিতীয়দিনের আয়োজনে আরও সংগীত পরিবেশন করেন সুস্মিতা দেবনাথ (খেয়াল, বেঙ্গল পরম্পরা), পণ্ডিত উদয় ভাওয়ালকর (ধ্রুপদ), পণ্ডিত সুরেশ তালওয়ালকার (একক তবলা), ড. বালমুরালী কৃষ্ণ (কর্নাটকি সংগীত)। তার সঙ্গে বাঁশিতে ছিলেন পণ্ডিত রণু মজুমদার, শুভায়ূ সেন মজুমদার (এস্রাজ) প্রমুখ। সংগীত উপভোগ করার পাশাপাশি শ্রোতাদের জন্য খাবার ও পানীয়ের ব্যবস্থা রয়েছে উৎসব প্রাঙ্গণে। এছাড়া বিভিন্ন স্টলে
পাওয়া যাচ্ছে আইস মিডিয়ার ম্যাগাজিন, বেঙ্গল পাবলিকেশনসের বই ও বেঙ্গল মিউজিক কোম্পানির সিডি। রয়েছে ডেইলি স্টার বুকস এবং প্রথমা। অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণে আরও রয়েছে অরণ্য, বেঙ্গল ক্যাফে, বেঙ্গল চলচ্চিত্র উন্নয়ন ফোরাম। আছে ব্র্যাক ব্যাংকের এটিএম বুথ। সাংবাদিকদের জন্য রয়েছে ওয়াইফাই জোন।