ডিসেম্বর মাস। বিজয়ের এ মাসে মুক্তিযুদ্ধের ছবি নির্মাণ ও তা প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শনের উদ্যোগ আগে দেখা গেলেও এখন আর সেটা তেমন নেই বললেই চলে। সারা বছরে ৮০-৯০টা ছবি মুক্তি পেলেও কমে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের ছবি। এ বছরের ডিসেম্বরে এসে মুক্তি পাচ্ছে মাত্র দুটি ছবি। এগুলো হলো মোরশেদুল ইসলামের ‘অনিল বাগচীর একদিন’ ও মানিক মানবিকের ‘শোভনের স্বাধীনতা’। অথচ বিজয়ের ৪৪ বছর পূর্ণ করবে বাংলাদেশ। বিজয় দিবসে মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী নিয়ে নির্মিত ছবি দিন দিন কমে যাচ্ছে। অবশ্য বিজয় দিবসের দিনে বিটিভিসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে পুরোনো মুক্তিযুদ্ধের ছবি প্রদর্শন করা হয় ব্যাপকভাবে। যেমন, গত বছর নাসিরউদ্দিন ইউসুফ পরিচালিত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ছবি ‘গেরিলা’র ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয় চ্যানেল আইতে। এরপর ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেয়া হয়। ছবিটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জনসহ বেশ ভালো ব্যবসা করে। মুক্তিযুদ্ধের ছবি নির্মাণে অনাগ্রহ নিয়ে দেলোয়ার জাহান ঝন্টু মানবজমিনকে বলেন, তরুণ নির্মাতাদের মুক্তিযুদ্ধের ছবি নির্মাণে কোনো আগ্রহ দেখি না। কারণ এখানে তো তারা কোনো পয়সা লাভ করতে পারবে না। এদের সংবাদপত্র, খবর, মুক্তিযুদ্ধের বই পড়াশোনার অভ্যাস বাড়াতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে শুধু কথা বললে হবে না, দর্শকদের মুক্তিযুদ্ধের গল্প নিয়ে ভালো ছবিও উপহার দিতে হবে। তরুণ নির্মাতাদের এ বিষয়ে এগিয়ে আসা উচিত। দেলোয়ার জাহান ঝন্টু এ মাসেই নির্মাণ শুরু করছেন মুক্তিযুদ্ধের গল্প নিয়ে নতুন ছবি ‘৫২ থেকে ৭১’। এদিকে ১১ই ডিসেম্বর মুক্তি পাচ্ছে জনপ্রিয় চলচ্চিত্রকার মোরশেদুল ইসলামের ‘অনিল বাগচীর একদিন’ ছবিটি। হুমায়ূন আহমেদের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস অবলম্বনে ছবিটি তৈরি হয়েছে। এর আগে তিনি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ দর্শকদের উপহার দেন। মুক্তিযুদ্ধের ছবি নির্মাণ প্রসঙ্গ নিয়ে মোরশেদুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি তাদের আবেগটা অনেক বেশি কাজ করে। আমার চলচ্চিত্রেও সেই প্রকাশটা রয়েছে। কিন্তু যারা এ প্রজন্মের নির্মাতা তারা অনেকে মুক্তিযুদ্ধ দেখেননি। তাদেরও মুক্তিযুদ্ধের ছবি নির্মাণ করা উচিত। তারা এগিয়ে এলে মুক্তিযুদ্ধের ছবিগুলোতে ভিন্ন চিন্তা ও ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি খুঁজে পাওয়া যাবে বলে আমি মনে করি। তাদের ছবির মূল্যায়ন হবে ভিন্নমাত্রায়। তরুণ নির্মাতাদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের ছবি নির্মাণে আগ্রহ কম। তাই তাদের সবার আগে এগিয়ে আসা উচিত। চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকার যে অনুদান প্রদান করে থাকে, তাতে করেও একটি মুক্তিযুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র নির্মাণ সম্ভব হয় না। ফলে গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণে নির্মাতাদের আগ্রহটা দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। তাই চলতি বছরের বিজয় দিবস উপলক্ষে ১১ই ডিসেম্বর মুক্তির জন্য প্রস্তুত আছে মাত্র দুটি ছবি। এ দুটির একটি ছবির পরিচালক মানিক মানবিক মুক্তিযুদ্ধের গল্প নিয়ে ছবি নির্মাণ বিষয়ে মানবজমিনকে বলেন, সত্যি বলতে মুক্তিযুদ্ধের গল্প নিয়ে ছবি নির্মাণের ইচ্ছে হয়তো অনেকের রয়েছে। কিন্তু এ ধরনের ছবি নির্মাণে কিছু প্রতিকূলতাও রয়েছে। এ যেমন ৭১ সালের বাড়িগুলো তো আর নেই, এ ছাড়া কস্টিউম ডিজাইন করে কাজগুলো করতে হয়। কারণ ওই সময়ের কস্টিউম, বাড়ি, রাইফেল অনেক কিছু এখন নেই। তাই এটা নির্মাণে অনেক ব্যয়বহুল হয়ে যায়। তাই এ ধরনের ছবি নির্মাণে আগ্রহ থাকলেও নানা কারণে তা আর সম্ভব হয়ে ওঠে না। এই আমি যেমন পুরোনো বই, অ্যালবাম খুঁজে খুঁজে এই ছবির সেট, কস্টিউম করেছি। কারণ এটা নিয়ে আমাদের কোনো আর্কাইভ নেই।