বিপিএল দ্বিতীয় আসরে ফিক্সিংয়ের গন্ধটা ছড়িয়েছিল চট্টগ্রাম থেকেই। তার রেশ ধরে কেঁচো খুঁড়তে বের হয়ে আসে সাপ। শেষ পর্যন্ত বিপিএল বন্ধ থাকে আড়াই বছর। একই রকম সন্দেহ শুরু হলো চট্টগ্রামে এবারের চিটাগং ভাইকিংস ও বরিশাল বুলসের ম্যাচ নিয়ে। গতকাল ঘরের মাঠে তামিম ইকবালের চিটাগং ভাইকিংস বরিশাল বুলসের কাছে হার দেখে ৩৩ রানে। অথচ বল হাতে দারুণ শুরু করেছিল ভাইকিংসরা। মাত্র ১২ রানেই ৩টি উইকেটে হারিয়েছিল টসে হেরে ব্যাট করতে নামা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের বরিশাল বুলস। এরপর ১৩তম ওভার পর্যন্ত ৫ উইকেট হারিয়ে ৭২ রান সংগ্রহ করে তারা। কিন্তু এরপরই বদলে যেতে শুরু করে ম্যাচের চিত্র। শেষ ৭ ওভারে স্কোর বোর্ডে যোগ হয় আরও ৯৮ রান। ওভারপ্রতি প্রায় ১৪টি রান করে তুলে নেয় বুলসের ব্যাটসম্যানরা। বিশেষ করে ভাইকিংসের বিদেশি শক্তি এল্টন চিগুম্বুরার বোলিংয়ে ঝড় তোলে তারা। মাত্র দুই ওভার বল করে ১টি উইকেট নিলেও দিয়েছেন ৩৮টি রান। বিশেষ করে ১৯তম ওভারে তার পাঁচ বল থেকে কেভিন কুপার আদায় করে নেন ২২টি রান। আর এখান থেকেই শুরু হয় সন্দেহের হওয়া নির্গমন। এছাড়াও দলীয় ৭৬ রানে মাহমুদুল্লাহ ও ১০০ রানের সময় প্রসন্নর ক্যাচ ছেড়ে দেয়া এবং কামরান আকমলের সন্দেহজনক আউট- সব মিলিয়ে এ ম্যাচকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। তবে ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে সন্দেহের কথা উঠতেই বিষয়টি অস্বীকার করেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তিনি বলেন, ‘সন্দেহজনক নয়, আমরা খারাপ খেলেছি। দল হিসেবে আমরা খারাপ করেছি। এজন্য এমন হয়েছে। কিন্তু সন্দেহজনক, এসব নিয়ে আমাদের চিন্তাও করা উচিত নয়। সবাই ভালো, ফেয়ার ক্রিকেট খেলছে।’
তবে জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক চিগুম্বুরার এমন বোলিং আর কামরান আকমলের আউট নিয়ে তেমন কোনো যুক্তিই দিতে পারেননি অধিনায়ক। বরং আকমলকে স্কুল বয় বলে সন্দেহটা আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। ভাইকিংসরা ১৭১ রানের জবাব দিতে নামলে তৃতীয় ওভারেই আউট হন পাকিস্তানের কামরান আকমল। স্বদেশি মোহাম্মদ সামির বলটি কামরান এক রানের জন্য ব্যাটে ছোঁয়ান। পরক্ষণেই পপিংক্রিজে ব্যাটটি নামানোর আগে যেন তিনি শক্তিই হারিয়ে ফেলেন। অলসভাবে, আর ভীষণ সাধারণ গতিতে ব্যাটটি নামাতে থাকেন। যেন জড়তা পেয়েছিল তাকে। মিডঅন থেকে বলটি কুড়িয়ে সরাসরি ছুড়ে মারেন কেভিন কুপার। রানআউট হয়ে ফিরে যান অকমল। এমন আউট নিয়ে আধিনায়ক বলেন, ‘শরীরী ভাষা আমাদের শুরুতে ভালোই ছিল। ১১ ওভার পর্যন্ত তা ছিল। ক্যাচ মিস করা, রানআউট মিস করার পর থেকেই আমার কাছে মনে হলো উই আর কামিং ডাউন। আর ব্যাট করতে নেমে কামরান যেভাবে আউট হলো, আমি শুধু বলতে পারি এটা ছিল স্কুল বয়ের মতো।’ অধিনায়কের এই কথাতেই প্রমাণ করে আকমলের এমন আউট নিয়ে মোটেও খুশি হতে পারেননি তিনি।’
অন্যদিকে চিগুম্বুরার করা ১৯তম ওভারটি শেষ হয় ৯টি বল করে। এর মধ্যে প্রথম বলে এতটাই শর্ট আর ওয়াইড ছিল, কুপার কালবিলম্ব না করে ছয়ের মার হাঁকান। পরের বলেই নো। সেই সঙ্গে চার। এই বলে আসে পাঁচটি রান। পরের দুটি বল ছিল ওয়াইড। অতিরিক্ত আরও দুটি রান। এরপরের বলে কুপার এক রান নিয়ে সাইড পরিবর্তন করলে স্ট্রাইকে আসেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। এবার চিগুম্বুরার বলটি নো, সেই সঙ্গে ফ্রি হিট। কিন্তু মাহমুদুল্লাহ মাত্র এক রান নিয়ে স্থান পরিবর্তন করেন। এরপরের বলেই কুপার আবারও হাঁকান ছয়ের মার। যদিও ওভারে শেষ বলে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে আউট করেন চিগুম্বুরা। তার এমন বোলিং নিয়ে অধিনায়ক তামিম বলেন, ‘চিগুম্বুরা বলছিল কোথায় বল করলে ভালো হবে। আমি যেটা চাইছিলাম, সেটা সে পারছিল না। তবে শুধু বোলারদের আমরা দায় দিতে পারি না। ক্রিকেটে এসব হতেই পারে। আমাদের অন্য ব্যাপারগুলোও ঠিক করা উচিত।’
বিপিএলের পাঁচ ম্যাচে ৪ হারে ধীরে ধীরে নিভে আসছে ভাইকিংসদের আশার আলো। তার ওপর ব্যাটসম্যান, বোলার ও ফিল্ডারদের এমন গা ছেড়ে খেলা সব মিলিয়ে ভীষণ হতাশ তামিম ইকবাল। হারের পরে দলের পারফরম্যান্স নিয়ে বলেন, ‘আমাদের শুরুটা ছিল দারুণ। এর চেয়ে ভালো আশা করা যায় না, বিশেষ করে প্রথম ৬ ওভারে। এরপর সেই পুরনো গল্প। ক্যাচ মিস, রানআউট মিস, এসবই আমাদের অনেক ভুগিয়েছে। ২৫ রানে মাহমুদুল্লাহর সহজ রানআউট মিস করেছি আমরা। প্রসন্ন সহজ ক্যাচ দিয়ে বেঁচে গেছে। আর এল্টনের ওই ওভারে ওরা ম্যাচ আমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে। তবে আমি মাহমুদুল্লাহ ও বরিশালের কাছ থেকে কৃতিত্ব কেড়ে নিতে চাই না।’ দল পারফরম্যান্স না করলে অধিনায়ক যে মাঠে অসহায় তা নিয়ে তামিম বলেন, ‘আমি তো আর হাতে ধরে বুঝিয়ে দিতে পারবো না! এই লেভেলে সবাইকে বুঝতে হবে কী করা উচিত। আমার দলে এ ব্যাপারটিই মূল ঘাটতি। সবার বোঝা উচিত তাদের কী কী করা দরকার। আমি অধিনায়ক হতে পারি। কিন্তু সব সময় বলতে পারি না কোথায় বল করতে হবে বা কী করতে হবে। আমি ব্যাট করার সময় তো কারও দিকে তাকিয়ে থাকি না শোনার জন্য।’সন্দেহ নিয়ে বিপিএলের সদস্য সচিব ও বিসিবি পরিচালক ইসমাঈল হায়দার মল্লিক বলেন, ‘ম্যাচে এক ওভারে ৯ বল হতে পারে। কিন্তু তাই বলে অন্য কিছু হয়েছে তা প্রমাণ ছাড়া বলা যাবে না। আমরা বিপিএলের একটি ম্যাচ নয়, পুরো আসরেই আমাদের আকসুকে সতর্ক রেখেছি। যদি সন্দেহের কিছু হয়ে থাকে আশা করি তা আকসুর চোখ এড়াবে না। এ জন্য আলাদা করে এই ম্যাচ নিয়ে কাজ করতে হবে না।’