গরু জবাই করে তার মাংস খাওয়ার অভিযোগে মোহাম্মদ আখলাক নামে এক ব্যক্তিকে ভারতের দাদ্রিতে পিটিয়ে হত্যা করা হলেও ওই একই হামলায় কোনমতে বেঁচে গেছেন তার ছেলে দানিশ আখলাক (২২)। তার চোখেমুখে এখনও হতাশা। তিনি এখনও সেদিনের সেই স্মৃতি স্মরণ করে আঁতকে ওঠেন। কোনমতে পায়ের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারেন। পিতাকে হারানো ও নিজের ওপর চালানো নৃশংসতার বিচার চান তিনি। ৮ই ডিসেম্বর এ খবর দিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। এতে বলা হয়, দানিশের দেহের ক্ষত এখন হয়তো সারতে শুরু করেছে। কিন্তু তার কথায় এখনও বেদনার ছাপ আছে। তিনি বলেন, ঘটনার রাতে আমাদের ওপর যে নৃশংসতা চালানো হয়েছে তা ভুলতে অনেকটা সময় লাগবে। দানিশের বয়স ২২ বছর হলেও হাসপাতালের ধকল, শরীরের ওপর নির্যাতনের ক্ষত সব কিছু মিলে তাকে অনেকটাই বেশি বয়সী দেখায়। গত ২৮শে সেপ্টেম্বর দাদ্রিতে তাদের বাসাদা গ্রামে গরু জবাই করে মাংস খাওয়ার অভিযোগে দাঙ্গাকারীরা পিটিয়ে হত্যা করে তার পিতাকে। সে সম্পর্কে দানিশ বলেন, হামলাকারীরা আমাকে ও আমার পিতাকে লাঠি দিয়ে প্রহার শুরু করে। আমি মাথাটা রক্ষার জন্য চেষ্টা করি। কিন্তু তারা বেপরোয়াভাবে হামলা চালাতে থাকে। সহিংস হয়ে ওঠে সেই হামলা। এক সময় যখন আমার দেহ নিস্তেজ হয়ে পড়ে তখন তারা আমাকে রেখে যায়। তখন আমার মনে হচ্ছিল আমার সবগুলো হাড় ভেঙে গেছে। কেউ একজন লাঠি দিয়ে আমার চোখে আঘাত করে। তারপরই মাথায় আঘাত করে। সোমবার সন্ধ্যায় তিনি টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিনিধিকে এসব কথা বলেন। এর পর থেকে দানিশের বিষয়টি মোটামুটি ভুলে যায় সবাই। কারণ, তার পিতার মৃত্যুকে বড় করে দেখা হয়েছিল। কিন্তু দু’মাস পরে দানিশ এখন তার পায়ের ওপর ভর দিয়ে একটু একটু দাঁড়াতে পারেন। এরই মধ্যে তার মাথায় দু’বার জটিল অস্ত্রোপচার হয়েছে। দীর্ঘদিনের জন্য ওষুধ খেতে হচ্ছে। তবে তিনি একদিন বিচার পাবেন এমন আশায় আছেন। কারণ, সরকার তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে। দানিশ বলেন, একদিন আমি আবার ফিরব বাসিদা গ্রামে। সেখানেই আমি জন্মেছি। বড় হয়েছি। সেখান থেকেই স্কুলের যাত্রা শুরু। বাসিদাকে ঘিরেই আমার সব স্মৃতি। এই গ্রামে প্রজন্মের পর প্রজন্ম বড় হয়েছে আমাদের পরিবার। কিন্তু আমার বেদনা ও ভীতি কাটাতে অনেকটা সময় লাগবে। দানিশ এখন তার পরিবারকে নিয়ে দিল্লিতে বিমান বাহিনীর একটি আবাসনে অবস্থান করছেন। এই বাসিটি তার বড়ভাই সারতাজকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। এখন কি আখলাক, দানিশের পরিবার হামলাকারীদের মাফ করে দিয়েছে, তারা নাকি হামলার বিচার চায় না এমন রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে মিডিয়ায়। এর বিরুদ্ধে সোমবার অবস্থান নিয়েছেন তারা। বলেছেন, এটা হতে পারে না। আমরা যেকোন অবস্থায় বিচার চাই। আখলাকের পরিবারকে উত্তর প্রদেশ সরকার চারটি বাড়ি দেয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিল। তার প্রায় দু’মাস পরে এখন তাদেরকে কিছু অর্থ দিতে চাইছে সরকার।