বাংলাদেশে কার্যক্রম চালাতে এসে ১৮০০ কোটি রুপির দুর্নীতি হয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান (এনবিপি)-এ। এ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে দু’বছর হলো। কিন্তু কোন সুরাহা হয় নি এখনও। এমন কি এ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় নি। বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, কর্মচারী এতে ফেঁসে গেলেও শীর্ষ কর্মকর্তারা রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। এক তদন্তে ধরা পড়ে যে, এবিপি বাংলাদেশে কর্মকা- চালাতে এসে এই দুর্নীতি করেছে। শীর্ষ স্থানীয় ফরেনসিক অডিট ফার্ম কেপিএমজি সনাক্ত করে যে, এই দুর্নীতিতে ব্যাংকের ৬১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্থায়ী কমিটি ও মিডিয়ার তীব্র চাপের মুখে এনবিপি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এ ব্যাংকের ৫৭ কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ গঠন করে। কিন্তু ওই সময় ব্যাংকের শীর্ষ চারজন নির্বাহীকে এর বাইরে রাখা হয়। তার মধ্যে দু’জন হলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট। এর মধ্যে একজন হলেন আলী রাজা। এ খবর দিয়ে এক্সপ্রেস ট্রিবিউন লিখেছে, দুর্নীতির দু’বছর কেটে গেলেও এনবিপির ১৮০০ কোটি রুপি উদ্ধার হয় নি। উদ্ধার হওয়া অর্থের পরিমাণ শেষ পর্যন্ত দাঁড়াতে পারে এক কোটি ৭০ হাজার রুপি। এ নিয়ে গত মঙ্গলবার জাতীয় পরিষদের অর্থনীতি বিষয়ক স্থায়ী কমিটিতে এনবিপির প্রেসিডেন্ট সৈয়দ ইকবাল আশরাফ ব্রিফ করেছেন। এতে তিনি নিজের অপারগতার বিষয় স্বীকার করে নেন। বলেন, ওই সময় তিনি ব্যাংকের শীর্ষ ব্যবস্থাপনার বিরুদ্দে পদক্ষেপ নিতে ছিলেন অসমর্থ। এ ঘটনাটির আরও তদন্ত করছে ন্যাশনাল একাউন্টেবলিটি ব্যুরো (এনএবি)। তারা দেখতে পেয়েছে যে, এনবিপির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ছয়জন কর্মচারীকে পুনর্বাসন করেছে। অন্যদিকে চারজনকে তিরস্কার করেছে। স্থায়ী কমিটিতে সৈয়দ আশরাফ বলেন, বিভিন্ন জনের কাছ থেকে আগামী বছর নাগাদ উদ্ধার হতে পারে এক কোটি ৭০ হাজার রুপি। রিপোর্টে বলা হয়েছে, শীর্ষ চার নির্বাহীর বিরুদ্ধে আইনগত কোন পদক্ষেপ নিতে অস্বীকৃতি জানায় ওই সময়ের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে তারা তাদের পক্ষে একটি আইনি সংস্থার কাছে সহায়তা চায়। ওদিকে কেপিএমজি দেখতে পেয়েছে, ২০০৭ সালে বাংলাদেশে কর্মকান্ড পরিচালনায় অনিয়ম দেখতে পায় এনবিপি, যদিও এটা দেখা দেয় ২০০৩ সালে। ২০০৩ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে মোট ১৯টি নোট পাঠানো হয় প্রধান কার্যালয়ে। তাতে বলা হয় কি কারণে এ ঘটনা ঘটছে। কিন্তু এ নোট পাঠানো হলেও কোন পদক্ষেপ নেয়া হয় নি। ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ আশরাফ বলেছে, যে ৫৭ জন কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে তার মধ্যে ৪০ জন নিয়োজিত ছিলেন প্রধান কার্যালয়ে। ১২ জন বাংলাদেশের বিভিন্ন শাখায় নিয়োজিত ছিলেন। বাকি ৫ জন বাহরাইনে আঞ্চলিক অফিসে কাজ করতেন। অভিযুক্ত ৬১ জনের মধ্যে ১১ জন ছিলেন হয়তো নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট না হয় সিনিয়র নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট। ম্যানেজমেন্ট বলেছে, কর্মরত চারজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। শিগগিরই মানব সম্পদ বিষয়ক কমিটি তাদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেবে। চারজন আটজন কর্মচারীর বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে তা এখনও সিদ্ধান্ত হয় নি। এ বিষয়টি এখন ডিসিপ্লিনারি কমিটিতে রয়েছে। তারাই সিদ্ধান্ত নেবে।