কয়েক দশকের আলোচনার পর অবশেষে পরিবেশ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে পায় ২০০টি দেশ। এতে করে জীবাশ্ম জ্বালানী যুগের অবসানের ইঙ্গিত দিল সরকারসমূহ। জলবায়ু পরিবর্তনের বিপজ্জনক ফলাফল এড়াতে গ্রিনহাউজ গ্যাস উদগীরন কমানোর প্রথম বৈশ্বিক চুক্তিতে সই করলো বিশ্ব। এ খবর দিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান। খবরে বলা হয়েছে, ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের উপকণ্ঠে প্রদর্শনী হলে গত দুই সপ্তাহের বৈঠক তো বটেই, অরায় ২০ বছর ধরে আলোচনার পর প্রায় ২০০ দেশ শনিবার জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় একটি বৈশ্বিক আইনি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। চুক্তিতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা কমানোর উচ্চাবিলাসী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ও লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানোর দায় বর্তানো হয়েছে সরকারসমূহের ওপর। বিভিন্ন দেশের সরকার ও ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, এ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের মধ্যে গ্রিনহাউজ গ্যাস উদগীরন নিট শূণ্যের কোঠায় নামিয়ে আনার চুক্তিটি বৈশ্বিক বাজারের প্রতি শক্তিশালী বার্তা। চুক্তিতে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে দূরে সরে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি নির্ভর অর্থনীতিতে রূপান্তরের প্রক্রিয়া দ্রুততর করার কথা উল্লেখ রয়েছে। খুব যতœসহকারে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যাতে করে আইনি সামর্থ্য থাকে। কিন্তু এতে মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন হবে না। প্রায় নিশ্চিতভাবেই এ চুক্তি প্রত্যাখ্যান করতো কংগ্রেস।
টাইপিং ভুলের কারণে চুক্তির একটি ক্রিয়াপদের ভুল অনুবাদ ও ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়! তবে শেষ মিনিটের বিলম্ব শেষে সম্মেলনের সভাপতি ও ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরেন্ট ফ্যাবিয়াস সবুজ পাতার আকারের বিশেষ হাতুড়ি দিয়ে চুক্তি অনুমোদন করেন। এমন অভিনব কা-ে উচ্ছ্বাস ও করতালিতে মুখর হয়ে উঠে সম্মেলনস্থল। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোয়া ওঁলাদে চুক্তিতে দেশগুলোতে রাজি করানোর পুরো কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় ব্যাপক শ্রম দিয়েছেন। তিনি জানান, ইতিহাস তৈরি করার সুযোগ বিরল। আমার গভীর উপলব্ধি হলো, আমরা একটি উচ্চাবিলাসি ও ভারসাম্যপূর্ণ চুক্তিতে উপনীত হতে পেরেছি। আজ এটা হলো সত্যের মুহূর্ত। প্রায় চার বছর ধরে চুক্তির পেছনে লেগে থাকা জাতিসংঘের জন্যও এ চুক্তি একটি বিজয়। ধনী ও দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যকার গভীর বিভাজন দূরীভূত করতে কাজ করেছে সংস্থাটি। জাতিসংঘের জলবায়ু প্রধান ক্রিস্টিয়ানা ফিগুএরেস বলেন, আমি একসময় বলতাম যে: আমাদের অবশ্যই করতে হবে, আমরা পারবো, আমরা করবো। কিন্তু আজ আমরা বলতে পারি যে, আমরা করেছি।
চুক্তির প্রশংসা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি বলেন, আমাদের পাওয়া একমাত্র গ্রহটিকে বাঁচাতে একমাত্র পন্থার প্রতিনিধিত্ব করে এ চুক্তি। তবে তার মতে, চুক্তিটি পুরোপুরি ‘পারফেক্ট’ নয়। এ চুক্তির কারণে বিভিন্ন সমস্যা সমাধান হয়নি। তবে এ চুক্তির জন্য কৃতিত্ব দেয়া হচ্ছে ওবামাকেও। চুক্তির প্রশংসা এসেছে ব্যবসায়ীদের সংগঠন ও ১৩ লাখ কোটি ডলারের স¤পত্তি ব্যবস্থাপনা করা দ্য ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টর্স গ্রুপ অন ক্লাইমেট চেইঞ্জ’র কাছ থেকে।
চুক্তি অনুযায়ী, ধনী দেশগুলো ২০২০ সাল নাগাদ প্রতি বছর ১০ হাজার কোটি ডলার যোগাবে। এ অর্থ দিয়ে গরিব দেশগুলোকে সাহায্য করা হবে, তাদের অর্থনীতি শক্তিশালী করতে। পুরো চুক্তি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক। তবে কিছু ধারা বাধ্যতামূলক নয়।