ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পের কারণে ইরানের ওপর নতুন অবরোধ আরোপের পরিকল্পনা বিলম্বিত করেছে হোয়াইট হাউস। নতুন অবরোধ আরোপ করা হলে, তেহরানের সঙ্গে কষ্টার্জিত পারমাণবিক চুক্তি বিপন্ন হয়ে উঠতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে পরিকল্পনা বিলম্বিত করেছে হোয়াইট হাউস। এ খবর দিয়েছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও বার্তাসংস্থা এএফপি। মার্কিন কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল জানায়, দেশটির অর্থ দপ্তর ইরানের বিরুদ্ধে ওই আর্থিক অবরোধের বিভিন্ন দিক প্রস্তুত করছে। নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনা বিলম্বিত করা হলেও, একেবারেই এ থেকে সরে আসেনি যুক্তরাষ্ট্র। একে এক ধরনের বিকল্প হিসেবে বিবেচনায় রাখা হয়েছে। একপর্যায়ে বুধবার ওয়াশিংটনে এ নিষেধাজ্ঞার কথা ঘোষণা করার কথা ছিল। কংগ্রেসে এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিও পাঠিয়েছিল হোয়াইট হাউস। কিন্তু এখন কেউই বলতে পারছেন না, ঠিক কখন এ নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করা হবে। বুধবার পত্রিকাটি জানিয়েছিল যে, তেহরানের ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ইরান, হংকং ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কয়েকটি কোম্পানি ও ব্যক্তি বিশেষের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা প্রস্তুত করছে যুক্তরাষ্ট্র। শঙ্কা রয়েছে, মার্কিন অর্থ দপ্তরের এমন পদক্ষেপ কয়েক মাস আগে ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তির বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত করতে পারে। চুক্তির স্থায়িত্ব আরও সুদূরপরাহত বিষয়। এ ছাড়া তেহরান ও ওয়াশিংটনের সম্পর্ক আবারও ভীষণ তিক্ত হয়ে উঠতে পারে। ২০১৫ সালের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বিশ্ব শক্তিসমূহের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষর করে তেহরান। ওই চুক্তির অধীনে ইরানের পারমাণবিক প্রকল্প সীমিত করার বিনিময়ে দেশটির বিরুদ্ধে বিপুল অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল ও পর্যায়ক্রমে বিলুপ্ত করার প্রতিশ্রুতি দেয় বিশ্ব শক্তিসমূহ। আর তা হলে কয়েক হাজার কোটি ডলারের বাজেয়াপ্ত অর্থ ফেরত পাবে ইরান। সম্প্রতি চুক্তি মোতাবেক নিজেদের বিপুল ইউরেনিয়াম তৃতীয় একটি দেশে (রাশিয়া) পাঠিয়েছে ইরান। চুক্তি বাস্তবায়নে ইরানের এমন পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রও। কিন্তু এবার ইরানের ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পের দিকে আঙ্গুল তাক করেছে আমেরিকা। নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষাপট ও লক্ষ্যবস্তু এবার ভিন্ন হলেও, নতুন এ অবরোধ পারমাণবিক চুক্তিকে ব্যর্থ করে তুলতে পারে। শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র অবরোধের ঘোষণা দিলে, তা হবে পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষরের পর নেয়া এ ধরনের প্রথম পদক্ষেপ। ওবামা প্রশাসনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ইরানের ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্প সম্পর্কিত কার্যক্রমের জন্য বিভিন্ন বিকল্পের দিকে চোখ রাখছি আমরা। আমরা অনেক দিক বিবেচনা করছি। এ ছাড়া আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কূটনৈতিক তৎপরতাও বৃদ্ধি করছি। এর আগে বৃহসপতিবার ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য নতুন নিষেধাজ্ঞার নিন্দা জানান। তিনি সেগুলোকে ‘শত্রুতাপূর্ণ ও অবৈধ হস্তক্ষেপ’ বর্ণনা করে পালটা পদক্ষেপ নেয়াটা যৌক্তিক বলে ঘোষণা দেন। ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার, ইরান অন্তত দুইটি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে বলে অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের। এর অন্তত একটি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে ১১ই অক্টোবর, যা ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারও হয়েছে। ইরানের ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পের ওপর আগে থেকেই নিষেধাজ্ঞা ছিল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের। তবে ইরান এ নিষেধাজ্ঞা মানতে রাজি নয়।